ওয়ার্ড সংরক্ষণের আওতায় পড়ে আসন্ন পুরভোটে নিজেদের জেতা ওয়ার্ড ছাড়তে হবে কলকাতা পুরসভার অন্তত তিন মেয়র পারিষদ এবং দুই বরো চেয়ারম্যানকে। এ ছাড়াও গত বারের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক-সহ আরও কয়েক জন কাউন্সিলর।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১৪১ থেকে বেড়ে এ বার পুরভোটে মোট ওয়ার্ড হবে ১৪৪টি। জোকা গ্রাম পঞ্চায়েত কলকাতা পুরসভার অধীনে আসাতেই ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যেই মহিলা এবং তফসিলি জাতির জন্য আসন সংরক্ষণের কারণে পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন বিন্যাস হচ্ছে। মহিলা ওয়ার্ড হওয়ার ফলে আগামী পুরভোটে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার, বস্তি দফতরের স্বপন সমাদ্দার এবং নিকাশি দফতরের রাজীব দেবকে লড়তে হলে অন্য ওয়ার্ড বাছতে হবে। বর্তমানে দেবব্রতবাবু ৯৭ নম্বর, স্বপনবাবু ৩০ এবং রাজীববাবু ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
সংরক্ষণের কোপে পড়ছে ৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের ইকবাল আহমেদ, ৯ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিল মুখোপাধ্যায়, বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক অমল মিত্র, পুরসভার অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান দীপঙ্কর দে-র ওয়ার্ডও। এর মধ্যে ইকবাল আহমেদের ৬২ এবং দীপঙ্কর দে-র ৯১ নম্বর ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হচ্ছে। অমল মিত্রের ১১৪ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষিত হচ্ছে তফসিলিদের জন্য।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে কলকাতা পুরভোটে মহিলা ওয়ার্ড সংরক্ষণ হচ্ছে ২,৫,৮..ক্রম অনুসারে। অর্থাৎ ২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা হলে তার পরে দু’টি বাদ দিয়ে তৃতীয়টি ফের মহিলা ওয়ার্ড হবে। ওই সূত্রের খবর, তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হচ্ছে আটটি ওয়ার্ড ৪, ৩০, ৪৬, ৭৯, ৮৬, ১১৪, ১২৪ এবং ১৪৪। এর মধ্যে ৩০, ৮৬ এবং ১৪৪ ওয়ার্ডে প্রার্থীকে মহিলা হতে হবে।
সংরক্ষণের পদ্ধতি প্রসঙ্গে পুরসভার এক আমলা জানান, ২, ৫, ৮ ক্রম অনুসারে ২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষণের পর ফের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষণ হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু ৪ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলির জন্য সংরক্ষিত, তাই সেটিকে ওই ক্রমের মধ্যে ধরা যাবে না। তফসিলি সংরক্ষিত ওয়ার্ডটি বাদ দিয়ে দুটো ওয়ার্ডের ফারাক থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২ এর পর ৩ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড ছেড়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড ফের মহিলা ওয়ার্ড হবে। তার পরেরটি হবে ৯ নম্বর। এবং ১২, ১৫, ১৮ ওয়ার্ডগুলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হবে। ওই হিসেবে এ বার সাধারণ মহিলাদের জন্য ৪৫টি ওয়ার্ড সংরক্ষিত হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রথা মতো ওই রোস্টার তৈরি করে রাজ্য নির্বাচন অফিস। পরে তা পাঠানো হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে। তবে সব কিছুই চূড়ান্ত হয় রাজ্য সরকারের ইচ্ছেয়। নবান্ন সূত্রের খবর, মাসখানেক আগেই কলকাতা পুরসভা থেকে ওয়ার্ড পিছু জনসংখ্যার হিসেব পাঠানো হয়েছে। তখনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে কত সংখ্যক তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষ রয়েছেন, তারও হিসেব দেওয়া হয়। রাজ্যের পুর দফতরের এক অফিসার জানান, যে ওয়ার্ডে তফসিলি জাতিরবাসিন্দা সংখ্যা বেশি, সেই ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করে তার থেকে ক্রমশ নীচের দিকে (ডিসেন্ডিং অর্ডার) থাকা কয়েকটি ওয়ার্ডকে তফসিলি সংরক্ষিত করার কথা।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুরভোটের জন্য করা রোস্টারে উল্লেখযোগ্য যে সব কাউন্সিলরের ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হচ্ছে, তাঁরা হলেন: তৃণমূলের শান্তনু সেন (২), স্মরজিৎ ভট্টাচার্য (১২), রাজকিশোর গুপ্ত (২৭), পার্থ বসু (৪০), দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (৮৬) এবং বামফ্রন্টের দেবাংশু রায় (৫৯) সুশীল শর্মা (৬৫)-সহ আরও অনেকে।
সম্প্রতি চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের ওয়ার্ডে ৬ হাজারেরও বেশি ভোটে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ইকবাল আহমেদ। এ বার তাঁর ওয়ার্ডও মহিলা সংরক্ষণ। স্বভাবতই ইকবালকে কোন ওয়ার্ড দেওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বর্তমান মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার এবং স্বপন সমাদ্দারের জন্যও ‘সেফ ওয়ার্ড’ খোঁজা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy