Advertisement
E-Paper

হেরে গেলেও মানুষের পাশে থাকব: মদন

ভাটপাড়া যে আর প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর ‘কব্জায়’ থাকছে না, তা স্পষ্ট হতে শুরু করে বৃহস্পতিবার সকালে ভোট-বাক্স খোলার কিছু ক্ষণ পর থেকেই। তবে এ দিন আগাগোড়া ঠান্ডা মেজাজে ছিলেন মদন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:১০
প্রতি-পক্ষ: অর্জুন সিংহের সঙ্গে করমর্দন মদন মিত্রের। বৃহস্পতিবার, ভাটপাড়ায়।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

প্রতি-পক্ষ: অর্জুন সিংহের সঙ্গে করমর্দন মদন মিত্রের। বৃহস্পতিবার, ভাটপাড়ায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

তিন বছর আগে পরাজিত হয়েও এত দিন তিনি কামারহাটির মাটি আগলে পড়েছিলেন। এ বার ভাটপাড়া উপনির্বাচনে হারের পরেও, সেখানকার মানুষের পাশে থাকারই বার্তা দিলেন মদন মিত্র।

ভাটপাড়া যে আর প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর ‘কব্জায়’ থাকছে না, তা স্পষ্ট হতে শুরু করে বৃহস্পতিবার সকালে ভোট-বাক্স খোলার কিছু ক্ষণ পর থেকেই। তবে এ দিন আগাগোড়া ঠান্ডা মেজাজে ছিলেন মদন। এমনকি, চূড়ান্ত ফল জেনে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে শুভেচ্ছাও জানালেন প্রতিপক্ষকে।

সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ ব্যারাকপুরের রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের গণনা কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিলেন মদন। হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা কুর্তা, পায়ে সবুজ হাওয়াই চটি। ডান হাতে দক্ষিণেশ্বরের প্রসাদী ওড়না জড়ানো। গণনা কেন্দ্রের বাইরে একটি বেঞ্চে বসে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। মাঝেমধ্যে দলীয় কর্মীদের থেকে নিজের ও ব্যারাকপুর লোকসভার ফলাফল জানার মধ্যেই বললেন, ‘‘নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে ভোটের দিন, এমনকি এখনও সন্ত্রাস চালাচ্ছে বিজেপি। এত দিনে ভাটপাড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার বোমা পড়েছে।’’ ভোটের দিনই অভিযোগ উঠেছিল, বিভিন্ন রকমের অশান্তি পাকিয়ে মদনকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়েছেন অর্জুন সিংহ।

সেই সূত্র ধরেই এ দিনও মদনের অভিযোগ, ‘‘ওঁরা ছক কষে সন্ত্রাস চালিয়ে বিকেল ৩টে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মুক্তাঞ্চল বানিয়ে নিয়েছিল। আমাদের তো কোনও ছক ছিল না। এত সন্ত্রাসের পরেও ভাটপাড়ার মানুষ আমার সঙ্গে ছিলেন। তাই আগামী দিনে আমিও তাঁদের সঙ্গে থাকব।’’ তিনি জানালেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য ‘ভাটপাড়া ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ তৈরি করবেন। কারণ পোড় খাওয়া ওই নেতা মনে করেন, ভোটে যিনি হারেন তাঁর যেমন নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, তেমনই বিজয়ী প্রার্থীরও নৈতিক দায়িত্ব থাকে এলাকার মানুষের পাশে সব সময়ে থাকার, উন্নয়ন করার। তাঁদের থেকেই মদন জানলেন, শুধু চতুর্থ রাউন্ডে মাত্র ৩৪৩ ভোটে তিনি এগিয়ে ছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন।

এর পরে কিছু ক্ষণ চুপ থেকে মদন বললেন, ‘‘ইভিএম নিয়ে সন্দেহ থেকেই গেল। যদিও সেটা প্রমাণ করতে পারব না। প্রচারে মানুষের যে ঢল ছিল, তা ভোট-বাক্সে গেল না। ফলে সংশয় থেকেই গেল।’’ এর মধ্যেই এক কর্মী এসে তাঁকে জানালেন, লোকসভা নির্বাচনে ভাটপাড়ার যে সমস্ত ওয়ার্ডে সিপিএম তিন অঙ্কের ভোট পেয়েছে, সেখানে বিধানসভায় দেখা যাচ্ছে, ওই সব ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট দশের নীচে। ভাটপাড়ার রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের ভোটের বেশ খানিকটা অংশ বিজেপিতে গিয়েছে। এ ছাড়াও সন্ত্রাস থেকে কারা তাঁদের বাঁচাতে পারে, তা নিয়েও আতান্তরে ছিলেন মধ্যবিত্ত বাঙালি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মদনের ‘বহিরাগত’ তকমা।

দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গেলেন মদন। অন্য দিকে তখন গণনা কেন্দ্রের সামনের মাঠে চেয়ার পেতে বসে রয়েছেন অর্জুন। ছেলের জয় নিয়ে কী ভাবছেন? প্রশ্ন করতেই তাঁর উত্তর, ‘‘ও তো জিতেই গিয়েছে।’’ আড়াইটে নাগাদ ফের সকালের জায়গায় ফিরে এলেন মদন। কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে তখন পবন বলছেন, ‘‘এই জয় মানুষের। তাই দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে থাকা আর ভাটপাড়ার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা আমার মূল কর্তব্য।’’

আর মদন বললেন, ‘‘পবন আমার ছেলের মতো। আমার রাজনৈতিক লড়াইটা ছিল মূলত অর্জুন আর তাঁর পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ওঁকে বলব, রাজনৈতিক শত্রুতার জন্য আর যেন কোনও মানুষের জীবন না যায়।’’ তত ক্ষণে ফল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ২১,৭৩৪ ভোটে পরাজিত হয়েছেন জানার পরে দলীয় এজেন্টদের নিয়ে বাইরে বেরোনোর পথ ধরলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। পথেই দেখা এক সময়ের সতীর্থের সঙ্গে। নিজে থেকেই অর্জুনের কাছে এগিয়ে গেলেন। পুরনো ‘দাদা’র সঙ্গে হাত মেলালেন অর্জুনও।

প্রতিপক্ষের উদ্দেশে মদন বললেন, ‘‘ছেলে জিতেছে। ওঁকে শুভেচ্ছা। তোর সঙ্গে তো আমার কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। এলাকা যেন শান্ত থাকে, সে দিকে নজর রাখিস।’’ প্রত্যুত্তরে অর্জুন বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তো আমার দাদা। তোমার সঙ্গে আমারও কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই।’’

Madan Mitra মদন মিত্র By-Election West Bengal By-Election Bhatpara
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy