Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

শিশুবেলায় পটুয়ার আঁকা ছবি ‘ভীষণ নাড়া দিয়েছিল তাঁর শিশুমনে’। দেবেন্দ্রনাথের কন্যা শরৎকুমারী ও ঘরজামাই যদুনাথের কন্যা সুপ্রভার সঙ্গে বিয়ে হয় সুকুমার হালদারের, তাঁদেরই সন্তান শিল্পী অসিতকুমার হালদার (১৮৯০-১৯৬৪)।

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০৩

অবনীন্দ্র-শিষ্যের উজ্জ্বল জীবনালেখ্য

শিশুবেলায় পটুয়ার আঁকা ছবি ‘ভীষণ নাড়া দিয়েছিল তাঁর শিশুমনে’। দেবেন্দ্রনাথের কন্যা শরৎকুমারী ও ঘরজামাই যদুনাথের কন্যা সুপ্রভার সঙ্গে বিয়ে হয় সুকুমার হালদারের, তাঁদেরই সন্তান শিল্পী অসিতকুমার হালদার (১৮৯০-১৯৬৪)। বিশ শতকের সূচনায় অবনীন্দ্রনাথের যে ক’জন ছাত্র গুরুর সঙ্গে ভারতশিল্পকে এক সম্পূর্ণ নতুন পথে প্রবাহিত করেন, অসিতকুমার তাঁদের অগ্রগণ্য। সরকারি শিল্পবিদ্যালয়ে পাঠ, শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়ে শিল্পশিক্ষণ, জোড়াসাঁকোয় ‘বিচিত্রা’ স্টুডিয়োর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সরকারি আর্ট স্কুলে শিক্ষকতা, কলাভবনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম অধ্যক্ষ, জয়পুর রাজকীয় শিল্পবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং শেষে লখনউয়ের সরকারি আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস স্কুলে দু’দশকের অধ্যক্ষতা তাঁর জীবনের নিছক কিছু তথ্য নয়, অসিতকুমারের শিল্পভুবনকে বুঝতে হলে এর প্রতিটি পর্যায়কে খুঁটিয়ে দেখা দরকার। নিবেদিতার উদ্যোগে অজন্তার গুহাচিত্র প্রতিলিপি করা, আর ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের জন্য রামগড় পাহাড়ে যোগীমারা গুহাচিত্র এবং বাঘগুহার চিত্র প্রতিলিপি করার কাজেও যুক্ত ছিলেন অসিতকুমার।

অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথের স্নেহ পেয়েছেন শিল্পী, পেয়েছেন অগ্রজ সতীর্থ নন্দলাল বসুর সৌহার্দ্য। আবার মনের কথা স্পষ্ট করে বলার জন্য মনান্তরও হয়েছে। শিল্পবেত্তা জেমস কাজিন্স তাঁকে ‘রঙের কবি’ আখ্যা দেন। তাঁর লেখার হাতটিও ছিল চমৎকার। তাঁর ছবি দেশেবিদেশে সমাদৃত হলেও স্বভূমিতে তিনি অনেকটাই বিস্মৃত। সেই বিস্মৃতি থেকে তাঁকে উদ্ধার করে এনেছেন গৌতম হালদার, তাঁর রঙের কবি অসিতকুমার হালদার (সিগনেট) বইয়ে। পারিবারিক ইতিহাস, পরিপার্শ্ব থেকে শিল্পীজীবনের প্রতিটি বাঁককে যে ভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে, বিভিন্ন নথিপত্র থেকে তুলে আনা হয়েছে বহু অজানা তথ্য, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এমন জীবনী শিল্পীকে নতুন করে তুলে ধরার পাশাপাশি নব্যবঙ্গীয় শিল্পধারার ইতিহাসকে বুঝতেও সাহায্য করবে। সঙ্গে বইয়ের প্রচ্ছদ ও লখনউ আর্ট স্কুলে স্টুডিয়োয় অঙ্কনরত অসিতকুমার।

শিশুসাহিত্য

শিশুদের পড়বার মতো বইয়ের অভাব মেটাতে রবীন্দ্রনাথ অবনীন্দ্রনাথকে নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন ‘বাল্যগ্রন্থাবলী’ সিরিজের। অবনীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘‘আমি লিখলুম ‘শকুন্তলা’, ‘ক্ষীরের পুতুল’ আর রবিকাকা একখানি ছোট কবিতার বই ‘নদী’...’’। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে শকুন্তলা প্রকাশিত হয়, প্রথম সংস্করণে ছবিও এঁকেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। একটি বাদে অন্য ছবিগুলি পাওয়া যায় না। তৃতীয় বই ক্ষীরের পুতুল-ও (১৮৯৬) ছিল তাঁর চিত্রিত, এর ছটি ছবিই অবশ্য পাওয়া গিয়েছে। এই সব দুর্লভ ছবি আর সেই সব কালজয়ী লেখা, যা শুধু ছোটদের নয়, অনিবার্য ভাবে সব বয়সের, তাই নিয়ে দে’জ থেকে প্রকাশিত হল অবনীন্দ্রনাথের শিশু ও কিশোর সাহিত্য (রচনাসমগ্র ২ক)। সূচনায় ‘নিজেদের কথা’য় ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করেছেন অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

শতবর্ষে

‘আমি সামান্য মানুষ, জীবনে অনেক জিনিষ এড়িয়ে চলেছি। তাই মরবার পরেও আমার দেহটা যেন তেমনি নীরবে, একটু ভদ্রতার সঙ্গে, সামান্য বেশে, বেশ একটু নির্লিপ্তির সঙ্গে গিয়ে পুড়ে যেতে পারে।’ ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭-এ লেখা শম্ভু মিত্রের সেই বিখ্যাত শেষ ইচ্ছাপত্রের অবিকল প্রতিলিপি দিয়ে তৈরি হয়েছে ‘নাট্য আকাদেমি পত্রিকা ১৭’-র চতুর্থ প্রচ্ছদ। নাট্যমেলার প্রতিবেদন আর বিচ্ছিন্ন কিছু প্রবন্ধের ধারা থেকে বেরিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের দিকে এখন ঝুঁকেছে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি-র পত্রিকাটি। বাদল সরকারকে নিয়ে একটি সংখ্যার পর এ বার ‘শম্ভু মিত্র জন্মশতবর্ষপূর্তি সংখ্যা’ (সম্পাদক সত্য ভাদুড়ি)। প্রায় সাড়ে পাঁচশো পাতার সংখ্যায় আছে কুমার রায়, রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, দেবতোষ ঘোষ, সৌমিত্র বসু, রুশতী সেন প্রমুখের প্রবন্ধ, শম্ভু মিত্রের দুটি সাক্ষাৎকার এবং তাঁর জীবন ও কাজের একটি সবিস্তার পঞ্জি। ২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রসদনে ষোড়শ নাট্যমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হল সংখ্যাটি। নাটক আর প্রদর্শনীতে জমজমাট চলতি নাট্যমেলায় সংগ্রহযোগ্য প্রাপ্তি বইকী!

মঞ্চগান

কখনও বঙ্গভঙ্গ-রদে, কখনও জেল-ভরো আবার কখনও বা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শরিক মঞ্চের দোসর হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র-গিরিশচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল-নজরুলের পাশাপাশি নামী-অনামী বহু গীতিকারের মঞ্চগান। স্বাধীনতার সত্তর বছরে সে সব গানের সঞ্চয়নে দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্মাণে অ্যাকাডেমি থিয়েটারের নিবেদন ‘স্বাধীনতার মঞ্চ-গান’, ৬ ডিসেম্বর, সন্ধে সাড়ে ৬টায়, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। গানে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপ্তেন্দু বসুর সঙ্গে দেবজিত্ স্বয়ং। ভাষ্যে দেবাশিস বসু। ৭ ও ৮ ডিসেম্বর, বিকেল সাড়ে ৫টায়, নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেখানো হবে বিজয় বসু পরিচালিত ও অরুন্ধতী দেবী অভিনীত ‘ভগিনী নিবেদিতা’ এবং সুধীর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ও ছবি বিশ্বাস অভিনীত ‘দাদাঠাকুর’।

সম্মান

ছবি আঁকেননি বা গান লেখেননি ঠিকই, কিন্তু কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অক্লেশে বিচরণ করেছেন, তিনি অনেকান্ত রবীন্দ্রনাথের অন্যতম ভাবশিষ্য।— গত সপ্তাহে বুদ্ধদেব বসুর জন্মদিনে এক ঘরোয়া আসরে বললেন শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধদেব বাংলা প্রবন্ধের পাশাপাশি ইংরেজিতে ‘অ্যান একর অব গ্রিন গ্রাস’ লিখেছিলেন। তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কারটিই বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় প্রবন্ধচর্চার জন্য সে দিন শিবাজীর হাতে তুলে দিলেন শঙ্খ ঘোষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধদেব যে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, শিবাজী সেখানকারই উজ্জ্বল ছাত্র ও অধ্যাপক। জনসংস্কৃতি বিদ্যাতেও নানা অবদান, কিন্তু বুদ্ধদেব ও তুলনামূলক সাহিত্যের পরম্পরাতেই তো তাঁর অভিঘাত। তাঁর নতুন বই সাত পাঁচ নয় ছয়-এর আখ্যানে তাই অক্লেশে ঢুকে পড়েছে দাবার ছক থেকে ভগবদ্গীতা অনেক কিছুই। সম্মান হাতে পেয়েও আক্ষেপ করলেন, তুলনামূলক সাহিত্যের আজও সঠিক প্রসার ঘটেনি।

নতুন মূর্তি

আধুনিক ভারতীয় নৃত্যশিল্পের পথিকৃৎ উদয়শঙ্কর। তিনি ভারতের ধ্রুপদী নৃত্যকে বিভিন্ন আঙ্গিকে ভেঙেচুরে নতুন নতুন সৃষ্টি করে গিয়েছেন। কোনও বিশেষ আঙ্গিকের বন্ধনে তাঁর নৃত্যকলা সীমায়িত ছিল না। ৭-৯ ডিসেম্বর ৩৮তম আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব উপলক্ষে উদ্বোধনের দিন সন্ধে ৬টায় এ বার তাঁরই মূর্তি উন্মোচনে উদ্যোগী যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমি (পদাবলি)। উন্মোচন করবেন মমতাশঙ্কর। সংবর্ধিত হবেন নৃত্য গবেষক পিয়াল ভট্টাচার্য। পরে নৃত্য ও মূকাভিনয় অনুষ্ঠান। ৮ ও ৯ ডিসেম্বর সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবৈতনিক শরীরভাষ্য মূকাভিনয় শিবির। ৬টায় মূকাভিনয়।

স্মরণীয়

‘পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়’ গানটি গেয়ে তিনি খ্যাতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সত্য চৌধুরী (১৯১৮-১৯৯৩) শুধু গানই করেননি, অভিনয় করেছেন, করেছেন আকাশবাণীতে ঘোষকের কাজও। কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাইচাঁদ বড়াল, শচীন দেববর্মন প্রমুখের শিষ্য সত্য প্রথম গান করেন ‘জয়দেব’ ছবিতে। প্রায় ১০০টি চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন। ‘রাঙামাটি’ ছবিতে তাঁর অভিনয় স্মরণীয়। জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে এবং তাঁর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নন্দন ৩-এ ৫ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৫টায় এক অনুষ্ঠানে তাঁর গাওয়া গানের রেকর্ড বাজিয়ে অনুষ্ঠান সাজাবেন মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত থাকবেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। উদ্যোগে ‘পৃথিবী আমারে চায়’।

সোলো আর্টস

শহরের ‘সোলো আর্টস উৎসব’ এ বছর পাঁচে পা দিল। ‘ফ্রিডম 4 এভার’ আয়োজিত অভিনেতা ও বাচিকশিল্পী সুজয়প্রসাদের উদ্যোগে ‘মোনোলগস ২০১৬’ আইসিসিআর-এ ১০-১১ ডিসেম্বর যথাক্রমে দুপুর ২টো ও পৌনে ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনে ‘দ্য সোলো রুম অ্যাওয়ার্ডস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের তরুণ প্রজন্মের উজ্জ্বল শিল্পীদের সম্মাননা দেওয়া হবে শ্রীকান্ত আচার্য, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রীজাত-র হাত দিয়ে। পাবেন অর্ণা মুখোপাধ্যায়, তরুণ দাস, গৌরব চক্রবর্তী প্রমুখ। নৃত্য ও মার্গসংগীতের আঙ্গিকে ঠুংরি-গজল পরিবেশন করবেন যথাক্রমে সুদর্শন চক্রবর্তী ও মধুবন্তী বাগচী প্রমুখ। উৎসবের শেষ দিনে ভিন্ন আঙ্গিকে গান শোনাবেন রূপঙ্কর বাগচী। সর্বোপরি দেবশঙ্কর হালদার দর্শকদের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে পাঠ করবেন রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের আখ্যান ‘দুখে ক্যাওড়া’।

যৌথ সৃষ্টি

এক জন বলেন, ‘ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখা রাখাল বালক দেখলে মন যেন ওই মাটি আকাশের সঙ্গে মিলে মিশে যায়। ওই গন্ধের আস্বাদন হৃদয়কে জীবন্ত করে তোলে। ওই রকম রাখাল বালককে আমি আমার কৃষ্ণ করে তার মনকে ছুঁতে চাই। এই ছুঁতে চাওয়া মন আমার ছবির পূর্ণতা পায়।’ অন্য দিকে, অপরজন জানান, ‘দৈনন্দিন কাজের মধ্যে প্রতিমুহূর্তের খোঁজ এক নতুন দেখা বা সৃষ্টির জন্ম দেয়। যার একের সঙ্গে পরের কোনও মিল নেই। এই এককের মধ্যে বিচিত্রতা খোঁজাই ছবির আনন্দ।’ এক জন কৃষ্ণ নিয়ে পাগল তো অন্য জন প্রকৃতি নিয়ে। এ ভাবে তাঁদের ঘর-সংসার। সিদ্ধার্থ ও শিবানী সেনগুপ্ত বিগত পঁচিশ বছর এ ভাবেই সৃজনের আনন্দে। সেই আনন্দের স্পর্শ এ বারও পাওয়া যাবে— অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ৬-১২ ডিসেম্বর (৩-৮টা) সিদ্ধার্থ-শিবানীর আঁকা ছবির প্রদর্শনী। সঙ্গে সিদ্ধার্থের আঁকা ছবি।

সাম্প্রতিক

তিনি বেশ কিছু দিন চৌধুরী চরণ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। সাংবাদিক হিসেবে বেশ কয়েকটি ইংরেজি দৈনিকে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এনসিসি-র ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ সার্টিফিকেটধারী, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ২০০২ ব্যাচের আইএএস, বর্তমানে বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের শখ ঘোড়ায় চড়া, সাঁতার কাটা, রান্না করা আর অবশ্যই লেখালিখি এবং পড়াশোনা। এ বার তাঁর ষষ্ঠ বই সিলেক্টেড কনটেম্পোরারি এসেজ-এর (ম্যাকগ্র হিল এডুকেশন) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল অক্সফোর্ড বুক স্টোরে। উদ্বোধন করলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। বইটিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও সিভিল সার্ভিস বা অন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে, একশো চৌত্রিশটি প্রবন্ধে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে চর্চা রয়েছে।

পরম্পরা

হারিয়ে যাওয়ার হা-হুতাশ আজ নানা ক্ষেত্রে। গ্রাম সমাজের রীতিনীতি, শিল্পকলা কত ভাবেই ক্ষয়িষ্ণু। এর মধ্যেই আলোর রেখা ফুটে ওঠে কোনও কোনও বিষয়ে। জয়নগর-মজিলপুরের পোড়ামাটির রঙিন পুতুল পরিচিত হয়ে উঠেছিল সাধারণের কাছে তো বটেই— গবেষক আর সন্ধানী লেখকের তথ্যেও। বিভিন্ন সংগ্রহশালার পুরনো নিদর্শনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এই পুতুল শিল্পরসিকের অন্যতম আকর্ষণ। বনবিবি, গৌরাঙ্গ, রাধাকৃষ্ণ, গাজিসাহেব, পঞ্চানন, ওলাবিবি-সহ সুন্দরবন এলাকার লৌকিক দেবদেবীর শতাধিক ধরন। মন্মথনাথ এবং পরে ভাইপো পাঁচুগোপালের সময়কালে পারিবারিক এই ধারা ছিল উৎকর্ষে ভরপুর। গ্রামশিল্পের এই টালমাটালের মধ্যেও পাঁচুগোপালের ছেলে বছর পঁয়ত্রিশের শম্ভুনাথ দাস অন্য পেশায় না ঝুঁকে মজেছেন মৃৎশিল্পেই। শহুরে কর্মশালায় দাদুর পুতুল তৈরির ছাঁচ দেখিয়ে পরম্পরার গর্ব অনুভব করেন। এ বার লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের ২২তম বর্ষপূর্তি উৎসবে কলকাতার ছিট-কালিকাপুরের লোকগ্রামে ৬-৯ ডিসেম্বর আসছেন তাঁর তৈরি শিল্পসম্ভার নিয়ে। উৎসবের আঙিনায় এ ছাড়াও থাকছে উত্তর দিনাজপুরের মৃৎশিল্প, পশ্চিম মেদিনীপুরের দেওয়ালি পুতুল ও পটচিত্র, উত্তর চব্বিশ পরগনার ঝুলনের পুতুল, বর্ধমানের তালপাতার সেপাই, মুর্শিদাবাদের পাটের পুতুল। সন্ধ্যায় দেখা যাবে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের গ্রামীণ নাচ-গান-নাটকের রূপ। সঙ্গের ছবিতে আহ্লাদি পুতুল সহ শম্ভুনাথ।

প্রয়াণ

বড়দার হাত ধরে প্রথম কলকাতায় আসা। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে পাকাপাকি ভাবে। থাকতেন আহিরিটোলায়। পড়তেন রিপন কলেজে, বিজ্ঞান নিয়ে। কিন্তু কেন পড়তেন জানতেন না, এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সম্প্রতি প্রয়াত জগদিন্দ্র ভৌমিক। লেখালেখির শুরু ‘দৈনিক কৃষক’ পত্রিকায় অংশকালীন কাজের সুবাদে। তমলুকে মাতঙ্গিনী হাজরার সঙ্গে দেখা করে সাক্ষাৎকার নিয়ে লিখেছিলেন ‘ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও মাতঙ্গিনী হাজরা’। কিন্তু রবীন্দ্ররচনার এই বিশিষ্ট প্রকাশক বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগের সূত্রেই সবচেয়ে খ্যাতিমান। সেই সম্পর্কের শুরু ১৯৪৭-এ। তার পরে রাইটার্সে চাকরি। সরকারি কাজ ছেড়ে স্থায়ী ভাবে ফিরে আসেন গ্রন্থনবিভাগেই, পুলিনবিহারী সেনের ডাকে। চার দশকেরও বেশি কর্মজীবনের পরে অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেন ১৯৮৯-এ। ইতিমধ্যে রবীন্দ্রগ্রন্থ সম্পাদনায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে উঠেছিলেন জগদিন্দ্র ভৌমিক। পুলিনবিহারীর সঙ্গে সম্পাদনা করেন বিশ্বভারতী পত্রিকা, শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবীন্দ্রবীক্ষা। টলস্টয়ের গল্প অনুবাদ করেছিলেন, তার কিছু প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি নাটক ‘কিং অ্যান্ড রেবেল’ অনুবাদ করেছিলেন ‘রাজা ও রাজদ্রোহী’ নামে। শহর থেকে দূরে কল্যাণীতে নিজের বাড়িতে অবসর-জীবন কাটাতেন বইপত্রের মধ্যে। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি ছিয়াশি বছর বয়সে। আর সেখানেই গতকাল হয়ে গেল তাঁর স্মরণসভা।

kolkata's Korcha Korcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy