পঞ্চসায়রের হোম পরিদর্শনে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ ধারা দিয়েছে গণধর্ষণের। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁদেরও ‘মনে হচ্ছে’ পঞ্চসায়রের সেই হোমের বাসিন্দা গণধর্ষিতাই হয়েছেন। কিন্তু রাজ্য মহিলা কমিশনের দাবি, ঘটনাটি আদৌ ধর্ষণ কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই মতান্তরকে আমল না দিয়ে শুক্রবার লালবাজারে গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘কে, কী বলছেন, বলতে পারব না। আমি বলব, তদন্ত চলছে। এখন কিছুই বলা হবে না।’’
তা হলে রাজ্য মহিলা কমিশন কীসের ভিত্তিতে দাবি করছে যে, এটি ধর্ষণ নয়? এ প্রশ্নের উত্তরে গোয়েন্দা-প্রধান বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের তরফে কোনও রিপোর্ট রাজ্য কেন, কোনও কমিশনের কাছেই দেওয়া হয়নি।’’ তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে সারা শহরের কমপক্ষে ১০০-র বেশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাড়িও চিহ্নিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনার পুনর্নির্মাণও হয়েছে।’’
পঞ্চসায়রের ঘটনার তদন্তে এ দিন দুপুরে কলকাতায় আসে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদল। বৃদ্ধাবাসের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি মালিক হরেকিশোর মণ্ডলের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। অভিযোগকারিণীর সঙ্গে কথা বলার পরে দলের প্রধান চন্দ্রমুখী দেবী বলেন, ‘‘মহিলা প্রবল আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনার রাতে কী কী হয়েছে, তিনি সব খুলে বলেছেন। দিল্লি ফিরে গিয়ে দফতরকে রিপোর্ট দেব। এটা বলতে পারি যে, কলকাতার পরিস্থিতি খুব খারাপ। রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এমন ঘটনা হয়েছে জেনে আরও চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি। পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরেও এখানে কিছুই বদলায়নি।’’
গত সোমবার রাতে পঞ্চসায়রের একটি বৃদ্ধাবাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ঊনচল্লিশ বছরের ওই মহিলা। এর পরে চার দিন কেটে গেলেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার মায়ের। মহিলা যে বৃদ্ধাবাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ, বৃদ্ধা সেখানেই ছিলেন। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মহিলা ও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, যে গাড়িটিতে মহিলাকে তোলা হয়েছিল, তাতে এক জনই ছিল। সেই গাড়ির চালকই তাঁকে নরেন্দ্রপুরের কাটিপোতায় নিয়ে যায়। পথে চালকই মেয়েটির যৌন হেনস্থা করে। মেয়েটি হয়তো বাধা দিতে গিয়েছিলেন বা ওঁর ব্যথা লাগছিল। গালে, কপালে এবং হাঁটুতে রক্ত ছিল। এর বেশি কিছু হয়েছে বলে তো ওঁকে দেখে মনে হল না।’’
চন্দ্রমুখী এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশের নাকের ডগায় ২২ বছর ধরে এ ভাবে এখানে হোম চলছে! পুলিশ জানে না? দিল্লি ফিরে এই হোম নিয়ে আলাদা করে রিপোর্ট দেব।’’ এই প্রসঙ্গে গোয়েন্দা-প্রধান এ দিন বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে কোনও হোম চলছে কি না, তা দেখার অধিকার পুলিশের নেই। সেটা দেখার কথা রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের। একমাত্র অভিযোগ পেলে তবেই পুলিশ হোমের ভিতরে ঢুকতে পারে।’’ সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব বিনোদ কুমারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ত আছি। যা বলার পরে বলব।’’ এই ঘটনা প্রসঙ্গে শুক্রবার বারাসতে সিপিএম নেত্রী তথা পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট বলেন, ‘‘এই রাজ্যে অপরাধীরা তৃণমূলের সঙ্গে থাকে। তাই ধর্ষকেরা পার পেয়ে যায়। ধর্ষিতারা বিচার পান না। মুখ্যমন্ত্রী সব সময়ে অপরাধীদের পক্ষে দাঁড়ান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy