Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই ঘরছাড়া মায়ের

পুলিশ জানিয়েছে, ছেলের কাছে আর ফিরতে চাননি তিনি। বিবাহিত এক মেয়ে বৃদ্ধা মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। ছেলের বিরুদ্ধে অবশ্য মা কোনও অভিযোগ করতে চাননি।

তেহরুন্নিসা

তেহরুন্নিসা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৪
Share: Save:

হাওড়া স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে হাত ছেড়ে দিয়েছিল ছেলে। থিকথিকে ভিড়ে অসহায় অবস্থায় কোনও সাহায্য পাননি বৃদ্ধা তেহরুন্নিসা। কোনওমতে রাস্তা খুঁজে খুঁজে পৌঁছেছিলেন বন্দর এলাকার পাহাড়পুর রোডে। কিন্তু বাড়ি চিনতে না পারায় রাস্তাতেই বসে কাঁদছিলেন তিনি। শেষমেশ অবশ্য স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দার সাহায্যে পুলিশের কাছে পৌঁছন ওই বৃদ্ধা। পুলিশই খুঁজে দিয়েছে তাঁর পরিবারকে। পুলিশ জানিয়েছে, ছেলের কাছে আর ফিরতে চাননি তিনি। বিবাহিত এক মেয়ে বৃদ্ধা মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। ছেলের বিরুদ্ধে অবশ্য মা কোনও অভিযোগ করতে চাননি।

কী ঘটেছিল?

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৯ ডিসেম্বর পাহাড়পুর রোডে এক বয়স্ক মহিলাকে কাঁদতে দেখেন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁরাই গার্ডেনরিচ থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে। ওই বৃদ্ধা ভোজপুরি ভাষায় পুলিশকে জানান, তাঁর নাম তেহরুন্নিসা। বাড়ি বিহারের সিওয়ান জেলার মির্জাপুরে। এ-ও জানান, মোর্তাজা নামে এক ছেলে এবং কুরেশিয়া ও নুরাশিয়া নামে দুই মেয়ে রয়েছেন তাঁর। ট্রেনে
তিনি হারিয়ে গিয়েছেন বলেও জানান পুলিশকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধাকে ইলিয়ট রোডের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো হয়। পরিবারকে খুঁজে বার করতে মির্জাপুরের রঘুনাথপুর থানায় খবর পাঠানো হয়। সেই থানা থেকে খবর মেলে, মোর্তাজা বেশ কিছু দিন আগে বাড়িঘর বেচে কলকাতায় চলে গিয়েছেন। তবে কুরেশিয়া নামে বৃদ্ধার এক মেয়েকে খবর দেওয়া হয়েছে। তার পরেও বৃদ্ধার পরিবারের তরফে কোনও খোঁজ মেলেনি। ২৫ ডিসেম্বর মুস্তাক খান নামে এক তরুণ গার্ডেনরিচ থানায় এসে তাঁর ঠাকুরমা তেহরুন্নিসা (৭৫) নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। বিবরণ শুনে পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় ছবি দেখানো হয়। পরে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে গিয়ে বৃদ্ধাকে শনাক্ত করা হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুস্তাক দাবি করেছিলেন, তাঁর ঠাকুরমা ২১ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়ে যান। কিন্তু তেহরুন্নিসাকে উদ্ধার করা হয় ১৯ ডিসেম্বর। সন্দেহ হওয়ায় মুস্তাককে চাপ দিতেই তিনি কবুল করেন ১৮ ডিসেম্বর রাতে তাঁর বাবা ঠাকুরমাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির জেরেই মাকে বাড়ি থেকে বিতারিত করতে চেয়েছিলেন মোর্তাজা। পরবর্তী কালে বোন ফোন করে তেহরুন্নিসার খোঁজ করলে তিনি জানান, মা তাঁর বাড়িতেই রয়েছেন। কিন্তু বোন সত্যি ঘটনা ফাঁস করলেই পুলিশের মামলা এড়াতে তড়িঘ়ড়ি ছেলেকে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে পাঠিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে মুস্তাককে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি।

পুলিশ জানিয়েছে, মাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে কুরেশিয়া থানায় যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, মাকে সিওয়ানে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চান তিনি। এ ব্যাপারে মোর্তাজা অবশ্য কোনও আপত্তি করেননি। লিখিত ভাবে সম্মতির কথাও তিনি জানিয়েছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘বৃদ্ধা মাকে এ ভাবে রাস্তায় ফেলে দেওয়া অমানবিক এবং অপরাধ। মোর্তাজার শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু ছেলের এমন ব্যবহারের পরেও ওই বৃদ্ধা মোর্তাজার নামে কোনও অভিযোগ করতে চাননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Son Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE