Advertisement
E-Paper

বিজ্ঞাপনে ঢাকা জানলা, তাতেই ছড়ায় আতঙ্ক

মেট্রোর বাতানুকূল কামরায় আচমকা ঢুকে পড়া ধোঁয়া না কি অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ট্রেন থেকে বাইরে কিছু দেখতে না পাওয়া— কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন, তা নির্দিষ্ট করে জানার চেষ্টা করছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি মহম্মদ লতিফ খানের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৪
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোর সেই রেকের জানলা ঢাকা বিজ্ঞাপনে। নিজস্ব চিত্র

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোর সেই রেকের জানলা ঢাকা বিজ্ঞাপনে। নিজস্ব চিত্র

মেট্রোর বাতানুকূল কামরায় আচমকা ঢুকে পড়া ধোঁয়া না কি অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ট্রেন থেকে বাইরে কিছু দেখতে না পাওয়া— কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন, তা নির্দিষ্ট করে জানার চেষ্টা করছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি মহম্মদ লতিফ খানের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল। গত বৃহস্পতিবার ময়দানে অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় যাত্রীদের আতঙ্ক কেন সামাল দেওয়া গেল না, মেট্রোর কর্মী এবং আধিকারিকদের কাছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারী দলের আধিকারিকেরা। এমনকি ঘটনার পরে যাত্রীরা মেট্রোর উদ্ধারকারী দলের ভরসায় না থেকে কেন নিজেরাই মরিয়া হয়ে বেরিয়ে আসতে তৎপর হলেন, তারও জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

ওই দিন ময়দান স্টেশনে বিভিন্ন দায়িত্বে যে ৩২ জন কর্মী ছিলেন, সোমবার তাঁদের পার্ক স্ট্রিটে মেট্রো ভবনে তলব করা হয়েছিল। অগ্নিদগ্ধ রেকটি ছাড়াও তার আগের এবং পরের মেট্রোর চালক এবং মোটরম্যানকে তদন্তের স্বার্থে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এ দিন থেকেই প্রত্যেকের বক্তব্য নথিভুক্ত করার কাজ শুরু করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। মেট্রোকর্মীদের মুখোমুখি হওয়ার আগে দু’জন ভুক্তভোগী যাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন তদন্তকারীরা। মেট্রোর কামরায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে যাত্রীদের আশ্বস্ত করতে সুনির্দিষ্ট ভাবে কী করা হয়েছিল, তা জানতে চেয়েছেন তাঁরা। কারণ, ট্রেন মাঝপথে থামাতে বাধ্য হওয়ার জন্য ঘন ঘন প্যাসেঞ্জার অ্যালার্ম বেজে ওঠাকেই দায়ী করছেন মেট্রোর মোটরম্যান এবং চালকের ঘনিষ্ঠেরা।

মেট্রো আধিকারিকদের একাংশের মতে, অন্ধকার সুড়ঙ্গে যাত্রীদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছিল প্রধানত দু’টি জিনিস। প্রথমত, এসি কামরার জানলা জোড়া বিজ্ঞাপন এবং দ্বিতীয়ত, কোচের ভিতরে বা বাইরে আলো না থাকা। এই দুইয়ের কারণে বাইরের দৃশ্যমানতা প্রায় কিছুই ছিল না বলে তাঁদের অভিযোগ। আধিকারিকেরা মনে করছেন, ওই অবস্থায় সহযাত্রীর শোনা কথার ভিত্তিতে আতঙ্ক আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মেট্রোকর্মীদের একাংশ এমনও অভিযোগ করছেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এসি-১ মেট্রোর কামরার সবক’টি জানলার দু’পাশ একটি প্রসাধনী সংস্থার বিজ্ঞাপনে আপাদমস্তক মোড়া ছিল।

কিন্ত কেন এ ভাবে এসি মেট্রোর কামরা বিজ্ঞাপনী ফ্লেক্সে মুড়ে ফেলতে তৎপর হলেন কর্তৃপক্ষ? মেট্রো সূত্রের খবর, যাত্রী-ভাড়া বহির্ভূত খাতে আয় বাড়াতে প্রতি বছর রেলবোর্ডের তরফে মেট্রোকে একটি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। অভিযোগ, সেই লক্ষ্য পূরণে মরিয়া মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন খাতে আয় বাড়াতে সম্প্রতি উঠেপড়ে লেগেছেন। যাত্রী-সুরক্ষার সঙ্গে আপস করে একাধিক এসি মেট্রোর রেক জানলা সমেত বিজ্ঞাপনী ফ্লেক্সে মুড়ে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে জানলার ভিতরের দিকের কাচেও লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপন।

ওই বিজ্ঞাপনী ফ্লেক্স জানলায় লাগানো থাকলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কামরার ভিতরে কী ঘটছে, তা বাইরে থেকে কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। অগ্নিদগ্ধ মেট্রোয় ওই ফ্লেক্স বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে বলেই মনে করছেন মেট্রোর আধিকারিকদের একাংশ। সম্প্রতি রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ কয়েকটি ট্রেনে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই ফ্লেক্স বসানো হয়েছিল। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পরে তা খুলে ফেলা হয়। সরকারি পরিবহণ নিগমের বাসেও ওই ফ্লেক্স বসানোর পরে আপত্তি ওঠায় সেগুলি খুলে ফেলা হয়েছিল।

কিন্তু তার পরেও মেট্রোর আধিকারিকরা কী ভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে বৃহস্পতিবারের ঘটনা। এ প্রসঙ্গে মেট্রোর এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনী খাতে আয় বাড়াতে গিয়ে যাত্রী-সুরক্ষায় ঢিল দেওয়া একেবারেই কাম্য নয়।’’ মেট্রোর বর্তমান আধিকারিকদের থেকে অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যানি। বিষয়টি তদন্তাধীন বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা।

Fire Kolkata Metro Investigation Advertisement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy