Advertisement
E-Paper

জঞ্জালের স্তূপে ফুল ফোটাতে চায় পুরসভা

ইএম বাইপাস থেকে ধাপা ডাম্পিং গ্রাউন্ড যাওয়ার পথে বাঁ দিকে তাকালেই নজরে পড়বে, চকচক করছে একটা ‘পাহাড়’। এক সময়ে সেখানে জঞ্জাল ফেলা হতো। তবে ২০১০ সাল থেকে তা বন্ধ।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৪:০০
রূপান্তর: ধাপায় চলছে পার্ক তৈরির কাজ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

রূপান্তর: ধাপায় চলছে পার্ক তৈরির কাজ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ময়লার ঢিবিতে মনোরম উদ্যান। চলতি বছরেই কলকাতাবাসী পেতে চলেছেন এমনই এক আকর্ষণীয় স্থান— দাবি রাজ্য পরিবেশ দফতরের। শহরের জঞ্জাল ফেলার একমাত্র জায়গা ধাপা। নাম শুনলেই নাক সিঁটকান সকলে। এ বার সেখানেই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে গড়ে উঠছে বায়ো পার্ক। বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায়, প্রায় ৫৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে দ্রুত এগোচ্ছে কাজ। তদারকিতে পরিবেশ দফতর। দফতরের কর্তাদের আশা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। উদ্যান তৈরি দেখতে গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক প্রতিনিধিদল। ফেরার পথে বলে গিয়েছেন, কাজের গতি দেখে তাঁরা খুশি।

কী হচ্ছে ধাপায়?

ইএম বাইপাস থেকে ধাপা ডাম্পিং গ্রাউন্ড যাওয়ার পথে বাঁ দিকে তাকালেই নজরে পড়বে, চকচক করছে একটা ‘পাহাড়’। এক সময়ে সেখানে জঞ্জাল ফেলা হতো। তবে ২০১০ সাল থেকে তা বন্ধ। ওই পাহাড়ের আয়তন ১২ হেক্টরের একটু বেশি। জঞ্জালের ওই পাহাড়ই পুরো মোড়া হচ্ছে অগ্নি-নির্বাপক হাই ডেনসিটি পলি ইথিলিনের (এইচডিপিই লাইনার) চাদরে। এর ফলে জঞ্জালের স্তূপ ধসে পড়বে না। পলি ইথিলিনের লাইনার থাকবে পরপর দু’টি। তার উপরে একটি জৈব স্তর। সবার উপরে মাটি। সেখানেই বসানো হবে গাছ। গড়ে উঠবে সবুজের বাগান। হবে পার্ক, বসার জায়গা। দেখা যাবে বাহারি ফোয়ারা। অনেকটা পাহাড়ি পথে ওঠার স্বাদও মিলবে।

পরিবেশ দফতরের এক আধিকারিক জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রক দেশের তিনটি জায়গায় জঞ্জাল ফেলার মাঠে এই প্রকল্প গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কলকাতার পাশাপাশি এই প্রকল্প হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানায়। কলকাতারটিই সবচেয়ে বড়। ওই আধিকারিক জানান, পরিবেশ দফতর কাজটা করালেও কলকাতা পুরসভার জায়গায় এই বায়ো পার্ক গড়ে উঠছে। যে সংস্থা কাজের বরাত পেয়েছে, প্রথম দু’বছর দেখভাল করবে তারাই। পরে পার্কের মালিকানা থাকবে পুরসভার হাতে।

কিন্তু জঞ্জালের স্তূপে এমন প্রকল্পের উদ্যোগ কেন?

পরিবেশ দফতরের এক কর্তা জানান, জঞ্জাল ফেলার জায়গাকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পরিবেশবান্ধব করে তোলাই বায়ো পার্কের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে, জঞ্জালের মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য। সেগুলিকে কাজে লাগাতে হবে। ওই কর্তা আরও জানাচ্ছেন, ধাপা মানেই দুর্গন্ধ, এই ভাবনাটা মানুষের মন থেকে দূর করা দরকার। তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতার অন্যতম আর্কষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠবে এই বায়ো পার্ক।’’ গোটা এলাকা বড় গাছ দিয়ে পাঁচিলের মতো ঘিরে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কাজ চলছে জোরকদমে। জঞ্জালের স্তূপের চূড়ায় স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়ে সব সমান করা হচ্ছে। ওটাই বায়ো-টপ। অনেকটা এলাকা জুড়ে সমতলের মতো। প্রকল্পে কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ার জানালেন, এই পাহাড়ের চারপাশে গর্ত করা হয়েছে। কেন? জানা গিয়েছে, জঞ্জালের নীচ থেকে ক্রমাগত লিচেট (বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত তরল, যা থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে) বেরোয়, তা পাইপের মধ্যে দিয়ে গিয়ে ওই নালায় পড়বে। সেই লিচেটে থাকা জল পরিস্রুত করার জন্য পাশেই মাকালতলায় শ্মশানের কাছে তৈরি হচ্ছে প্লান্ট। ওই ইঞ্জিনিয়ার জানালেন, সবটাই প্রকল্পের মধ্যে।

কিন্তু বায়ো পার্কে যাওয়ার রাস্তা তো ধাপায় জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মূল অফিসের গা ঘেঁষে। পুরোদমে চালু হয়ে গেলে তো মানুষের যাতায়াতের অসুবিধা হবে। একই দিকে ময়লার গাড়ি এবং দর্শনার্থীদের যাওয়া-আসা হতে পারে কি? পরিবেশ দফতরের এক অফিসারের বক্তব্য, বাইপাস থেকে একটা সরাসরি পথ করা দরকার, যা গিয়ে পড়বে বায়ো পার্কে। তাঁর আশা, সরকার এবং পুরসভা নিশ্চয়ই সেই ব্যবস্থা করবে।

Park Garbage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy