বুধবারের ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ। বালিগঞ্জে। — নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শহরের রাস্তার পাশে কোনও ‘দুর্বল’ গাছ থাকবে না। বুধবার রাতে মাত্র কয়েক মিনিটের ঝড়ে ফুটপাথের বহু গাছ উপড়ে যায়। গাছ ও পাঁচিল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় চার জনের। তার পরেই শহরবাসীর সুরক্ষার কথা ভেবে পুর-প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ পালনে পুরসভা উদ্যোগীও হয়েছে। কিন্তু বাদ সাধছে পরিকাঠামো এবং আর্থিক হাল। পুরসভার অফিসারদের হিসেবে শহরে কত গাছ রয়েছে এবং তার মধ্যে কোনগুলি দুর্বল বা অশক্ত তা চিহ্নিত করতে অনেক লোকবলের প্রয়োজন। দরকার উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞেরও। তাই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ কার্যকর করতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুরকর্তাদের। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, ঝড়-ঝাপটায় উল্টে গিয়ে মানুষের জীবনহানি ঘটাতে পারে এমন কোনও অশক্ত গাছ রাখা হবে না। কেটে ফেলা হবে। এ বিষয়ে পুরসভা এবং বন দফতরের লোকেদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গড়া হবে। খুব শীঘ্রই সেই কাজ শুরু হবে বলে শুক্রবার জানান শোভনবাবু।
দিন কয়েক আগের ওই ঝড়ে লন্ডভন্ড হয় কলকাতা ও শহরতলি। শহরের একাধিক জায়গায় রাস্তার পাশে থাকা গোটা ষাটেক গাছ উপড়ে যায়। কোথাও পাঁচিলের উপরে, কোথাও রাস্তায় থাকা গাড়ির উপরে আছড়ে পড়ে গাছ। ওই রাতের ঝড়ের বিভীষিকা এবং তাতে রাস্তার গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হন মুখ্যমন্ত্রীও। এর পরই শহরের কোথায় কোথায় দুর্বল গাছ রয়েছে, সেগুলির হাল কেমন তা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। ভবিষ্যতে যাতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে দিকে নজর দিতেও বলেছেন মমতা মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ইতিমধ্যেই পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপের কথা জানান মেয়র। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘শহরের কোন কোন রাস্তায় অশক্ত, গোড়া দুর্বল গাছ রয়েছে তা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে উদ্যান দফতরকে। বন দফতরও তাদের সহায়তা করবে।’’ গাছ চিহ্নিত হয়ে গেলেই তা কাটা হবে বলে জানান মেয়র।
এখন প্রশ্ন উঠছে, শহরে কত গাছ রয়েছে তার কোনও হিসেব নেই পুরসভায়। উদ্যান দফতরের এক অফিসারের কথায়, কোন গাছের গোড়া অশক্ত তা খুঁজে বের করার মতো পরিকাঠামো এবং লোকবলও পুরসভার নেই। এর সঙ্গে প্রচুর অর্থেরও দরকার। পুরকর্তারা যদি সেই কাজ করতে বলেন তা হলে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। কারা গাছ-সুমারির কাজ করবেন তা ঠিক করতে হবে। আর গাছ চোখে দেখেই বলা যায় না, তা কতটা দুর্বল। তার জন্য দরকার গাছ বিশেষজ্ঞের।
পুরসভার এক আমলার কথায়, ‘‘যাঁরা উদ্যান দফতরের মাথায় রয়েছেন, তাঁরা মূলত ইঞ্জিনিয়ার। গাছ চেনা এবং তা কতটা অশক্ত এসব জানার জন্য উদ্ভিদবিদ্যায় পারদর্শী হওয়া দরকার।’’ পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, ওই দফতর নানা জাতের বড় বড় গাছের চারা তৈরি করে। শহর জুড়ে তা লাগানো হয়। ২০১১ সালের আগে পুরসভায় কোনও উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। বর্তমানে ১০টি বরোতে এক জন করে উদ্ভিদবিদ (ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে) রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতে যে পরিকাঠামো আরও বাড়ানো প্রয়োজন তা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তারা।
দেবাশিসবাবু জানান, শহরের কিছু জায়গায় অশক্ত, গোড়া দুর্বল ও নুইয়ে পড়া গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকেই সেগুলি কাটা হবে। তবে পুরো শহরের কোথায়, কত গাছ রয়েছে এবং এর মধ্যে কতগুলি দুর্বল তা গণনার কাজ করতে বলেছেন মেয়র। এ ব্যাপারে পুরসভা এবং বন দফতর একসঙ্গে বসে আলোচনা করবে। কাজটা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হলেও কলকাতার মতো শহরে তা জরুরি বলে মনে করেন মেয়র পারিষদও। তিনি জানান, যতগুলো গাছ কাটা হবে সম সংখ্যক গাছ শহরের অন্য কোথাও লাগানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy