এসএসকেএম হাসপাতালে গণপতি নস্কর। নিজস্ব চিত্র
বিকল হয়ে আসা হার্ট সারাতে সরকারি হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরছিলেন বাসন্তীর এক নাট্যকর্মী। কোনও লাভ হয়নি। সেই অসুস্থ নাট্যকর্মীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অন্য মঞ্চে লড়াই চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সফল হলেন একদল নাট্যকর্মী।
বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ গ্রামের বাসিন্দা এক নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার গণপতি নস্করের হার্টের একটি অংশে ৯০ শতাংশ রক্ত সঞ্চালন বন্ধ। অন্য অংশে ৮০ শতাংশ। দু’মাস আগে দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন ভেলোরের চিকিৎসক। কিন্তু অর্থের অভাবে সেখানে অস্ত্রোপচার করাতে পারেননি গণপতি। নিজের রাজ্যে এসে ফিরে সরকারি হাসপাতালে একটা ব্যবস্থা করে ফেলবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএম হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরেও বেড পাননি।
এপ্রিলে একটি নাট্যোৎসবে যোগ দিতে যান গণপতি। সেখানেই তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন উৎসবের আয়োজক সোমনাথ চক্রবর্তী। দু’সপ্তাহ আগে খোঁজ নিয়ে সোমনাথবাবু জানতে পারেন, তখনও চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরছেন গণপতি। এর পরেই নাটকের পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সিঙ্গুরের এক নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার সৃজিত ঘোষ এবং অতনু মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সোমনাথবাবু।
এক অনামী নাট্যকর্মীকে বাঁচানোর তাগিদে একজোট হন নরেশ জৈন, বিশ্বনাথ, সত্যজিৎ, মৃত্যুঞ্জয় নাথ, শুভঙ্কর দাস শর্মারা। বুধবার সৃজিত বলেন, ‘‘হিসেব করে দেখা যায়, ভেলোরে চিকিৎসার জন্য ৪ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। হাতে সময় ১৫ দিন!’’ এই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে ফেসবুক পেজে গণপতির শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে কেন এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন না ওই নাট্যকর্মী। কেউ যদি কোনও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন সেই আর্জিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘুরতে থাকে। সাহায্য চেয়ে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও পোস্ট করা হয়।
ফেসবুক বার্তা দেখে সোমবার রাতে সৃজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিমল চক্রবর্তী, দেবেশ রায়, অশোক ঘোষ এবং সৌরভ পালোধিরা। নাট্যব্যক্তিত্ব তথা তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষের সাহায্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে সুপারিশের চিঠি আসতেই মুশকিল আসান। দুপুর ২টো নাগাদ এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হন গণপতি।
সোমনাথের কথায়, ‘‘গণপতিদা বিয়ে করেননি। মজা করে বলেন, থিয়েটারই আমার বউ। সকলে এগিয়ে না এলে এটা সম্ভব হত না।’’ আর গণপতির বক্তব্য, ‘‘মঞ্চে হাঁটাচলার সময় দম বন্ধ হয়ে আসত। অভিনয়ে দমই তো আসল।’’
তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশ জোটে না, চিকিৎসার পাওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালের দোরে দোরে ঘোরাই কি তাঁদের ভবিষ্যৎ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy