Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ছড়ি ঘোরাবেন কে? সেই দ্বন্দ্বে ভুগছে নেফ্রোলজি

বিভাগীয় প্রধান বিভাগে থাকেন না। থাকেন না তাঁর আউটডোরেও। তাই কিডনি রোগীদের এমনিতেই ঘোর দুর্ভোগ এসএসকেএমে। এর উপরে আবার বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে তাঁর এক সময়ের ‘পরম বন্ধু’র প্রকাশ্য বিবাদের জেরে বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে চাপের মুখে পড়ছে ওই বিভাগ।

এসএসকেএম

এসএসকেএম

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

বিভাগীয় প্রধান বিভাগে থাকেন না। থাকেন না তাঁর আউটডোরেও। তাই কিডনি রোগীদের এমনিতেই ঘোর দুর্ভোগ এসএসকেএমে। এর উপরে আবার বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে তাঁর এক সময়ের ‘পরম বন্ধু’র প্রকাশ্য বিবাদের জেরে বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে চাপের মুখে পড়ছে ওই বিভাগ। ফলে স্বভাবতই মাথায় হাত পড়েছে রাজ্যের অন্যতম সেরা ওই মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক কর্তাদের। এমনকী, এমনটা চলতে থাকলে নেফ্রোলজি বিভাগটির সমস্ত কাজকর্মই লাটে উঠবে বলে স্বাস্থ্য ভবনে শীর্ষ কর্তাদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। বিভাগীয় প্রধান রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডের এই ‘পরম বন্ধু’টি হলেন নির্মল মাজি। হাসপাতালের চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দাবিতে দু’জনেরই ‘এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ’ অবস্থা।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে রাজেন পাণ্ডের নাম করে বিষোদ্গার করেন নির্মল। বৈঠকে হাজির হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্মল বলেন, ‘একজন ডাক্তার আছেন রাজেন পাণ্ডে। কোনও কাজ করেন না। আউটডোরে-ওয়ার্ডে থাকেন না। শুধু সুপার বা ডিরেক্টরের ঘরে বসে থাকেন। তাঁর জন্যই ওই বিভাগে কোনও কাজ হয় না। রোগীদের দুর্ভোগ চরমে। চার বছর পেরিয়ে গেল ইউরো-নেফ্রো বিল্ডিং তৈরি হল না। কেন দেরি হচ্ছে, তার কারণ জানাতে হবে। এ ভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না।’ আমরা তো ওঁর মুখে এই কথা শুনে তাজ্জব।’’

বৈঠকে ওই সময়ে হাজির থাকার কথা থাকলেও ছিলেন না রাজেন পাণ্ডে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ওই কথায় অস্বস্তিতে পড়েন সকলেই। কিন্তু নির্মল বলেই চলেন। বস্তুত, এ নিয়ে কথাবার্তার পরে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক আর বিশেষ এগোয়নি। দ্রুত তা শেষ হয়ে যায়। পরে রাজেনবাবুর কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘উনি মান্যগণ্য ব্যক্তি। যা বলার বলেছেন। সেটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। দরকার হলে এর তদন্ত হোক। তখনই সবাই জানতে পারবেন, আমি আসলে কী করি।’’

নির্মলবাবু অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। বিষয়টিকে ‘রোগী কল্যাণ সমিতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘রোগীদের ব্যাপারে ডাক্তার ও প্রশাসনিক কর্তাদের আরও মনোনিবেশ করা দরকার। না হলে ভোগান্তি কমানো যাবে না। সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি।’’

তবে হাসপাতালের কর্তারা জানিয়েছেন, ঠিক কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে এই দুই ‘বন্ধু’র এমন মনোমালিন্য শুরু হল, তা তাঁরা আন্দাজ করতে পারছেন না। তবে এর আঁচ যে ভাবে সরাসরি বিভাগের কাজকর্মের উপরে পড়ছে, তাতে তাঁরা শঙ্কিত। এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজেনবাবুকে নিয়ে আমরা অতিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসএসকেএমের একটি অনুষ্ঠানে এসে সিনিয়র ডাক্তারদের জেলায় গিয়ে পরিষেবা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। রাজেনবাবুর নাম করে তাঁকেও যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলায় যাওয়া তো দূরের কথা, রাজেনবাবু নিজের হাসপাতালের কোনও কাজই করেন না। যে রোগীরা ওঁকে দেখানোর জন্য আসেন, ওঁর পরিবর্তে জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের দেখেন। সে নিয়ে নিত্য অশান্তি বাধে।’’ এখানেই শেষ নয়, রাজেনবাবুর সঙ্গে বিবাদের জেরে এ বার নেফ্রোলজি বিভাগের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রেও নির্মল মাজি বাগড়া দেবেন বলে তাঁদের আশঙ্কা।

নির্মলবাবু এসএসকেএমের রোগী-কল্যাণ সমিতির রাজ্য সরকার মনোনীত সদস্য। হাসপাতালে যখনই তিনি আসেন, রাজেন পাণ্ডেকে কিছু দিন আগে পর্যন্তও তাঁর ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেখা যেত। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক নির্মল যখন এসএসকেএম হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিস করাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তখন সেই কাজ সফল করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজেনবাবু স্বয়ং। বিষয়টি সামনে আসার পরে নির্মল মাজির পাশাপাশি রাজেনবাবুরও রেজিস্ট্রেশেন বাতিলের দাবি জানিয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন। এত দিনের সেই ‘হরিহর আত্মা’র মধ্যে বিবাদটা বাধল কী নিয়ে, সেই জল্পনাতেই এখন সরগরম এসএসকেএম হাসপাতাল।

আর এরই মধ্যে বৃহস্পতিবারও নেফ্রোলজি বিভাগের ইন্ডোরে ডাক্তারদের অনিয়মিত হাজিরা, ডায়ালিসিস নিয়ে নানা সমস্যা, ওষুধপত্রের অভাব ইত্যাদি নিয়ে গোলমাল বাধে হাসপাতালে। সেখানেও একটি বারের জন্যও দেখা মেলেনি বিভাগীয় প্রধান রাজেনবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE