Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিপদ জেনেও জীর্ণ বাড়ি নিয়ে সিদ্ধান্তে গড়িমসি

মাথার উপরে ‘বিপদ’ ঝুলেই আছে। মঙ্গলবার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বাড়ি ধসে পড়ার পরে ওই রাতে বিপদঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবু শহরে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ করা যে সময়সাপেক্ষ, বৃহস্পতিবার পুরসভার এক বৈঠকে কার্যত সেই বার্তাই স্পষ্ট হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মাথার উপরে ‘বিপদ’ ঝুলেই আছে। মঙ্গলবার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বাড়ি ধসে পড়ার পরে ওই রাতে বিপদঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবু শহরে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ করা যে সময়সাপেক্ষ, বৃহস্পতিবার পুরসভার এক বৈঠকে কার্যত সেই বার্তাই স্পষ্ট হল।

কারণ, বাড়ি ভাঙা নিয়ে ওই বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। কেবল উঠে এসেছে কয়েকটি প্রস্তাব। তাতে বলা হয়েছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ফের একটি বৈঠক হবে। তাঁদের মতামত জেনেই পরবর্তী ব্যবস্থা হবে। অর্থাৎ ফের বিলম্বিত লয়। পুর প্রশাসনের ওই গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরমহলেই। অনেকের ধারণা, জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না করার পিছনে রয়েছে ‘নানা অজানা’ কারণ।

অথচ মঙ্গলবার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এ বার বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে এত গড়িমসি কেন?

মেয়রের কথায়, ‘‘চাইলেই তো আর ভাঙা যায় না। এর জন্য কী পদ্ধতি নেওয়া প্রয়োজন, সে সব আলোচনা করা দরকার।’’ তিনি জানান, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার আগে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার, বাস্তুকার, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, বেশ কিছু সমাজসেবী সংস্থা এবং শহরের বিশিষ্ট মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা হবে। তাঁদের মতামত নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করতে চায় পুর-প্রশাসন। তাহলে এত দিন লাগছে কেন?

মেয়র বলেন, ‘‘পরিপ্রেক্ষিত দেখে অনেক কাজ করতে হয়। আছে আইনি জটিলতাও।’’ পুরসভার দাবি, মূলত যে সব সমস্যার জন্য বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা যায় না, তার অন্যতম হল ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা। তাঁদের সরিয়ে বাড়ি ভাঙার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারা কঠিন কাজ। অর্থাৎ সেই ‘মানবিকতা’। দিন কয়েক আগে প্রকাশিত একটি খবরে (আনন্দবাজারে) মহারাষ্ট্রের ঠাণে পুরসভার উদাহরণ তুলে বলা হয়েছিল, সেখানে পুর কমিশনার নোটিস দিয়ে বাসিন্দাদের সরিয়ে প্রায় ৭০টি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফেলেছেন। ঠাণে পারলে কলকাতা পারবে না কেন, প্রশ্ন তুললে সেখানেও কলকাতা পুরসভা ‘মানবিকতার’ প্রসঙ্গই তুলেছিল।

পুরসভা সূত্রে খবর, ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীই প্রথম মেয়রকে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পরেই মেয়র ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করেন। পুরসভার এক আমলার কথায়, সেখানে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনাই পুরসভাকে ‘তৎপর’ করে। যার ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবারের এই বৈঠক। তবে এ দিন অবশ্য বাড়ি ভাঙা বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মেয়র-সহ হাজির ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ও দমকল দফতরের শীর্ষ কর্তারা।

পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, বর্তমান আইন অনুযায়ী বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে চাইলে বাড়ির মালিককে ১০০ শতাংশ ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) দেওয়া হবে। আগে দেওয়া হত ৫০ শতাংশ। মালিককে অনুপ্রাণিত করতেই ওই ব্যবস্থা। তবে বাড়িতে যাঁরা ভাড়া থাকেন, তাঁদের অনুমতি নিয়েই নতুন বাড়ি করতে হবে।

মেয়র জানান, যে সব প্রস্তাব এসেছে, তাতে বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটেদের স্বার্থ বজায় রেখেই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে যে সমস্ত বাড়িতে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটের মধ্যে আইনি জটিলতা রয়েছে, তা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালতে আবেদন জানানোর প্রস্তাব এসেছে। এ ছাড়া, পুরসভায় বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার প্রস্তাবও উঠেছে।

তবে ২৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী বৈঠকের দিন নিয়ে কালবিলম্বের কথাও উঠেছে পুরসভায়। অফিসারদের কেউ কেউ মনে করছেন, মহালয়ার দু’দিন আগে বৈঠক ডেকেছে পুরসভা। ততদিনে তো পুজোর বাজনা শুরু হয়ে যাবে। কাজেই ওই বৈঠক আরও আগে করা উচিত ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে পুরসভার অন্দরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dilapidated house pathuriaghata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE