নিউ টাউনে দুর্গা অঙ্গনের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
সোমবার নিউ টাউনে দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে এ রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানের কথা উল্লেখ করেন তিনি। জানান, তাঁর সরকার এ রাজ্যে ধর্মীয় স্থান তৈরি এবং পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য কী কী কাজ করেছে। মমতা এ-ও দাবি করেন, বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গা অঙ্গন তৈরি হবে নিউ টাউনে। দুর্গা অঙ্গনের মধ্যে কী কী থাকবে, কত ভক্ত এক সঙ্গে এই দুর্গা অঙ্গনে আসতে পারবেন— তার আভাসও দেন মমতা। সোমবারের মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট করে দেন, এ রাজ্যে ধর্ম দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভাজন করা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে সব ধর্ম পালন করা হয়।’’ দুর্গা অঙ্গন শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, দিঘার জগন্নাথ ধামের মতোই সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন অনেকে, জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘মন্দিরে সঙ্গে সঙ্গে এখানে নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। অনেক দোকান তৈরি হবে। কর্মশ্রম আরও বাড়বে।’’ টেনে এনেছেন দিঘার জগন্নাথ ধামের প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘দুর্গা অঙ্গনের নকশা তৈরি হয়েছে। জগন্নাথ ধাম যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা এই দুর্গা অঙ্গন করবেন।’’ তিনি জানান, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন ট্রাস্ট দেখাশোনা করবে দুর্গা অঙ্গনের।
রাজ্যের বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্পের কথা বলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন এই সব প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলাম। এর জন্য দু’লক্ষ কোটি টাকার বেশি রেখে এসেছি।’’ মমতা এ-ও জানান, দুর্গা মন্দিরের ট্রাস্টে এখনও অবধি যা টাকা জমা পড়েছে, তাতে মায়ের মূর্তি তৈরির টাকা উঠে গিয়েছে। আমি বাজে কথা বলি না। বাদবাকি হিডকো থেকেও খরচ করতে হবে।’’ কালীঘাটের মন্দির পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে তৈরি করতে ১৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান মমতা। এ ছাড়াও, কপিলমুনির আশ্রম, গঙ্গাসাগর মেলায় সরকারের খরচের কথাও জানান তিনি। তবে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমি ১২ বছর ধরে চেষ্টা করেছিলাম, যদি কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গাসাগরে একটা সেতু তৈরি করে দেয়। কিন্তু তা হয়নি। আমরাই এখন তৈরি করছি। আগামী ৫ (জানুয়ারি) শিলান্যাস করলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে রাজ্য়ের মানুষের ‘হয়রানি’ নিয়ে সরব মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষকে বড্ড হয়রান হতে হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে ৫০ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, মারা গিয়েছেন। এটা সহ্য হচ্ছে না। একটা মানুষকে বাংলায় থেকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি এ দেশের নাগরিক কি না? নাগরিকত্বের সঙ্গে ভোটাধিকারের কী সম্পর্ক? বাংলা ভাষায় কথা বললেই বলছে থাকা যাবে না, বাংলা ভাষায় কথা বললেই বলছে বাংলাদেশি।’’ মমতার দাবি, ‘‘২০২৪ সালে যারা এল, তাদের নাগরিক বলতে পারছেন! আর যাঁরা দেশেরে জন্য রক্ত দিলেন, ফাঁসির মঞ্চে গেলেন, জেলে গেলেন, তাঁরা নাগরিক নন?’’ মমতার হুঙ্কার, ‘‘মনে রাখবেন, সহ্য করছি, ধৈর্য ধরছি। কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা থাকে!’’
মমতা বলেন, ‘‘বাংলা তার সৃষ্টি, কৃষ্টি দিয়ে বাংলা সারা পৃথিবীকে পথ দেখাবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘সব ধর্মকে ভালবাসতে হবে। আমি সব ধর্মকে ভালবাসি। গুরুদ্বারে যখন যাই, তখন মাথায় চাদর দিই। রোজায় গেলে বলো কেন? আমি আজ এখানে এসেছি তাই গায়ে চাদর জড়িয়ে নিয়েছি।’’
নিউ টাউনে দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মঞ্চ থেকে মমতা মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাসের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি জানালেন, জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাস হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জমি দেখে রেখেছি। তারিখও মনে মনে ঠিক করে রেখেছি।’’
মমতা জানান, দু’লক্ষ বর্গফুট এলাকায় তৈরি হবে এই দুর্গা অঙ্গন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা এত বড় করে করা হয়েছে যে মন্দিরে উঠোনেই এক লক্ষ লোক বসে থাকতে পারবেন। এখানে সবুজ দিয়ে ঘেরা খোলা চত্বর রাখা হয়েছে। এই চত্বরের চারপাশে ২০ ফুট চওড়া ঘোড়ার পথ করা হচ্ছে। ১, ০০৮টি স্তম্ভ হচ্ছে। মূল গর্ভগৃহের উচ্চতা হবে ৫৪ মিটার। মূল মণ্ডপ ছাড়াও সিংহদুয়ার, ও অন্য মণ্ডপও থাকবে। প্রাকৃতিক আলো এবং বাতাসের উপর নির্ভর করা হবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘এটা বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গা অঙ্গন হবে। এখানে প্রতি দিন এক লক্ষ ভক্ত আসতে পারবেন। আমরা তার ব্যবস্থা করছি।’’
মমতা জানান, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। এ বার কাজ শুরুর পালা।
সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী রয়েছেন অনুষ্ঠানে। তাঁর কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘ওঁর শরীর এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। গান গাইতে চাইছিল। কিন্তু আমি দিইনি।’’
বাংলার মাটিকে সোমবারের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করে বক্তৃতা শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন মমতা।
মমতার ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ এই দুর্গা অঙ্গন। সোমবার তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার কথা ও সুরে দুর্গা অঙ্গনের অনুষ্ঠানে গান গাইছেন তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য ইন্দ্রনীল সেন।
ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানে গান গাইছেন সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী।
নিউ টাউনে দুর্গা অঙ্গনের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সেখানে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিউটাউন বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে অ্যাকশন এরিয়া–ওয়ানে প্রায় ১৭ একরেরও বেশি জমিতে তৈরি হবে দুর্গা অঙ্গন। দুর্গা অঙ্গন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ২৬২ কোটি টাকা। প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী, মূল ফটকটি তৈরি হবে একটি মন্দিরের আদলে। সেখান থেকে দু’দিকে সবুজ ঘাসের চাদরের মাঝ দিয়ে মার্বেলের রাস্তা ধরে পৌঁছোনো যাবে মূল মন্দিরের প্রবেশপথে।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রশাসনিক মহলের মতে, দুর্গা অঙ্গন শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্থায়ী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এখানে শিল্পকলা, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য পৃথক পরিকাঠামোও থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy