Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Education

কৃতী ছেলেকে পড়াবেন কী ভাবে, চিন্তায় মা-বাবা

এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০-র মধ্যের ৪৬৬ নম্বর পেয়েছেন ঋতম মণ্ডল নামে দেগঙ্গার দরিদ্র পরিবারের সেই ছাত্র। কৃষিবিজ্ঞানী হতে চান তিনি।

সফল: বাবা-মায়ের সঙ্গে ঋতম। নিজস্ব চিত্র

সফল: বাবা-মায়ের সঙ্গে ঋতম। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০১:৫৪
Share: Save:

বিভিন্ন এটিএম বা আবাসনের অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে সাত-আট হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকরি করতেন তিনি। ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েক মাস আগে সেই কাজও চলে যায়। তার পরে কার্যত ঘরে বসে ছিলেন গোটা লকডাউনে।

ছেলে অবশ্য স্কুলের ফার্স্ট বয়। তাই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন এক শিক্ষক। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০-র মধ্যের ৪৬৬ নম্বর পেয়েছেন ঋতম মণ্ডল নামে দেগঙ্গার দরিদ্র পরিবারের সেই ছাত্র। কৃষিবিজ্ঞানী হতে চান তিনি।

শুক্রবার পরীক্ষার ফল বেরোনোর পর থেকেই ঋতমের পড়াশোনার খরচ কী ভাবে জোগাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে বাবা-মায়ের। দিন কয়েক হল, দমদমে অস্থায়ী প্রহরীর কাজ জুটিয়েছেন বাবা জয়দেব মণ্ডল। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে সেই কাজের জন্য দেগঙ্গা থেকে দমদম যাতায়াত করতে বিস্তর সমস্যা হচ্ছে।

শনিবার জয়দেববাবু বললেন, ‘‘আমার বেতন মাসে আট হাজার টাকা। চার দিকে যা অবস্থা, কাজের কোনও স্থায়িত্ব নেই। ছেলে আমাদের এবং ওর শিক্ষকদের স্বপ্নপূরণ করেছে ঠিকই, কিন্তু কী ভাবে ওর বিজ্ঞানী হওয়ার সাধ পূর্ণ হবে জানি না।’’

দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬২ জন ছাত্রছাত্রী এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ঋতমই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিদ্যায় ৯৭ করে পেয়েছেন ঋতম।

ঋতমের মতে, কৃষিই বাংলা তথা ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি। তিনি মনে করেন, করোনার মতো ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তিতে জৈব চাষ ছাড়া গতি নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কৃষি নিয়ে আলাদা করে পড়াশোনা করি। এ বিষয়ে গবেষণা করতে চাই। জানি না, কী করে করব।’’

এ দিন জয়দেববাবু জানান, তাঁর একমাত্র সন্তান ঋতমের উচ্চ মাধ্যমিকের পাঁচ মাসে আগে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগকারী সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে কাজ হারান তিনি। চরম আর্থিক সঙ্কটের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল ছেলের পড়াশোনাও। সেই সময়ে পাশে দাঁড়ান ঋতমের স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক প্রদীপ শাসমল। জয়দেববাবু বলেন, ‘‘টানা পাঁচ মাস ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন ওই শিক্ষক।’’

বেড়াচাঁপা স্কুলের ওই শিক্ষক প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘টাকার অভাবে ফার্স্ট বয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হবে, তা কি হয়! তাই আমি পাশে থেকেছি শুধু। সবটাই ওর কৃতিত্ব। আগামী দিনেও ওর পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’

ঋতমের মা পম্পা মণ্ডল বলেন, ‘‘ছেলের পড়াশোনার জন্য টাকা বাঁচাতে আমার স্বামী হেঁটে কাজে যেতেন। বাইরে এক পয়সাও খরচ করেন না। কিন্তু এখন ছেলের কলেজের পড়াশোনা চালানোর সামর্থ্য আমাদের একেবারেই নেই। কী করে ওর স্বপ্নপূরণ হবে, সেই চিন্তায় রাতে ঘুমোতেও পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Higher Secondary Exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE