Advertisement
E-Paper

গানে-আবৃত্তিতে অন্য সকাল বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের

প্রদীপের মা মমতা দেব নিজেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শিক্ষিকা। তারাতলার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পলসির ছাত্র প্রদীপকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দেন তিনি। মমতার পর্যবেক্ষণ, ‘‘আর পাঁচ জন সাধারণের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ভাল ভাবে বাঁচতে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২১
 আনন্দ: অনুষ্ঠানের শেষে হুইলচেয়ারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা। রবিবার, আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ: অনুষ্ঠানের শেষে হুইলচেয়ারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা। রবিবার, আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে। নিজস্ব চিত্র

বছরের বেশির ভাগ দিন ওঁরা সকলের আড়ালে কোনও মতে দিন কাটান। রবিবারের সকালটা অবশ্য অন্য ভাবে কাটালেন বেহালা কলেজের বাংলা স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া দেবিকা দাস।। জন্ম থেকেই গার্ডেনরিচের বাসিন্দা দেবিকার ভরসা হুইলচেয়ার। আসন ভর্তি মুগ্ধ শ্রোতাদের সামনে এ দিন তিনি শোনালেন জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’। নিউ আলিপুরের প্রদীপ দেবের গলায় ‘আলো আমার আলো ওগো আলো ভুবন ভরা’ শুনে বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না শ্রোতাদের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রশ্ন’ কবিতার আবৃত্তি শেষে হাততালিতে ভেসে যাচ্ছিলেন বেহালার ঈশা চৌধুরী। দেবিকা, প্রদীপ, ঈশার মতোই তিনশো জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অংশগ্রহণে এ ভাবেই জমে উঠেছিল আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের প্রেক্ষাগৃহ। গান, আবৃত্তির পাশাপাশি এ দিন তথ্যচিত্রও দেখলেন ওঁরা। অন্য এই অনুষ্ঠানটির সৌজন্যে কলকাতা পুলিশ।

প্রদীপের মা মমতা দেব নিজেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের শিক্ষিকা। তারাতলার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পলসির ছাত্র প্রদীপকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দেন তিনি। মমতার পর্যবেক্ষণ, ‘‘আর পাঁচ জন সাধারণের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ভাল ভাবে বাঁচতে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

কলকাতা পুলিশের মতো এমন আরও উদ্যোগ ওঁদের উৎসাহিত করতে পারবে।’’ কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেয়ে রমি মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এ দিন হাজির ছিলেন মা মঞ্জিমা মুখোপাধ্যায়। ওঁদের সমাজের মূল স্রোতে টানতে একটি স্কুল গড়ে তুলেছেন মঞ্জিমা। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-মায়েরা না থাকলে ওদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটাই করে দিতে চাই। আমরা ‘পেরেন্টস গ্রুপ’ তৈরি করে হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। ওদের জন্য ‘রেসিডেন্সিয়াল হোম’ তৈরি করতে চাই।’’ যা শুনে এ দিন লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পাশে দাঁড়াতে কলকাতা পুলিশ আগামিদিনে আরও বেশি করে উদ্যোগী হবে।’’

অনুষ্ঠান শেষে উচ্ছ্বসিত দেবিকা ধন্যবাদ জানালেন কলকাতা পুলিশকে। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যদের মতো আমরা সুযোগ পাই না। ফলে আমরা হীনম্মন্যতায় ভুগি।’’ আর প্রদীপের কথায়, ‘‘এই প্রথম মঞ্চে গাইবার সুযোগ পেলাম। খুব ভাল লাগছে।’’ ঈশার কথায়, ‘‘এই ধরনের অনুষ্ঠান যত বেশি হবে আমাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’’

ওঁদের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোটা যে জরুরি, তা মানছেন কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিশের ওসি মানস ঝা। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে আমাদের এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুষ্ঠান যাতে নিয়মিত করা যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।’’ শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা তিনশো জন আমন্ত্রিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের প্রত্যেকের হাতে কলকাতা পুলিশের তরফে একে একে উপহার তুলে দেওয়া হয়। শ্রোতাদের আসনে তখন একাধিক পুলিশের আধিকারিক।

Alipore Bodyguard Lines Kolkata Police Program
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy