Advertisement
E-Paper

শিশুকন্যাকে ‘খুনে’ পাকড়াও মা ও প্রেমিক

বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত নাবালককে কলকাতা জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করানো হয়। সেখানে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল জানান, অভিযুক্ত নাবালক তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে, শিশুটি থাকলে তার মাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৫
মণি দাস

মণি দাস

আড়াই বছরের মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিল ফুটপাতবাসী মা। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ম্যানহোল থেকে পাওয়া গিয়েছিল নিখোঁজ শিশুটির দেহ। মা মণি দাস পুলিশের কাছে তার অভিযোগে জানিয়েছিল, মাত্র ২০০ টাকা চুরি যাওয়া নিয়ে ঝামেলার জেরেই তার মেয়ে খুন হয়েছে। কালুয়া নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রতিবন্ধী এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল সে। এত কিছুর পরেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। এক আত্মীয়-সহ স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দার বয়ানের ভিত্তিতে নিজের মেয়েকে খুনের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ওই মা। ধরা পড়েছে তার নাবালক প্রেমিকও। মণি বর্তমানে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পুলিশের অনুমান, বিয়ে করার ক্ষেত্রে পথের কাঁটা ছিল আড়াই বছরের মেয়ে জবা। সেই কারণেই তাকে খুন করেছিল মা ও তার প্রেমিক।

বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত নাবালককে কলকাতা জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করানো হয়। সেখানে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল জানান, অভিযুক্ত নাবালক তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে, শিশুটি থাকলে তার মাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। তাই দু’জনে মিলে শিশুটিকে গলা টিপে খুন করে নর্দমায় ফেলে দেয়। পরে বোর্ড ওই নাবালককে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধ্রুবাশ্রমে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ধৃত মণিকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

গত ৩০ অগস্ট রাতে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের বাসিন্দা মণি উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ করে বলে, তার আড়াই বছরের মেয়ে নিখোঁজ। ওই রাতেই পুলিশ শ্যামলাল স্ট্রিটের একটি ম্যানহোল থেকে জবার দেহ উদ্ধার করে। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জানায়, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে মণি। এলাকার দুই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলে, ২০০ টাকার জন্য খুন করা হয়েছে জবাকে।

তদন্তকারীরা জানান, পুলিশি জেরার মুখে একাধিক বার বয়ান বদল করেন মণি। খোঁজখবর নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, মণি ঘনঘন শ্যামপুকুর মেট্রো স্টেশন লাগোয়া ফুটপাতে যাতায়াত করত। সেখানে এক কিশোরের সঙ্গে তার ভাবসাব রয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, ওই সূত্র মেলার পরেই মণির এক বোনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ফুটপাতের কয়েক জন বাসিন্দাকেও লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর তাতেই কেল্লাফতে হয় বলে দাবি তাঁদের। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘প্রত্যেকেই জানান, জবাকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হত মণি ও তার প্রেমিকের। এর পরেই মণিকে থানায় এনে জেরা করা হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো ঘটনা জানায় সে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরের সঙ্গে মণির সম্পর্ক বেশ কয়েক বছরের। সম্প্রতি তারা ঠিক করে বিয়ে করবে। কিন্তু ওই কিশোর জবাকে মেনে নিতে রাজি ছিল না। পুলিশের অনুমান, সে কারণেই পথের কাঁটাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পুলিশের দাবি, মণির সামনেই শিশুটিকে গলা টিপে খুন করে তার কিশোর প্রেমিক। পরে ম্যানহোলের ঢাকনা সরিয়ে তার ভিতরে রেখে দেওয়া হয় জবাকে।

পুলিশের দাবি, মণির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই তার স্বামীর সম্পর্ক নেই। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বোনের সঙ্গে ফুটপাতেই থাকত মণি। বছর তিনেক আগে এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছিল মণি। পরে সেই যুবকই তাকে বিয়ে করায় মামলা তুলে নেয় সে। অন্য দিকে, শ্যামবাজার মেট্রো লাগোয়া ফুটপাতের বাসিন্দা ওই নাবালকের বাবা বাসচালক। পুলিশের দাবি, ওই কিশোরের বিরুদ্ধে ছোটখাটো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। এ দিন তার মা অভিযোগ করেন, ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।

Arrest Death Daughter Girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy