Advertisement
১৭ মে ২০২৪

হুল্লোড় বা নিরালা যাপন, বছর শুরু ফুর্তিতেই

বছর শুরুর দিনটায় অন্তত ছায়া ফেলল না নগদের টান। হইচইয়ের লিস্টে একটুআধটু কাটছাঁট করতে হল হয়তো বা। কিন্তু উদ্দীপনায় ভাটা পড়ল না একটুও। একে পয়লা জানুয়ারি, তায় রবিবার, দিনভর তাই মনের মতো উদ্‌যাপনে মেতে রইল উৎসবমুখর বাঙালি।

ভিড়ে জমজমাট ময়দান। রবিবার। — বিশ্বনাথ বণিক

ভিড়ে জমজমাট ময়দান। রবিবার। — বিশ্বনাথ বণিক

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০২
Share: Save:

বছর শুরুর দিনটায় অন্তত ছায়া ফেলল না নগদের টান। হইচইয়ের লিস্টে একটুআধটু কাটছাঁট করতে হল হয়তো বা। কিন্তু উদ্দীপনায় ভাটা পড়ল না একটুও। একে পয়লা জানুয়ারি, তায় রবিবার, দিনভর তাই মনের মতো উদ্‌যাপনে মেতে রইল উৎসবমুখর বাঙালি। লোক যত বাড়ল, ফাঁসতে হল যানজটেও। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর ফুরফুরে মেজাজে অবশ্য সে সব

থোড়াই কেয়ার!

সকাল হতেই কচিকাঁচাদের হাত ধরে কেউ সপরিবার চিড়িয়াখানার গেটে। কেউ দলবেঁধে পিকনিকে দিনভর ফুর্তিতে মাতোয়ারা। কেউ বা পছন্দের রেস্তোরাঁয় জমাটি ভোজ সেরে সোজা মাল্টিপ্লেক্স-মুখী। ময়দান, ভিক্টোরিয়া চত্বর, ইডেন গার্ডেন্স, থেকে বটানিক্যাল, ইকো পার্ক— শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত থিকথিক করেছে ভিড়। কলকাতাবাসী তো বটেই, প্রতি বছরের মতোই সেই ভিড়ে সামিল, শহরতলি ও জেলার মানুষ।

সকাল সকাল কলকাতায় হাজির হয়ে গিয়েছিলেন হালিশহরের সুভাষ চক্রবর্তী। সঙ্গে স্ত্রী, মেয়ে আর ভাইপো। চিড়িয়াখানা আর ভিক্টোরিয়া ঘোরা সেরে দুপুরের দিকে চাদর পেতে বসে পড়লেন ময়দানে। সকাল থেকেই টুকটাক মুখ চলছিল। কমলালেবু, ডিমসেদ্ধ পেরিয়ে ময়দানে এসে ভরপেট লাঞ্চ। চার জনে একটু জিরিয়ে নিয়ে ফের বাসে চেপে রওনা দিলেন দক্ষিণেশ্বরের দিকে। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘ক’দিন ধরেই মেয়ে বায়না করছিল কলকাতা ঘুরতে আসবে। বছরের প্রথম
দিনে ওর ইচ্ছেপূরণ করতেই সাতসকালে এসেছি।’’

কসবার মুখোপাধ্যায় পরিবারের বছর শুরু হল কুস্তির ময়দানে। তবে বাস্তবে নয়, পর্দায়। স্ক্রিনে চোখ আটকে টানটান টক্করে বুঁদ। শেষমেশ ‘দঙ্গল’-এর গীতাকুমারী ফোগত লড়াই জিতে ফেলতেই হাততালির ফোয়ারা ছুটল গোটা হলে। মুখোপাধ্যায় পরিবারের খুদে সদস্য প্রজ্ঞা ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছে— ‘‘এ বছর থেকে আমিও সক্কাল সক্কাল উঠে পড়ব। তা হলে আমিও গীতার মতো শক্তিশালী হব!’’

নতুন বছরে নতুন স্বাদ। পাঁচ বছরের ছোট্ট সর্বাণী রায়ের বছর শুরু হল ফুচকায়। বড়দের মতো শালপাতার ঠোঙা হাতে এই প্রথম। জানুয়ারির প্রথম বিকেলে পুঁচকে মেয়ে বাবা-মায়ের হাত ধরে মিলেনিয়াম পার্কে। আর সেখানেই ‘বাবার মতো বড় হওয়া’। ঝালের চোটে হুসহাস করতে করতে চোখে জল। মুখের হাসিটা অবশ্য বেড়ে গেল খানিক।

তবে নৌকাবিহার বাদ পড়েছে। বারবার বায়না করলেও শেষমেশ বেলুন কিনে দিয়ে মেয়েকে ভুলিয়েছেন মা। সর্বাণীর বাবা অরুণ রায় বলেন, ‘‘নৌকাবিহারে আধ ঘণ্টায় ৪০০ টাকা নেবে। এই বাজারে অত বিলাসিতার ক্ষমতা নেই।’’

দঙ্গল বেঁধে হুল্লোড়ে একটু আধটু তাল কেটেছে যানজট। পথচলতি ভিড় আর বা়ড়তি গাড়ির চাপে দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত যানবাহনের গতি ছিল শ্লথ। তবে ছুটির মেজাজে তা দাগ কাটতে পারেনি বললেই চলে। শহুরে ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি কাটাতে কেউ কেউ অবশ্য দিনটা কাটিয়েছেন ভিড়-হট্টগোল এড়িয়ে, একটু নিরালার খোঁজে। দু’জনের একলা হওয়ার ঠিকানা তো বটেই, বন্ধুদের আলসে আড্ডারও ঠেক হয়ে উঠেছে শহরের কফিশপগুলো।

যাদবপুরে নতুন খোলা এক কফিশপের ভাঁড়ারে থাকা বইয়ের পাতায় চোখ গুঁজেই কাটিয়ে দিয়েছেন টালিগঞ্জের নন্দিনী সরকার। নতুন বছর মানে শুধু নিজের সঙ্গে কাটানো একটা দুপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata New Year celebration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE