—ফাইল চিত্র।
শহর জুড়ে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রচার চলছে। কিন্তু পথেঘাটে বেপরোয়া যানবাহনের সামনে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ঠিক কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেই প্রশ্নকে জোরালো করছে কলকাতা পুলিশের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য। পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে মহানগরে অন্তত দশটি দুর্ঘটনার খবর মিলেছে। যার মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে ন’বছরের একটি মেয়েও। অনেকেই বলছেন, নিত্যদিন যদি পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়, তা হলে এত ঘটা করে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের আয়োজন করে লাভটা কী?
পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ পঞ্চসায়র থানা এলাকার নয়াবাদে রঞ্জিত রায়চৌধুরী নামে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধকে একটি গাড়ি ধাক্কা মারে। তার জেরে রাস্তার পাশে একটি পুকুরে পড়ে যান রঞ্জিতবাবু। শরীরে একাধিক চোট নিয়ে তিনি ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। অভিযুক্ত চালক গাড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছেন। লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে আলিপুরের জাজেস কোর্ট রোডে দু’টি বাস রেষারেষি করছিল। সে সময়ে একটি বাসে উঠতে গিয়ে বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে এক যুবক পড়ে যান। তাঁর পায়ের উপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যায়। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দু’টি বাসের চালকই পলাতক। পুলিশ সূত্রের খবর, একই ভাবে বৃহস্পতিবার সকালে বাস থেকে পড়ে গিয়েছিলেন মৌপ্রিয়া কুণ্ডু নামে এক তরুণী। প্রাণে বাঁচলেও আহত অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি তিনি। অভিযোগ, ওই বাসটিও বেপরোয়া ভাবে ছুটছিল।
পুলিশ জানায়, এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ পরমা উড়ালপুলের উপরে মহম্মদ মোস্তাক নামে এক মোটরবাইক চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। আহত অবস্থায় তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ হেস্টিংসের ফার্লং রো়ডে উত্তর বন্দর থানার এক এএসআই মোটরবাইকে চেপে যাওয়ার সময়ে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন। তিনি পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি। লালবাজার জানিয়েছে, বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ তারাতলার টাঁকশালের সামনে অরিন্দম অধিকারী নামে এক যুবককে একটি বেসরকারি গাড়ি ধাক্কা মারে। তিনি বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার একই ভাবে বেপরোয়া ট্যাক্সির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে এক শিশুকন্যার। পুলিশ জানায়, দুপুর আড়াইটে নাগাদ হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকা দিয়ে চার বছরের ছেলে অর্পিত এবং ন’বছরের আত্মীয়া নিবেদিতাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন পামারবাজারের অজয় কুমার। সে সময়ে একটি ট্যাক্সি তাঁদের ধাক্কা মারে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে নিবেদিতাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বাকি দু’জনও জখম। বৃহস্পতিবারই এন্টালিতে মিনিবাসের নীচে পড়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে ইএম বাইপাসের উপরে একটি বেপরোয়া কন্টেনার সিগন্যাল পোস্টে ধাক্কা মারে।
পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে পরপর দুর্ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত চালকদের পাকড়াও করতে পারছে না পুলিশ। গত সোমবার মিলেনিয়াম পার্কের সামনে একটি মিনিবাস ফুটপাথে উঠে এক ব্যক্তিকে ধাক্কা মেরেছিল। এখনও সেই চালককে ধরতে পারেনি লালবাজার।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘ওই চালক ফেরার। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ লালবাজারের কর্তাদের দাবি, বাকি চালকদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পাকড়াও করতে সম্ভাব্য জায়গায় তল্লাশি-হানাও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহেও যদি এত দুর্ঘটনা ঘটে তা হলে সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি আদৌ টেকে কি?
পুলিশকর্তাদের দাবি, সচেতনতা বাড়ছে না, তা নয়। বেপরোয়া চালকদের আইনের ফাঁসে বাঁধার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সেই ফাঁস কতটা জোরালো, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy