Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

‘পুলিশই পারে উর্দির সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে’

আইন মেনে কাজ করা ওই হোমগার্ডের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েও বলছি, ঔপনিবেশিক সময় থেকেই বাংলায় পুলিশের অতীত খুব সুখকর ছিল না।

এই ‘বেআইনি কাজ’-এর নজির সম্ভবত এই প্রথম নয়।

এই ‘বেআইনি কাজ’-এর নজির সম্ভবত এই প্রথম নয়।

পঙ্কজ দত্ত  (রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি)
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৫
Share: Save:

শিষ্টাচার না মানা কতিপয় যুবককে শিষ্টাচার শেখানোর মতো ‘গর্হিত’ কাজের জন্য তাঁকে যে চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে, এটা কর্মরত হোমগার্ড বুঝতে পারেননি। যার পরিণতি হল, ওই যুবকদের অনৈতিক ও বেআইনি ভাবে চড়াও হওয়া, হামলা করা ও নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করা। কিন্তু এই ‘বেআইনি কাজ’-এর নজির সম্ভবত এই প্রথম নয়। মাঝেমধ্যেই পুলিশ-নিগ্রহের কথা সংবাদে পড়ি।

এই লাগাতার নিগ্রহ কেন? পুলিশের উর্দি কি হারাচ্ছে সমীহ? বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু তার থেকেও বড় হয়ে উঠছে আইন ভাঙার বিপজ্জনক প্রবণতা। দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার ও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো, এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এতে পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই, এমনও বলা যায় না। ‘শাসকের’ ভূমিকাও রয়েছে।

আইন মেনে কাজ করা ওই হোমগার্ডের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েও বলছি, ঔপনিবেশিক সময় থেকেই বাংলায় পুলিশের অতীত খুব সুখকর ছিল না। ব্রিটিশরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পুলিশকে ব্যবহার করত। ফলে পরাধীন দেশবাসীর মধ্যে পুলিশের প্রতি চাপা ক্রোধ থাকত। স্বাধীনতার পরেও শাসক সব সময়েই পুলিশকে নিজের কাজে লাগাতে চেয়েছে। তার ফলে এক ধরনের জো হুজুর ও তল্পিবাহক স্তাবক বাহিনীর আমদানি হয়েছে, যারা ধরে আনতে বললে বেঁধে আনতেই সিদ্ধহস্ত। সেই ভূমিকা যত জোরালো হয়েছে, ততই পুলিশের উর্দির প্রতি সমীহ কমেছে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েও পার পাওয়া যায়, তার ইঙ্গিতও সমাজবিরোধীরা হয়তো পেয়েছে।

সে দিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, যে দিন পুলিশ ভারতীয় আইনি ব্যবস্থা পুরোপুরি মেনে রাজনীতির রং ও কোনও বাছবিচার না করে প্রকৃত অর্থে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। কল্পনায় দেখা রামরাজ্য সে দিন সার্থক হবে, যে দিন স্তাবকতা বর্জিত সৎ পুলিশ প্রশাসক পুলিশি ব্যবস্থার সর্বস্তরে আসীন হয়ে এই ন্যায় বোধের প্রকৃত রূপায়ণ করতে পারবে।

শুধু ভয় লাগে এই ভেবে যে, চারপাশে ‘নৈরাজ্য’ নামের দৈত্যটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। অবিলম্বে আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় না হলে শিয়রে সর্বনাশ অপেক্ষা করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE