Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অসহিষ্ণুতা ও অশান্তির প্রতিবাদে কবুতরবাজি

শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ নিউ টাউনে ওয়েস্ট বেঙ্গল পিজিয়ন ক্লাবের উদ্যোগে নিউ টাউনের রবীন্দ্রতীর্থের মাঠে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ওস্তাদেরা পায়রা ওড়ালেন।

কবুতরবাজি: শান্তির বার্তা দিতে উড়ান। শুক্রবার, নিউ টাউনে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কবুতরবাজি: শান্তির বার্তা দিতে উড়ান। শুক্রবার, নিউ টাউনে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

কবুতরবাজিতে নিয়মিতই টক্কর চলে তাঁদের। এমনকী, প্রতিযোগিতায় জিততে পায়রাকে ডোপ করাতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তবে বিশ্ব পায়রা দিবসে ওঁরা সকলেই কলকাতায় এসেছেন শান্তির প্রতীক হিসাবে পায়রা ওড়াতে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ নিউ টাউনে ওয়েস্ট বেঙ্গল পিজিয়ন ক্লাবের উদ্যোগে নিউ টাউনের রবীন্দ্রতীর্থের মাঠে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ওস্তাদেরা পায়রা ওড়ালেন। কবুতরবাজির সেই ওস্তাদেরা জানালেন, দেশজুড়ে যে ভাবে অসহিষ্ণুতা ও অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছে, তারই প্রতিবাদ জানাতে এই আয়োজন।

কাশ্মীর থেকে আসা ওস্তাদ লোন আক্রম বলেন, ‘‘কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতিতেও আমি নিয়মিত পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছি। আমার কাছে প্রায় ১৫০টি পায়রা রয়েছে।’’ জলন্ধর থেকে আসা সরবন্ত সিংহের আছে ৩৫০টি পায়রা। তিনি বলেন, ‘‘বহু বার পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় বিদেশে গিয়েছি। টুর্নামেন্টও জিতেছি। এ বার একটি আন্তর্জাতিক পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতা আমাদের শহরে করব।’’ কেরলের তিরুঅনন্তপুরম থেকে আসা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ জেমস লুইস বলেন, ‘‘বয়সের জন্য আমি এখন আর পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারি না। তবে কোথাও পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হলে দেখতে হাজির হয়ে যাই।’’

ওস্তাদেরা জানালেন এই নেশাটা তাঁরা বংশ পরম্পরায় পেয়েছেন। আর পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতার উত্তেজনা? কলকাতার ওস্তাদ ভোলানাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতার উত্তেজনা টি টোয়েন্টি ম্যাচের থেকে কোনও অংশে কম নয়।’’ ওস্তাদেরা জানালেন, প্রত্যেক প্রতিযোগী তাঁদের নিজের বাড়ির ছাদ থেকে পায়রা ওড়ান। ভোরবেলা প্রতিযোগীর বাড়িতে চলে যান বিচারক। বিচারকের সামনেই পায়রা ওড়াতে হয়। যে পায়রা সবচেয়ে বেশি সময় আকাশে উড়ে ফের ফিরে আসে, সেই পায়রাই জয়ী হয়। তবে পায়রাকে পুরোটা সময় আকাশে দৃশ্যমান থাকতে হবে। ঢাকা থেকে আসা জুবেইদ রসিদ বলেন, ‘‘কোনও পায়রা যদি গাছে বা অন্য কোথাও বসে যায়, তা হলে সেই পায়রা বাতিল প্রতিযোগিতা থেকে।’’ এক-একটি দক্ষ পায়রা প্রতিযোগিতায় এক টানা দশ থেকে বারো ঘণ্টা উড়তে পারে।

প্রতিযোগিতায় পুরস্কার মূল্যও তো কিছু কম নয়। ১০-২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন এমনকী মোটরসাইকেল, চাষ করার ট্র্যাক্টর পাওয়া যায়। তবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে তাঁরা পায়রাকে কী ভাবে প্রস্তুত করেন, সেই রহস্য ফাঁস করতে নারাজ ওস্তাদেরা। তাঁরা শুধু জানান, শক্তি বাড়াতে দেওয়া হয় কাজু, কিসমিস, পেস্তা ও নানা রকমের বাদাম। আবার দিল্লির বিপিন জৈন বলেন, ‘‘আমার পায়রার প্রিয় খাবার হল হালুয়া। শীতকালে পায়রাকে সুস্থ রাখতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে চ্যবনপ্রাশও খাওয়াই। আর প্রতিযোগিতার আগে রীতিমতো ডায়েট চার্ট মেনেই খাবার দেওয়া হয় পায়রাকে।’’

শুধু পুরস্কারের নেশাতেই পায়রা ওড়ানো নয়, ওস্তাদেরা জানালেন, তাঁরা পায়রা ওড়ান মন ভাল রাখতে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পিজিয়ন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট উল্লাস মণ্ডলের কথায়, ‘‘নীল আকাশে অনেক উঁচুতে যখন আমাদের আদরের পোষা পায়রা জোজো, অস্ত্র, অগ্নিরা উড়তে থাকে, তখন মনে হয় আমরাই যেন আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World Pigeon Day Intolerance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE