নাগেরবাজারে বিস্ফোরণ। ফাইল চিত্র।
চার ইঞ্চি ব্যাসের একটি লোহার পাইপ। উচ্চতায় প্রায় আট ইঞ্চি। পাইপের লোহা এক মিলিমিটারের বেশি মোটা। মোটা পাইপটির ভেতরে আরও একটি সরু পাইপ।
মঙ্গলবার নাগেরবাজারের বিস্ফোরণের এক দিন পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার ফেটে যাওয়া ‘সকেট’ বোমার বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে বোমার এমনটাই চেহারা পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ফেটে যাওয়া বোমার উপরের দিকে কৌটোর গায়ে থাকা প্যাচের মতো খাঁজ কাটা। তদন্তকারীদের অনুমান, ‘কৌটোর’ মুখটি ধাতব ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। ঝালাই করা ছিল ছিপি, যাতে খুলে না যায়।
আর সেই কৌটোই ভরা ছিল একটি চটের ব্যগে। বুধবার সরকারি ভাবে তদন্তভার নেওয়ার পর, সিআইডির আইজি অশোক প্রসাদের নেতৃত্বে তদন্তকারীরা এ দিন বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন। সীমা অ্যাপার্টমেন্টে বাসন্তী সুইটস-এর পাশের গুদামের শাটারের তলায় থাকা গোল চাকতির দাগকে বিস্ফোরণস্থল ধরে নিয়েই তাঁরা মাপজোক করেন। ঘটনাস্থলে আসেন সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবেরটরির বিশেষজ্ঞরাও।
আরও পড়ুন: নাগেরবাজার তদন্তে সিআইডি, কিছুই সন্দেহজনক ‘দেখেননি’ অজিতের বোন
সিআইডি সূত্রে খবর, এই পুনর্নিমাণ করতে গিয়েই তদন্তকারীরা জোর দিয়েছেন একটি বিষয়ে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে শাটারের সামনে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার গায়ে কোনও স্প্লিন্টারের গর্ত নেই। অথচ রাস্তার উল্টো দিকে বিভিন্ন দোকানের শাটারে রয়েছে স্প্লিন্টারের ছিদ্র। এর থেকে তদন্তকারীদের ধারণা, পরিকল্পিত নয়, দুর্ঘটনা বশত বা অসতর্কতার জেরে বিস্ফোরণ হয়। সেই কারণে ওই কৌটোর ঝালাই করা মুখটি খুলে যায়। ফলে শ্র্যাপনেল এবং স্প্লিন্টার পাশের শাটারে আঘাত করেনি। করেছে উপর দিকে। সেখানে কংক্রিটে ধাক্কা লেগে ছিটকে গিয়েছে রাস্তার উল্টো দিকে। এক তদন্তকারী বলেন, “সেই কারণেই, ওই কৌটোর নীচের অংশ অক্ষত।”
সিআইডি আধিকারিকদের এই প্রাথমিক অনুমান মেনে নিলে, প্রশ্ন ওঠে, তা হলে ওই জায়গায় কী করে ওই ‘সকেট’ বা কৌটো বোমাটি এল? কে নিয়ে এল এবং কেন রেখে গেল?
আর এখানেই তদন্তকারীদের সন্দেহ, যে ব্যক্তি ওই বোমাটি বয়ে এনেছে, সে নিজেও আছে ওই আহতের তালিকায়। তদন্তকারীরা ফলওয়ালা অজিত হালদারের বোন যমুনাকে এ দিন জেরা করেন। যমুনা সিআইডি আধিকারিকদের জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিদিন মগরাহাট থেকে আসেন। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে মঙ্গলবার তাঁরা ফল নিয়ে ট্যাক্সি করে এসেছিলেন। অন্য দিন তাঁরা ট্যাক্সিতে আসেন না। এই তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল দু’কেজির সকেট বোমা, ধারণা সিআইডি-র
অন্য দিকে আহতের তালিকায় বাকি সবাই স্থানীয় বাসিন্দা হলেও ৫২ বছরের রাজেশ রাজভড় স্থানীয় বাসিন্দা নন। তিনি জগদ্দল থানা এলাকার বাসিন্দা। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, নাগেরবাজারে একটি বেসরকারি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে কাজ করেন। কিন্তু দমদম স্টেশন থেকে সেই ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে পৌঁছতে ওই গলিতে ঢোকার প্রয়োজন হয় না। আর সেখানেই সন্দেহ দানা বাঁধছে গোয়েন্দাদের মনে। তাঁর আঘাতও বাকিদের থেকে অনেক কম। বুধবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রথমদিন তদন্তে নেমে সিআইডির গোয়েন্দারা আপাতত উপরের ওই তথ্যগুলিকেই জোড়া লাগিয়ে নাগেরবাজার বিস্ফোরণের কিনারা করতে চাইছেন। আপাতত এই তথ্যগুলিই তাঁদের হাতিয়ার। এই তথ্য বিশ্লেষণ করেই গোয়েন্দাদের অনুমান বোমাটির হাতবদলের সময়েই বিস্ফোরণটি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy