হলই বা নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে, তবুও কলকাতার বুকে গড়ে ওঠা বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার আঁচ পড়েছে পুর প্রশাসনের গায়েও। ভবিষ্যতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিতে চায় না পুর প্রশাসন। আর সে দিকে লক্ষ রেখেই এ বার শহরে যত উড়ালপুল রয়েছে, তা নির্মাণে এবং রক্ষণাবেক্ষণে নজরদারি করতে চায় পুরসভাও। ভোট গণনার আগের দিন এমনই এক নির্দেশিকা জারি করেছেন কলকাতার পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি মাসের প্রথম এবং তৃতীয় শুক্রবার শহরের বিভিন্ন উড়ালপুল সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হবে পুরসভায়। তাতে পুরসভার প্রতিটি দফতরের বিভাগীয় প্রধানেরা উপস্থিত থাকবেন।
সেখানেই শেষ নয়, এ বার থেকে প্রতি মাসে ২২ দিন পুরসভার কাজকর্ম কতটা এগোচ্ছে তা তদারকির জন্য বৈঠক হবে পুরসভায়। সেখানে রাস্তা, জল সরবরাহ, নিকাশি নালার কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের। পাশাপাশি শহর জুড়ে পরিষেবা সংক্রান্ত নানা অভিযোগের নিস্পত্তি কেন হচ্ছে না, তারও জবাব দিতে হবে বিভাগীয় কর্তাদের। কিন্তু প্রশ্ন, হঠাৎ পুরসভার এই তোড়জোড় কেন?
পুরসভার এক আমলা জানান, পুর পরিষেবার মান বাড়াতেই এমন উদ্যোগ। সম্প্রতি ভোটের প্রচারে গিয়ে এমন কিছু অভিযোগ কানে এসেছে, তাতে তাঁদের মনে হয়েছে পরিষেবায় খামতি থেকে যাচ্ছে। টাকা খরচ করলেও সরাসরি তার উপকারিতা নগরবাসীর কাছে পৌঁছচ্ছে না। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেও একাধিকবার বলেছেন, শহরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল উৎপাদন হলেও, সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। সে সব দূর করতে এ বার সক্রিয় হতে চায় পুর প্রশাসন। যদিও কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ সব ঠেকে শিখতে হচ্ছে। ভোটের প্রচারে গিয়ে ওঁদের মালুম হয়েছে পুরসভার কাজে অনেকেই অসন্তুষ্ট। তাই প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’
কিন্তু মাসে ২২ দিন বৈঠক কি যুক্তিযুক্ত?
একাধিক অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, এতে বৈঠক বেশি হবে, কাজের সময় কমে যাবে। তাঁদের বক্তব্য, পুর কমিশনারের দেওয়া নির্দেশিকায় দেখা যাচ্ছে কোনওটাতে মেয়র, কোনওটাতে কমিশনার নিজে থাকবেন। আর বেশির ভাগ বৈঠকেই সব দফতরের প্রধানদের থাকতে বলা হয়েছে। এমনিতেই পুরসভায় দৈনন্দিন কাজের চাপ অনেক বেশি। তার উপর পুরসভার বাইরে সরকারের নানা দফতরে গিয়েও বৈঠক করতে হয়। কখনও কখনও মন্ত্রীরাও ডেকে পাঠান। এ ছাড়াও রয়েছে মেয়র পারিষদের বৈঠক, পুর অধিবেশন। সব মিলিয়ে এ বার থেকে বৈঠকের চাপে কাজে আরও ব্যাঘাত ঘটবে। ঠিক তার উল্টো কথাটাই বলেছেন, পুরসভার এক পদস্থ আমলা। তাঁর কথায়, গত প্রায় তিন মাস ধরে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন ঢিলেমি ভাব এসে গিয়েছে পুর অফিসারদের। কাজেও তেমন আগ্রহ নেই। তাঁদের চাঙ্গা করতেই বৈঠক বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোন দফতরের কাজ কতটা এগোচ্ছে তার রিপোর্ট মাসে মাসে পেতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সমস্যা আরও এক জায়গায়। পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগে মাসে ৮-১০টি করে বৈঠক হতো। এক অফিসারের কথায়, অফিসারদের নিয়ে নানা বৈঠকে বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হত। এ বার তা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এত টাকা বাড়তি খরচের পর কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ পুরমহলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy