Advertisement
E-Paper

পুলিশ মাথায় আঘাত পেতেই তদন্তে নয়া মোড়

মাথায় চোট লেগে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞা হারালেন এক পুলিশকর্তা। সেই ঘটনাস্থলে, যেখানে বারবার গিয়েও পথ হারিয়ে ফেলছিলেন গোয়েন্দারা। রহস্যের গিঁট মোটে খুলছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে যে-ই দুর্ঘটনা ঘটল, অমনি চিচিং ফাঁকের মতো... না, বন্ধ গুহার দরজা হাঁ করে খুলল না ঠিকই, তবে সুড়ঙ্গে দেখা গেল আলোর রেখা। যা ধরে এগোনো যাবে।

সুরবেক বিশ্বাস ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৫:৪৪

মাথায় চোট লেগে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞা হারালেন এক পুলিশকর্তা। সেই ঘটনাস্থলে, যেখানে বারবার গিয়েও পথ হারিয়ে ফেলছিলেন গোয়েন্দারা। রহস্যের গিঁট মোটে খুলছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে যে-ই দুর্ঘটনা ঘটল, অমনি চিচিং ফাঁকের মতো... না, বন্ধ গুহার দরজা হাঁ করে খুলল না ঠিকই, তবে সুড়ঙ্গে দেখা গেল আলোর রেখা। যা ধরে এগোনো যাবে।

ভবানীপুরের বকুলবাগান রোডে প্রৌঢ়া সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু যে দুর্ঘটনাই, এখন সে কথা অনেকটা জোর দিয়ে বলতে পারছেন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, খুন নয়, শৌচাগারে যাওয়ার পথে মাথায় চোট লেগে সংজ্ঞা হারিয়ে বাড়ির ভিতরে একটি নালায় পড়ে যান ওই মহিলা। চেতনাহীন অবস্থায় নালার ওই অল্প জলে চোখমুখ ডুবে যাওয়ায় তাঁর শ্বাসরুদ্ধ হয়। ওটাই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।

পুলিশ সূত্রের খবর, শৌচাগারে যাওয়ার ওই পথে সাবধানে মাথা নিচু করে যেতে হয়। না হলে একটি গ্রিল গেটে মাথা ঠুকে যাওয়ার আশঙ্কা। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশকর্তা অসাবধানতাবশত ঠিক ওই ভাবে মাথায় চোট পেলেন। তিনি সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য। তবে ওই আঘাতের ফলে তাঁর মাথাতেও এখন হেমাটোমা হয়েছে বা রক্ত জমাট বেঁধেছে। ঠিক যেটা হয়েছিল সুনন্দাদেবীর।

এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘আমাদের ওই সিনিয়র অফিসারের বয়স কম বলে অল্পতেই সামলে নিতে পেরেছেন। তা-ও তাঁর জ্ঞান অন্তত ১০-১২ সেকেন্ডের জন্য ছিল না। আর সেই জায়গায় সুনন্দা দেবী ষাটোর্ধ্ব। তাঁর কী হয়েছিল, ওই ঘটনা থেকেই অনুমান করা যেতে পারে।’’

শুধু ওই পুলিশকর্তা নন, ভাবনীপুর থানার একাধিক পুলিশ ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে অল্পবিস্তর মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তবে তাঁদের কেউ ওই পুলিশকর্তার মতো পড়ে গিয়ে সংজ্ঞা হারাননি।

গত সোমবার, ৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃতদেহ তাঁর বাড়ির ভিতর ওই নালা থেকেই উদ্ধার করা হয়।

তদন্তকারীদের একাংশের মতে, রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশের সন্দেহ, সেই সময়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির জলের জন্যই ওই প্রৌঢ়া বেসামাল হয়ে যান।

সুনন্দাদেবীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরে তাঁর প্রতিবেশীদের কেউ কেউ দাবি করেন, তাঁকে খুন করা হয়েছে এবং এর পিছনে প্রোমোটার-চক্রের হাত রয়েছে। বছর দুয়েক আগে ওই প্রৌঢ়া স্থানীয় এক প্রোমোটারের বিরুদ্ধে তাঁকে অপহরণ করার অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। সেই জন্য সোমবার রাতেই পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে।

তবে গোয়েন্দাদের একাংশ প্রোমোটার-চক্রের ছায়ার সঙ্গে ঘটনাস্থলটি কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সুনন্দা দেবীর ঘর লন্ডভন্ড হওয়ার কোনও চিহ্ন নেই। যেখানে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, সেই জায়গায় তাঁকে টেনে এনে ফেলার কোনও চিহ্ন নেই। কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন এমনকী স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞেরাও একাধিক বার গিয়ে আঁতিপাতি করে খুঁজেও পাননি।

সেই সঙ্গে তদন্তকারীদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, সুপারি কিলার দিয়ে খুন করা হলে তারা এতটা ঝক্কি নিতে যাবে কেন? তারা তো ঘরের মধ্যেই বালিশ চাপা দিয়ে বা গলা কেটে ওই মহিলাকে খুন করে নিঃশব্দে চলে যেতে পারত। তা ছাড়া, ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও অন্য কোনও হাতের ছাপ পেলেন না!

তবে এত কিছুর পরেও গোয়েন্দারা তাকিয়ে ময়না-তদন্তের লিখিত রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের দিকে। তাঁরা জানান, আগে ময়না-তদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট হাতে আসুক আর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা আরও এক বার ঘটনাস্থলে ঘুরে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিন। তার পরেই পাকা সিদ্ধান্তে পৌঁছবে লালবাজার।

bhawanipur murder case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy