ইন্দো-ব্রিটিশ বা ইন্দো-আমেরিকান নানা চিকিৎসা সম্মেলন এর আগে হয়েছে। কিন্তু এ বার বাংলা-ব্রিটিশ সম্মেলন শুরু হতে চলেছে কলকাতায়। তা-ও এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজের উদ্যোগে। চলতি মাসেই স্তন ক্যানসার নিয়ে ‘বাংলা-ব্রিটিশ ব্রেস্ট মিট’-এর আয়োজন করেছে এসএসকেএম হাসপাতাল। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বাঙালি ক্যানসার চিকিৎসকদের আগ্রহে এই প্রথম কোনও রাজ্যে এমন সম্মেলন আয়োজিত হতে চলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি। তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গও যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ করতেই এই উদ্যোগ। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, এমন বহু বাঙালি ডাক্তার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা নিজের দেশে জন্য কিছু করতে চান, তাঁদের এ বার খুঁজে বার করতে চায় রাজ্য।
বিশ্ব জুড়েই স্তন ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতার অভাব এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগটা ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যেও রোগটা নিয়ে পর্যাপ্ত ধারণা নেই। ফলে অনেক সময়েই বহু উপসর্গ দেখেও তাঁরা রোগীকে ঠিক জায়গায় রেফার করতে পারছেন না। এই কারণেই তরুণ ডাক্তারদের বেছে নেওয়া হয়েছে। এসএসকেএমে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল পড়ুয়াদের স্তন ক্যানসার নির্ণয় এবং আধুনিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেবেন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা।
সে দেশে কী ভাবে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পর্কে পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা শেখানোর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও দেখানো হবে। জীবন্ত মডেলের মাধ্যমে স্তনের ‘সেল্ফ এগজ্যামিনেশন’ এবং ক্যানসারের কারণে স্তন বাদ গেলে কী ভাবে অন্য জায়গা থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে তা পুনর্গঠিত করা যায়, সে সবও শেখানো হবে।
কলকাতায় স্তন ক্যানসার নিয়ে চিকিৎসা ও গবেষণা করেন যাঁরা, তাঁদের একটা বড় অংশও হাজির থাকবেন ওই সম্মেলনে, এ ছাড়া অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) এবং পিজিআই চণ্ডীগড় থেকেও চিকিৎসকেরা আসছেন। আয়োজক কমিটির তরফে শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্যই হল ‘ক্যাচ দেম ইয়ং’। তাই হবু ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। কারণ তাঁরাই ভবিষ্যৎ। এরই পাশাপাশি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। শুধু ডাক্তার নয়, নার্সদেরও ‘ব্রেস্ট কেয়ার’ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কী ভাবে টিউমারের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়, তা মহিলাদের শেখাবেন তাঁরাই। পাশাপাশি, অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে কী কী করা উচিত, প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সে নিয়েও।’’
কিন্তু হঠাৎ ইংল্যান্ডের ডাক্তারেরা পশ্চিমবঙ্গে এসে প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহী হলেন কেন? তাঁদের যুক্তি, শিকড়টা এ রাজ্যেই। বহু বছর রাজ্য ছাড়া হয়ে ভিন্ দেশে থাকলেও এ রাজ্যের জন্য কিছু করার তাগিদ তাঁদের থেকেই গিয়েছে। সেই কারণেই এই উদ্যোগ। স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় এসএসকেএমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জানার
পরে তাই তাঁরা এই মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের কাছেই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
এসএসকেএম সূত্রে খবর, চলতি মাসেরর ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক জনকে বেছে ম্যাঞ্চেস্টারে পাঠানো হবে। সেখানে স্তন ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসার আরও কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে আসবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy