Advertisement
E-Paper

বিমানবন্দরে তোলাবাজি

কিন্তু কারা এঁরা? এক যুবক জানালেন, এমিরেটস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, কাতার, ইতিহাদের উড়ান নামার পরে তাঁরা হাজির হন টার্মিনালের সামনে। কেউ থাকেন দমদমে, কেউ বিমানবন্দরের দু’ নম্বর বা আড়াই নম্বর গেটের কাছে। এটাই ওঁদের পেশা।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৩০
যাত্রীর পাশে যুবকদের ভিড়। বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র

যাত্রীর পাশে যুবকদের ভিড়। বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র

ট্রলিতে ব্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বেরোতেই ঘিরে ধরলেন কয়েক জন। ‘‘স্যার ট্যাক্সি লাগবে?’’ মাথা নাড়লেন যাত্রী। তখন সদ্য নেমে আসা বিমান থেকে দুবাই, ইউরোপ, আমেরিকার যাত্রীরা বেরিয়ে আসছিলেন। আর তাঁদের সামনে একই প্রশ্ন নিয়ে হাজির ওই যুবকেরা।

এক যাত্রী নিজের গাড়ি খুঁজে নিলেন। তবু ট্রলি ঠেলে নিয়ে যেতে চেয়ে পিছু নিলেন দুই যুবক। বারণ করা সত্ত্বেও যাত্রীর পাশে ট্রলির এক ধার ঠেলছেন এক যুবক। পার্কিংয়ে পৌঁছে চালক ডিকি খুলতেই যুবকেরা আগ বাড়িয়ে ট্রলি থেকে ব্যাগ তুলে দিলেন। এগিয়ে এল হাত — ‘‘স্যার পুজোর সময়, কিছু দিন।’’ বিদেশ থেকে আসা ওই যাত্রী জানালেন, তাঁর কাছে ভারতীয় টাকা নেই। যুবক বললেন, ‘‘ডলার দিন না। অসুবিধা নেই।’’ সঙ্গী বন্ধু ১০০ টাকা দিলেন।

কোথাও আবার যাত্রী ট্রলিতে জিনিস নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। তড়িঘড়ি ছুটে এসে ডিকি খুলে মালপত্র তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এক যুবক। যাত্রী অবাক! ‘‘আপনি কে?’’ যুবকের উত্তর, ‘‘হেল্প করছি স্যার। খুশি হয়ে যা দেওয়ার দেবেন।’’

কিন্তু কারা এঁরা? এক যুবক জানালেন, এমিরেটস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, কাতার, ইতিহাদের উড়ান নামার পরে তাঁরা হাজির হন টার্মিনালের সামনে। কেউ থাকেন দমদমে, কেউ বিমানবন্দরের দু’ নম্বর বা আড়াই নম্বর গেটের কাছে। এটাই ওঁদের পেশা। এঁরা অনিচ্ছুক যাত্রীরও ট্রলি ঠেলেন। পরে গাড়িতে তুলে টাকা চান। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বেশির ভাগ কথা না বাড়িয়ে তা দিয়ে দেন। কেউ আবার বিদেশি মুদ্রাও দেন।

এমনই এক জন বিশ্বনাথ সাহা। তিনি জানালেন, স্থানীয় জনা পনেরো যুবক এ কাজে যুক্ত। দিনে এ ভাবে ৩০০-৫০০ টাকা আয় হয়। পরিবর্তে যাত্রীদের বিরক্তিটুকু মেনে নিতে হয়। এঁদের সঙ্গে রয়েছেন এক দল যুবক, যাঁরা শুধু ভিক্ষা করেন। বিদেশি যাত্রী দেখলে ইংরেজিতে বলেন, ‘‘ওয়ান ডলার স্যার।’’ বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এঁরা বিমানবন্দর এলাকারই বাসিন্দা। ছোট থেকে এ ভাবে ভিক্ষা করছেন। তাঁদের অনেকেই এখন গাড়ি চালালেও ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে পারেননি। পুলিশ জানায়, মাঝেমধ্যেই এঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রেফতারও করা হয়। নির্দিষ্ট আইনি সংস্থান না থাকায় তাঁরা জামিন পেয়ে ফিরে আসেন।

পাশাপাশি রয়েছে বেসরকারি গাড়ির ভিড়। বিমানবন্দরে রয়েছে প্রি-পেড হলুদ ট্যাক্সির কাউন্টার। নতুন সংযোজন ওলা-উব্‌র। লাক্সারি ট্যাক্সির কাউন্টারও আছে। টার্মিনালের বাইরেও প্রি-পেড বুথ রয়েছে। তা সত্ত্বেও রয়েছে এই যুবকের দল। যাত্রী বেরোলেই প্রশ্ন, ‘‘গাড়ি লাগবে?’’

এক যাত্রীর প্রশ্ন, সল্টলেক কত?
জবাব এল, ৪৫০ টাকা। তিনি জানালেন, বিমানবন্দর থেকে সল্টলেক যেতে লাগে ২০০ টাকার মতো। তবে কেন এত বেশি? যুবকের ঝটপট উত্তর, ‘‘পার্কিং ফি লাগে। এসি আছে। তাতে টাকা লাগে তো!’’ আন্তর্জাতিক গেটের সামনে লম্বা লাইন এই সাদা গাড়ির।
বিমানবন্দর জানিয়েছে, এই চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চলছে।

Kolkata Airport Extortion Netaji Subhas Chandra Bose International Airport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy