প্রতীকী ছবি।
নেট ভুবনে যেন ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে জালিয়াতির ফাঁদ! শুধু ডেটিং, চ্যাটিং বা লটারি নয়, এ বার অপরাধীরা জাল বিছোচ্ছে ব্যাঙ্কের হেল্পলাইনের নাম করেও। সম্প্রতি তেমনই এক ফাঁদে পা দিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খুইয়েছেন কলকাতার এক মহিলা।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৭ নভেম্বর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা মাসুম আগরওয়াল একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধের সময় জানতে ইন্টারনেট থেকে খুঁজে একটি মোবাইল নম্বর পান। সেখানে ফোন করলে এক ব্যক্তি ফোন তোলে এবং নিজেকে ওই ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দেয়। অভিযোগ, এর পরে কথার জালে ভুলিয়ে মাসুমের ব্যক্তিগত এবং ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য হাতিয়ে নেয় সে। সেই তথ্য ব্যবহার করে মাসুমের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ঘটনাটি নিয়ে বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরু হলেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই মোবাইল নম্বরটি আদৌ ব্যাঙ্কের হেল্পলাইন নম্বর নয়। সেটি এক ব্যাঙ্ক জালিয়াতের নম্বর। ফোনে ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে জালিয়াতি নতুন নয়। লালবাজারের খবর, এই কৌশলের মূল চাঁইরা ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার বাসিন্দা। তারাই এই অপরাধের শুরু করেছিল। তাই পুলিশের খাতায়, ওই চক্রের নাম জামতাড়া গ্যাং। ওই ফোন নম্বরে যে ভঙ্গিতে অভিযুক্ত কথা বলেছে তাতে সে জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্য বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করার ঘটনা বাজারে বহুচর্চিত। ফলে অনেকেই সতর্ক হয়েছেন। তাই নেট দুনিয়ায় নতুন ভাবে জাল বিছানোর ছক কষেছে অপরাধীরা। তদন্তকারীদের একাংশ এ-ও বলছেন, আধার কার্ড নিয়ে হুড়োহুড়ির সময়ে কিন্তু শহরে এমন ছক নজরে এসেছিল। ইন্টারনেট ঘেঁটে আধার কার্ড ‘আপডেট’ করানোর নম্বর খুঁজতে গিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার এক কর্তা। সেই ফাঁকে তাঁরও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ঝা়ড়খণ্ড থেকে দু’জনকে পাকড়াও করেছিল পুলিশ।
স্মার্টফোনের যুগে এখন অনেকেই ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন তথ্য সন্ধান করেন। সেই তথ্যের ভাঁড়ারে এমন জালিয়াতির ফাঁদ পাতা থাকলে বিপদের আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এই ফাঁদ এড়ানোর উপায় নেই? পুলিশকর্তাদের মতে, এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে গ্রাহকের সচেতনতা জরুরি। প্রত্যেক ব্যাঙ্ক তার হেল্পলাইন নম্বর দেয়। সেই টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করেই তথ্য অনুসন্ধান করা উচিত। ব্যাঙ্ক কখনও গ্রাহকের তথ্য জানতে চায় না, এই কথাও মাথায় রাখা উচিত।
পুলিশ কি নেট দুনিয়ায় নজরদারি করে এই ফাঁদ রুখতে পারে না? আধিকারিকদের বক্তব্য, নেট দুনিয়ায় এমন অনেক নম্বর ছড়ানো থাকে। নজরদারি থাকলেও কোনও অপরাধ না ঘটা পর্যন্ত নির্দিষ্ট আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে নজরে এলে তথ্যপ্রযুক্তি বিধির মাধ্যমে নম্বরটি যাচাই করা হয় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হয়।
এ ধরনের ভুয়ো নম্বর নিয়ে সচেতনতার প্রচারও চলে। কিন্তু গ্রাহক যদি নিজে সচেতন না হয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ নথি কিছু না ভেবেই অপরিচিত কারও হাতে তুলে দেন, তবে এই ধরনের অপরাধ পুলিশের পক্ষে একার পক্ষে ঠেকানো অসম্ভব, বলছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy