Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিষ্ফলা আর্জি, পথ সারালেন এলাকাবাসীই

নিউ টাউন থানার অন্তর্গত হাতিয়াড়া গোত মসজিদের কাছে পাম্পঘরের পাইপ পাতার জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল গত জুলাই মাসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পাইপ পাতার কাজ হয়ে গেলেও গর্ত বোজানোর কোনও আগ্রহ দেখায়নি ঠিকাদার সংস্থা।

হাতে হাতে: এ ভাবেই রাস্তা সারাতে উদ্যোগী হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হাতিয়াড়ায়। নিজস্ব চিত্র

হাতে হাতে: এ ভাবেই রাস্তা সারাতে উদ্যোগী হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হাতিয়াড়ায়। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পূর্ত দফতর। ওয়ার্ড বিধাননগর পুরনিগমের। দীর্ঘদিন ধরে আর্জি জানানোর পরেও সাড়া না মেলায় দুর্ঘটনাপ্রবণ ওই রাস্তা নিজেরাই সারিয়ে নিলেন হাতিয়াড়ার বাসিন্দারা।

নিউ টাউন থানার অন্তর্গত হাতিয়াড়া গোত মসজিদের কাছে পাম্পঘরের পাইপ পাতার জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল গত জুলাই মাসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পাইপ পাতার কাজ হয়ে গেলেও গর্ত বোজানোর কোনও আগ্রহ দেখায়নি ঠিকাদার সংস্থা। বর্ষায় রাস্তার মাঝ বরাবর লম্বা গর্ত আরও গভীর হয়। ক্রমে রাস্তাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থল থেকে হাতিয়াড়া বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব খুব বেশি নয়। বাগুইআটি ও নিউ টাউনের মধ্যে সংযোগকারী রাস্তা হিসেবে ৩০সি হাতিয়াড়া রুট খুবই ব্যস্ত। বেশ কয়েকটি স্কুলও রয়েছে সেখানে। গর্তের অবস্থান বুঝতে না পেরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একটি ভ্যানরিকশার চালক আচমকা ব্রেক কষলে পিছন থেকে ধাক্কা মারে বাস। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেও হাতে-পায়ে চোট পান ওই ভ্যানচালক। এর আগে ওই গর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে এক বাইক-আরোহীর মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুরজ সর্দার বলেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বরে গর্ত মেরামতির জন্য কাউন্সিলরকে বলেছিলাম।’’ তাতে কাজ হয়নি। সে দিন সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার পরে আর কারও জন্য অপেক্ষা না করে বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেরাই রাস্তার মেরামতি করবেন।

‘হাতিয়াড়া সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে এই বাসিন্দাদের। এর আগে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তাঁরা। এখন ওই রাস্তার নর্দমার কাজ শেষ করে এনেছে পূর্ত দফতর। অতীতের সাফল্যকে পুঁজি করেই বাসিন্দারা ঠিক করেন, সিমেন্টের ঢালাই করে দুর্ঘটনা আটকানো হবে। সেই কাজে ১৬ বস্তা বালি সরবরাহ করেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। পাথর দেন আর এক ব্যবসায়ী। সিমেন্টের খরচ জোগাড় করেন কাজি মহম্মদ সফিক, রিয়াজুল ইসলাম, ইমতিয়াজ আলি, ফিরোজ খানেরা। সফিক পেশায় শিক্ষক। রিয়াজুল বাবার মুদিখানার দোকান দেখাশোনা করেন। ইমতিয়াজ কেব্‌ল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। ফিরোজ ডেকরেটর সংস্থার কর্মী।

এই কর্মকাণ্ডে এলাকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র যেমন আছে, তেমনই আছে সফিকুল হোসেনের মতো যুবকেরা। রাস্তা নির্মাণের অ-আ-ক-খ জানা ছিল না তাঁদের। রিয়াজুল জানান, রাস্তা ঢালাই করা হবে ঠিক হওয়ার পরে পেশায় রাজমিস্ত্রি এমন কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। কী ভাবে ঢালাই করতে হয়, তার প্রাথমিক পাঠ নেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য।

সফিকুল বলেন, ‘‘বাকিটা দেখে শেখা।’’ বুধবার রাস্তা ঢালাইয়ের সময়ে কাউকে বলতে শোনা গেল, ‘‘মশলা এত পাতলা করিস না।’’ পাশ থেকে আর এক জনের মন্তব্য, ‘‘ঢালাইয়ের মশলা পাতলা হলেই ভাল!’’

পরিষেবা দেওয়ার কথা যাঁর, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সেই সিপিএম কাউন্সিলর মহসিন আহমেদ বলেন, ‘‘রাবিশ দিয়ে অনেক বার মেরামতির চেষ্টা করেছি। কিন্তু পিচ না হলে থাকবে না। আমার ওয়ার্ডে এখন কোনও কাজ হচ্ছে না। নইলে ওটা করে দিতাম। কাউন্সিলর করছেন না বলে বাসিন্দারা করেছেন, এমনটা কিন্তু নয়। বাসিন্দাদের একটা সংস্থা কাজটা করেছে। উন্নয়নের কাজে তো বাধা দিতে পারি না!’’

রাস্তার বেহাল দশা প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, দু’দিকের নর্দমা-সহ ওই রাস্তা চওড়া করার জন্য বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আপাতত সমীক্ষার কাজ চলছে। বাসিন্দাদের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের নামই তো পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট। রাস্তা জনগণের। বাসিন্দাদের যে কোনও ভাল উদ্যোগকে স্বাগত। নির্মাণে কোনও ত্রুটি থাকলেও স্বাগত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Repair New Town
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE