Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশি হাতে ভারতীয় পাসপোর্ট

নিউ টাউনে ফ্ল্যাট কেনার সময়ে আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় নাগরিক। নিজেকে ত্রিপুরার বাসিন্দা বলে দাবি করে তার সমর্থনে একটি নথিও জমা দিয়েছিলেন ৩৮ বছরের আকাশ মজুমদার।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

কেন্দ্র সম্প্রতি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কেউ যদি ২০১৬ সালের আগে ভারতে এসে এ দেশে থেকে যেতে চান, তা বিবেচনা করে দেখা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এখনও বাংলাদেশের বহু নাগরিক সেখানকার পাসপোর্ট নিয়ে এ দেশে এসে থেকে যাচ্ছেন। বানিয়ে ফেলছেন ভারতীয় পরিচয়পত্র। পুলিশ সূত্রে খবর, এমন অনেকেই সম্প্রতি ধরাও পড়েছেন। আগে ট্রেনে করে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ যাতায়াতের সময়ে অভিবাসন সম্পন্ন হত পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং গেদে সীমান্তে। এখন তা সরিয়ে আনা হয়েছে কলকাতা স্টেশনে। বেড়েছে ধরপাকড়ও।

নিউ টাউনে ফ্ল্যাট কেনার সময়ে আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতীয় নাগরিক। নিজেকে ত্রিপুরার বাসিন্দা বলে দাবি করে তার সমর্থনে একটি নথিও জমা দিয়েছিলেন ৩৮ বছরের আকাশ মজুমদার। কলকাতার এক দালালকে ধরে জাল ভোটার কার্ড বানান তিনি। অন্য লোকের চুরি যাওয়া ভোটার কার্ডে আকাশের ছবি ও নাম বসিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই পরিচয়পত্রটি । ঠিকানা ছিল কসবার।

হলফনামা দেখিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলেন আকাশ। তার পরে বানিয়ে ফেলেন প্যান কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্টও। তখন কে বলবে, তাঁর আসল নাম আকাশ মজুমদার নয়, আবদুল্লা হেল বারি। আদতে তিনি বাংলাদেশি। পাঁচ বছর আগে ত্রিপুরা দিয়ে ভারতে ঢুকে আবদুল্লা চলে আসেন কলকাতায়। প্রথমে কাজ নেন একটি ভ্রমণ সংস্থায়। পরে একটি পানশালায়। বদলে ফেলেন নামও। গোয়েন্দারা মোটামুটি নিশ্চিত, আবদুল্লা কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নন। তবে, নিয়ম ভেঙে এ দেশের নথি বানানোর অপরাধে আবদুল্লা এখন জেলে।

একা আবদুল্লা নন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের হিসেব অনুযায়ী, লুকিয়ে ভারতে এসে পাকাপাকি ভাবে থেকে যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। কখনও উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে, কখনও বা এ রাজ্যের সীমান্ত টপকে প্রচুর বাংলাদেশি অবৈধ ভাবে ঢুকে পড়ছেন। অধিকাংশেরই উদ্দেশ্য, ভাল চাকরি এবং উন্নত জীবনযাপন।

অনেকে আবার এ দেশে এসে এখানকার নাগরিক কোনও তরুণীকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে তৈরি করে নিচ্ছেন নথি। সম্প্রতি বিমানে কলকাতায় এসে ধরা পড়েন ঋতু দাস। তাঁর কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্টের সঙ্গে ভারতীয় ভোটার কার্ডও পাওয়া গিয়েছে। ঋতুকে জেরায় জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসা নিয়ে এ পারে আসেন। বারাসতের বাসিন্দা, ভারতীয় এক যুবতীর সঙ্গে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পরে স্ত্রীর জন্য ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে ঋতু স্ত্রী-সহ দেশে ফিরে যান। এ ভাবে দু’জনে একবার ভারত, একবার বাংলাদেশে থাকতে শুরু করেন। এর মাঝেই ভারতের এক দালালকে ধরে ভারতের জাল ভোটার কার্ড বানিয়ে নেন ঋতু।

সম্প্রতি কলকাতা স্টেশন থেকে ধরা পড়ে ১৬ বছরের এক কিশোর। ঢাকার ট্রেনে ওঠার আগে তার পাসপোর্ট ঘেঁটে দেখা যায়, একই নামে আগে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। অথচ ভারতীয় পাসপোর্ট অনুযায়ী তার বাড়ি কাঁকুড়গাছিতে। ঠিক একই অভিযোগ ২৫ বছরের এক যুবকের বিরুদ্ধেও। সার্ভে পার্কের বাসিন্দা হিসেবে তাঁর পাসপোর্ট রয়েছে। কিন্তু, তাঁর নামে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার প্রমাণও পেয়েছে অভিবাসন দফতর।

অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে এসে অনেকেই ভারতীয় পরিচয়পত্র জুটিয়ে এ দেশের পাসপোর্ট বানিয়ে ফেলছেন। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করছেন সে দেশেও। গোয়েন্দাদের দাবি, এই কাজে সাহায্য করছেন এক শ্রেণির দালাল। তাঁরা টাকার বিনিময়ে জাল নথি বানিয়ে দিচ্ছেন। আবদুল্লার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন অভিষেক পুহান নামে এক দালাল। আবদুল্লাকে জাল ভোটার কার্ড বানিয়ে দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাঁকেও গ্রেফতার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian passport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE