Advertisement
E-Paper

অকেজো অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাই কি বাড়াল বিপদ

বুধবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের বেসমেন্ট থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন রোগীদের পরিজনেরা। তাঁরা হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টি জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫৭
দেওয়াল ভেঙে ভিতরে ঢুকছেন দমকলকর্মীরা। ছবি: স্বাতী ভট্টাচার্য

দেওয়াল ভেঙে ভিতরে ঢুকছেন দমকলকর্মীরা। ছবি: স্বাতী ভট্টাচার্য

শতাব্দী প্রাচীন ভবন। গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ তকমাও রয়েছে। ভবনের উপরের তলায় রয়েছেন প্রায় চারশো মুমূর্ষু রোগী, বেসমেন্টে মজুত কয়েক কোটি টাকার জীবনদায়ী ওষুধ। কিন্তু ওই ভবনের নিরাপত্তা কতটা? অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কি পর্যাপ্ত রয়েছে? বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সরকারি হাসপাতালের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দিল।

বুধবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের বেসমেন্ট থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন রোগীদের পরিজনেরা। তাঁরা হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টি জানান। ওই বিল্ডিংয়ে মেডিসিন, কার্ডিওলজি এবং হেমাটোলজি বিভাগের রোগীরা ভর্তি থাকেন। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ডাক্তারেরাও ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। ঘণ্টা দেড়েক পরে হাসপাতালের সমস্ত কর্তা বিষয়টি জানতে পারলে তবেই দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। রোগীর পরিজনেদের একাংশের অভিযোগ, দমকল পৌঁছনোর আগে হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কোনও কাজেই লাগেনি। ইতিমধ্যে ধোঁয়ার তীব্রতা বেড়ে যায়। এমসিএইচ বিল্ডিংয়ে থাকা রোগীদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

জানা যায়, ফার্মাসি বিভাগের ওষুধের বন্ধ স্টোরে আগুন লেগেছে। ওই ঘর থেকে ধোঁয়ার সঙ্গে বেরোতে থাকে তীব্র গন্ধ। স্পিরিট, ইথাইল-সহ বিভিন্ন দাহ্য বস্তুতে ভর্তি ওই ঘরে হাসপাতালের যাবতীয় জীবনদায়ী ওষুধ রাখা হয়। কিন্তু দমকল পৌঁছনোর পরে সেই ঘর খোলা নিয়েই তৈরি হয় জটিলতা। হাসপাতালের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে বিপদ আটকানো তো দূর অস্ত্, দমকলের দশটি ইঞ্জিন হাসপাতাল চত্বরে পৌঁছেও কাজ শুরু করতে পারেনি। আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার জন্য ফার্মাসি বিভাগের পিছনের দিকের দেওয়াল ভাঙতে হয়। তার পরে দমকলকর্মীরা ভিতরে পৌঁছন। পার্সোনাল প্রোটেকটিভ (পিপি) স্যুট পরে কাজ করতে দেখা যায় তাঁদের। ছিল ‘ব্রিদিং অপারেটিং লাইনে’র ব্যবস্থা। অক্সিজেন সিলিন্ডারে গ্যাস পাইপ গুঁজে এই পদ্ধতিতে কাজ চালালেও বেশ কয়েক জন দমকলকর্মীকে অসুস্থ হয়ে পড়তেও দেখা যায়। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিভাগের ভিতরে কোনও অগ্নি-নির্বাপক কিংবা জল নিয়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।

ফার্মাসি বিভাগের পাশাপাশি চারতলা ওই ভবনের অন্য তলাতেও পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ জায়গায় রয়েছে মেয়াদ ফুরনো অগ্নি-নির্বাপক। এ দিন সেগুলি ব্যবহারের চেষ্টা করলেও কোনও কাজে লাগেনি। অগ্নিকাণ্ডের সময়ে জল সরবরাহের পাইপও এ দিন ব্যবহার করা যায়নি বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।

স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তা থেকে হাসপাতালের সুপার, সকলেই অবশ্য জানাচ্ছেন পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘রোগী নিরাপত্তার সমস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনীয় অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাও রয়েছে। আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রয়েছে।’’ কিন্তু ধোঁয়া আর আগুনে ভরে যাওয়া ফার্মাসি বিভাগের আগুন নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কি আদৌ কোনও কাজ লেগেছে? প্রাথমিক পর্বে আগুন নেভাতে কি কোনও সাহায্য করেছে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র? এই সব প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, দমকল পৌঁছতে যদি আরও সময় লাগত, তা হলে শ’চারেক রোগীকে নিয়ে কী করতেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?

Medical College Fire System Danger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy