Advertisement
১১ মে ২০২৪
পণ্ডিতিয়া-তাণ্ডব

দুর্ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পার, ধরা পড়ল না ঘাতক গাড়ির কেউ

একটি গাড়ি-দুর্ঘটনা ও তার জেরে শহরের অভিজাত আবাসনে আরও ৭৪টি গাড়ি বেধড়ক ভাবে ভাঙচুর। দুর্ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে তিন-তিনটে দিন। অথচ এখনও ধরা পড়েনি দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক জনও। তদন্তের জন্য সোমবার রাতে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে ওই আবাসনে পৌঁছন খোদ পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

একটি গাড়ি-দুর্ঘটনা ও তার জেরে শহরের অভিজাত আবাসনে আরও ৭৪টি গাড়ি বেধড়ক ভাবে ভাঙচুর। দুর্ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে তিন-তিনটে দিন। অথচ এখনও ধরা পড়েনি দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক জনও। তদন্তের জন্য সোমবার রাতে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে ওই আবাসনে পৌঁছন খোদ পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। লেক থানায় গিয়েও অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দুর্ঘটনাগ্রস্ত মার্সিডিজ গাড়িটিতে তিন জন ছিলেন। এক যুবক ও তাঁর সঙ্গী দুই তরুণী। পুলিশ জেনেছে, গাড়িটি ওই যুবকের। তবে তা সঙ্গী তরুণীদের এক জন চালাচ্ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ঠিক কী কারণে গাড়িটি ওই রাতে পণ্ডিতিয়ার আবাসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তকারীদের অনুমান, আরোহী দুই তরুণী ওই আবাসনেরই বাসিন্দা। রাতে ওই যুবক তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। তবে কে কখন গাড়িটি নিয়ে ঢুকলেন, কখনই বা কারা বেরোলেন, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্যই আবাসনের রেজিস্টার খাতা থেকে পাওয়া যায়নি। কারণ রবিবার ভাঙচুর চলাকালীন ছিঁড়ে গিয়েছে সেই খাতা।

শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ হাজরা রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে মার্সিডিজটির ধাক্কায় একটি স্কুটির চালক-সহ তিন জন ছিটকে পড়েন। পরে তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ পাণ্ডে (২৪) নামে এক যুবক মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে গাড়িটি ফেলে চম্পট দেন চালক ও আরোহীরা। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটির ভিতরে পণ্ডিতিয়ার ওই আবাসনের নাম লেখা একটি কাগজ পেয়ে জনা দশেক যুবক রবিবার সকালে ওই আবাসনে হাজির হয়। এর কিছু পরে শ’দেড়েক যুবক এসে হামলা শুরু করে আবাসনে। ভাঙচুর হয় আবাসনের ৭৪টি গাড়ি।

দুর্ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত যুবকের মোবাইল বন্ধ বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কোনও সিসিটিভি না থাকায় তদন্তে অসুবিধে হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, মোবাইলের সূত্রে জানার চেষ্টা চলছে, ঘটনার সময় ওই যুবকদের অবস্থান ঠিক কোন জায়গায় ছিল।

গাড়িটির নথি নিয়ে খোঁজ-খবর করতে গিয়ে পুলিশ জেনেছে, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি গাড়িটির রেজিষ্ট্রেশন হয়েছিল। পুলিশের দাবি, গাড়িটি কেনা হয়েছিল নোনাপুকুরের এক বেসরকারি সংস্থার নামে। সূত্রের খবর, মার্সিডিজ গাড়িটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রায় ১১টি মামলা বকেয়া রয়েছে। যার বেশির ভাগই দায়ের করা হয়েছে আইন না মেনে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে। ট্রাফিক সিগন্যাল না মানার অভিযোগও রয়েছে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত শেষ মামলাটি গত মাসে হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

লালবাজার সূত্রের খবর, গাড়িটির মালিকানা যে সংস্থার নামে, রবিবার দুপুরেই তাদের দফতরে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু দফতর বন্ধ ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, সোমবার আরও দু’বার নোনাপুকুরের ওই অফিসে হানা দিলেও তালাবন্ধ থাকায় তাঁদের সেখান থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, সংস্থার মালিকের নাম-ঠিকানা জানা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, গাড়িটি তাঁরই। গরচা পাড়ায় মালিকের বাড়িতেও পৌঁছে যায় পুলিশ।

এ দিন গরচা রোডের ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, উঁচু পাঁচিল-ঘেরা প্রাসাদোপম বাংলো বাড়ির সদরে কাঠের ফটক বন্ধ। উঁচু ওই গেটের ভিতর দিক থেকে তালা দেওয়া রয়েছে। ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া মিলছে না। অনেক ক্ষণ পরে এক জন নিরাপত্তা রক্ষীর দেখা মিললেও, তিনি কোনও কথা বলেননি। পাশের একটি উঁচু বাড়ির ছাদে উঠলে নজরে আসে, বাড়ির চত্বরে ছ়ড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি। তবে মালিক, চালক বা আরোহী— কারও কোনও খোঁজই মেলেনি ওই এলাকা থেকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার গভীর রাতে ঘটনার অব্যবহিত পরেই মামলা রুজু হয়েছিল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারায়, অর্থাৎ গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সোমবার আলিপুর আদালতে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ ওই মামলা পাল্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজুর আবেদন জানিয়েছিল আদালতে। তা গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ৩০৪-এ-র চেয়ে ৩০৪ অপেক্ষাকৃত গুরুতর মামলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hit and Run Panditiya Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE