রান্নাঘরের সামনে খাবারের জায়গায় সিলিং থেকে ঝুলছে ছেঁড়া ওড়না।
নীচে চিৎ অবস্থায় পড়ে রয়েছে দেহ। মৃতের গলায় লেগে আছে ছেঁড়া ওড়নার বাকি অংশ। শোওয়ার ঘরও লন্ডভন্ড। অন্য যে দু’জনের সঙ্গে একটি বহুতলের একতলায় ভাড়া থাকতেন যুবক, তাঁরাও বেপাত্তা। ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবন্ধ। বাগুইআটির জগৎপুরে ইংরেজি নববর্ষের সকালে ওই যুবকের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু খুন না কি আত্মহত্যা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম শরৎ বিশ্বাস। তাঁর বয়স বছর ৩০। বাড়ি বর্ধমানের কালনায়। জগৎপুরের চড়কতলার ফ্ল্যাটে আরও দু’জনের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন শরৎ। তাঁদের মধ্যে আদিত্য প্রসাদ নামে এক জনকে বিয়ে করবেন বলে মাস আটেক আগে তিনি লিঙ্গ পরিবর্তন করেন। এ দিন সকালে কালনারই বাসিন্দা, শরতের পরিচিত দু’জন ব্যক্তির চিৎকার শুনে জড়ো হন প্রতিবেশীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দু’জন পার্ক স্ট্রিটে বর্ষবরণের আনন্দে যোগ দেবেন বলে কাটোয়া থেকে কলকাতায় আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় শরতের বাড়িতে ব্যাগ রেখে তাঁরা পার্ক স্ট্রিট চলে যান। এ দিন সকালে জগৎপুরের ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন, বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এক প্রতিবেশী মলয় চক্রবর্তী
জানান, ট্রেন ধরার তাড়ায় ওই দু’জন তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে শরতের দেহ দেখতে পান।
এই ঘটনায় বেশ কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই যুবক যদি আত্মঘাতীই হবেন, তা হলে শোওয়ার ঘরে বিছানা এবং সিলিং ফ্যান থাকা সত্ত্বেও রান্নাঘরের সামনের জায়গা কেন বেছে নেওয়া হল? ওই ঘরে সিলিংয়ের নীচে যে টুল পাওয়া গিয়েচে, তাতে চেপে সিলিংয়ের নাগাল পাওয়া সম্ভব কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দ্বিতীয়ত, ওড়না যে ভাবে ছেঁড়া ছিল, তাতে সেটি কাটা হয়েছে কি না, তা-ও সদন্তসাপেক্ষ। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ভোরে এক রুমমেট শরতের মাকে ফোনে মৃত্যুর
কথা জানান। এর পর থেকেই শরতের ওই দুই রুমমেট পলাতক। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের
গলায় ফাঁসের দাগ বেশ গভীর। তবে ঘর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। এ দিন ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক দল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।