Advertisement
০২ মে ২০২৪

নতুনত্বের রঙে উৎসবের শহর রাঙালেন এক ঝাঁক নবীন শিল্পী

কেউ এত দিন ছিলেন সহশিল্পী। কেউ বা একেবারেই আনকোরা! কারও হাতিয়ার যন্ত্রাংশ। কারও বা ভিনাইল। কেউ মূর্তিতে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজপুতানার মিনেকারি কাজ। কেউ বা মণ্ডপ জুড়ে হাজির করেছেন বিষ্ণুপুরের নানা মাপের হাজার দশেক লণ্ঠনকে। কোথাও আবার চার ক্লাব সদস্যই পুজো সাজানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন কাঁধে!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share: Save:

কেউ এত দিন ছিলেন সহশিল্পী। কেউ বা একেবারেই আনকোরা!

কারও হাতিয়ার যন্ত্রাংশ। কারও বা ভিনাইল। কেউ মূর্তিতে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজপুতানার মিনেকারি কাজ। কেউ বা মণ্ডপ জুড়ে হাজির করেছেন বিষ্ণুপুরের নানা মাপের হাজার দশেক লণ্ঠনকে। কোথাও আবার চার ক্লাব সদস্যই পুজো সাজানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন কাঁধে! পুজো কর্তারা বলছেন, অভিজ্ঞতা না থাক, শিল্প-ভাবনার জোরেই এই শিল্পীরা টক্কর দিতে পারেন অনেককেই।

শহরে পুজোর লড়াইয়ে বড়িশা ক্লাব তালিকার উপরের দিকেই থাকে। সেখানেই এক সময় হাত পাকিয়ে উঠে এসেছেন বহু নামী শিল্পী। এ বারে বড়িশা বেছে নিয়েছেন একেবারে নতুন এক শিল্পী, প্রদীপ দাসকে। সাইকেলের চেন কিংবা অন্যান্য যন্ত্রাংশ জুড়ে প্রদীপ এ বার তুলে ধরেছেন তুলে ধরেছেন দু’টি গাভীর মূর্তি। বাঙালির জীবনে জুড়ে থাকা দুধ ও তার নানা রীতি, সংস্কারকে তুলে এনেই মণ্ডপ সাজিয়েছেন তিনি। রয়েছে শিবমূর্তিও। অনেকেই বলছেন, প্রদীপের কাজ এ বার চটক দেখাতে পারে অনেককেই।

এ বারেই পুজো ময়দানে প্রথম ‘খেলতে’ নেমেছেন বছর আঠাশের শুভদীপ মজুমদার। দক্ষিণের সেলিমপুর পল্লিতে তিনি নিয়ে এসেছেন রাজস্থানি মিনেকারি শিল্পকে। সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন রাজপুতানার লোকশিল্পকেও। দু’য়ের মিশেলেই সেলিমপুর নজর কাড়তে পারে অনেকের। সেই কাজের হাত ধরেই শুভদীপও উঠে আসতে পারেন উৎসব কাপের নতুন তারকার তালিকায়।

বছর পাঁচেক ধরে শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন আশিস চৌধুরী। এ বারে নিজেই মূল ভূমিকায় নেমেছেন উল্টোডাঙার তেলেঙ্গাবাগানে। বিধাননগর স্টেশনে নামতেই চোখে পড়বে তেলেঙ্গাবাগানের ব্যানার, ফেক্স জুড়ে লেখা দুর্গার বারোমাস্যা। এই থিম ফুটিয়ে তুলতেই বাঙালির ক্যালেন্ডারকে বেছে নিয়েছেন আশিস। ব্যবহার করেছেন ভিনাইল, ফ্লেক্স, বেনারসি কাপড়, রেডিয়াম স্টিকারের মতো উপাদান।

বছর কয়েক আগে হরিদেবপুরের ৪১ পল্লিতে জুটি বেঁধে কাজ করেছিলেন মহেন্দ্র পাল। এ বার তিনি একাই দায়িত্ব নিয়েছেন হাতিবাগানের নবীনপল্লিতে। বিষ্ণুপুরের হাজার দশেক লণ্ঠন দিয়ে সেখানে মণ্ডপ সাজিয়েছেন তিনি। প্রতিমার মূল মণ্ডপের মাথাতেও একটি বিরাট লণ্ঠন তৈরি করেছেন তিনি। গোটা মণ্ডপ সাজাতে লেগেছে হাজার দশেক লণ্ঠনও। প্রতিমাও হয়েছে বিষ্ণুপুরের এক দুর্গামূর্তির অনুকরণে। লেকটাউনের নতুনপল্লি প্রদীপ সঙ্ঘ এ বার বেছে নিয়েছে বিমান সাহাকে। তিনি তুলে ধরছেন মাসাই উপজাতির শিল্পকলাকে।

মহেন্দ্রর গায়ে গা লাগিয়েই কাজ করছেন আর এক নতুন শিল্পী পরিমল। হাতিবাগানের নলিন সরকার স্ট্রিটের মণ্ডপে বিরাট মাপের আয়না ব্যবহার করেছেন। দর্পণের প্রতিবিম্বে বিভ্রম লাগতেই পারে দর্শকদের। আয়নার সঙ্গে তালপাতা কিংবা কাচের স্লাইডের ব্যবহারে নতুনত্বের মাত্রা যোগ করেছেন তিনি। নতুন শিল্পীদের মধ্যেই ক্রমশ উঠে আসছেন দেবতোষ কর। গত বারের মতো এ বারও তিনি দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটের। দেবতোষ এ বার সেখানে রং নিয়ে কাজ করছেন। রামধনুর সব রং মিশিয়ে কী ভাবে সাদা রঙে বদলে যায়, তা-ই দেখাতে চেয়েছেন তিনি। মুদিয়ালিতে আর এক নতুন শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ সুরাই ফুটিয়ে তুলছেন পরিবেশ ভাবনাকে। তুলে আনছেন কৃত্রিম পাখি ও প্রজাপতির ঝাঁককে।

শহরের নামী পুজোর মধ্যে রয়েছে ভবানীপুর চক্রবেড়িয়া ক্লাব। এক সময় এখানেই ক্রিস্টাল পাথরের বৃষ্টি গড়ে তাক লাগিয়েছিলেন শিল্পী শিবশঙ্কর দাস। গত বছর থেকে চক্রবেড়িয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন শিল্পী মানস রায়। এ বার তিনি মণ্ডপ গড়ছেন বাঙালির শুভ উৎসবের চিহ্ন ‘শ্রী’র মতো করে। মাটির থালা, প্রদীপের পাশাপাশি ৩ হাজারেরও বেশি ‘শ্রী’ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপ।

প্রতিমাশিল্পী হিসেবে এ বারই প্রথম কাজে নেমেছেন সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায়। কাশী বোস লেনের পুজোয় মাটির উপরে সোনালি-রুপোলি রাংতা দিয়ে মালিপান্না শিল্পের আদলে মূর্তি গড়ছেন তিনি। বদল এনেছেন মূর্তির ভঙ্গিমাতেও। অনেকেই বলছেন, প্রতিমাশিল্পী হিসেবে আগামী দিনের তারকা হতে পারেন সুমন্ত্র।

এ সবের বাইরে গিয়েই ভিন্ন ভাবনা রয়েছে রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের পুজোয়। শহরের নামী হোক কিংবা নতুন, কোনও শিল্পীকেই এ বার বেছে নেননি তাঁরা। বদলে ক্লাবেরই চার সদস্য সুপ্রতীক চট্টোপাধ্যায়, সুমন চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য পোদ্দার এবং গোপাল মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছেন বিশ্বশান্তির থিম! পুজোর সাধারণ সম্পাদক সৌমিত মিত্র বলছেন, প্রথাগত শিল্পশিক্ষা একমাত্র অনিন্দ্যরই রয়েছে। বাকিরা অন্য পেশায় যুক্ত। কিন্তু ক্লাবের সদস্যরাই এই কাজে এগিয়ে আসায় পুজোর সঙ্গে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে রূপচাঁদ মুখার্জির পুজোয়।

নতুন বা আনকোরাদের নিয়েই এ বার খেলায় জিততে নেমেছে এই ক্লাবগুলি। তাঁরা বলছেন, নামে কী-ই বা আসে যায়! ভিড় টানাটাই তো আসল লক্ষ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE