Advertisement
E-Paper

রোগীর হাতে মার খেয়ে নার্স ভেন্টিলেশনে

আইসিসিইউ-য়ে চিকিৎসাধীন এক ডেঙ্গি রোগীর হামলায় ভেন্টিলেশনে চলে গেলেন এক নার্স। ওই রোগীর হামলায় আহত হয়েছেন আরও দুই নার্স। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়াহাট থানার গড়চা রোডের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ।

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৮

আইসিসিইউ-য়ে চিকিৎসাধীন এক ডেঙ্গি রোগীর হামলায় ভেন্টিলেশনে চলে গেলেন এক নার্স। ওই রোগীর হামলায় আহত হয়েছেন আরও দুই নার্স। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়াহাট থানার গড়চা রোডের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ।

ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, জখম তিন নার্সের মধ্যে এক জনের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও বাকি দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মল্লিক বাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এবং গড়চা রোডের বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম তিন নার্সের নাম শিপ্রা মণ্ডল, মার্গারেট মণ্ডল এবং ভিক্টোরিয়া। এঁদের মধ্যে মার্গারেটকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার আঘাতও গুরুতর।

ওই হাসপাতালের ম্যানেজার সুজয় গিরি জানান, ‘‘বুধবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত সুবীর সাহা (২৭) নামে এক যুবক হাওড়ার একটি হাসপাতাল থেকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে আইসিসিইউ-য়ে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ সেখানে চিৎকার চেঁচামেচির খবর পেয়ে আমরা গিয়ে দেখি, তিন জন নার্স রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন আরএমও।’’

রোগী সুবীর সাহা তখন কী করছিলেন? সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা গিয়ে দেখি স্যালাইনের স্ট্যান্ডের পাশে সুবীরবাবু রক্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। এর পরে আমরা আহত নার্সদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে সেই সুযোগে হাসপাতালের নীচে অপেক্ষমাণ পরিজনদের নিয়ে সোজা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান রোগী।’’ এর পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গড়িয়াহাট থানায় খবর দেন।

ওই রোগী হঠাৎ এ ভাবে মারধর শুরু করলেন কেন? সুজয়বাবু বলেন, ‘‘ওই আইসিসিইউ-র দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএমও-র সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, রাত তিনটে নাগাদও সুবীরবাবু জ্বর আসছে বলে ওষুধ চান। এর পরে রাত সাড়ে চারটে নাগাদ আচমকাই স্যালাইনের স্ট্যান্ড তুলে কর্তব্যরত নার্সদের মারধর করেন।’’ ডেঙ্গি রোগী কি এ ভাবে হঠাৎ হিংস্র হয়ে উঠতে পারেন? চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘ডেঙ্গির জীবাণুর প্রভাবে মস্তিষ্কে অক্সিজেন আচমকা কমে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া ডেঙ্গির জীবাণু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রও (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম) আক্রমণ করে। তার ফলেও রোগী হিংস্র হয়ে উঠতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা রোগীকে পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। প্রথমত, কোনও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন রোগী এ ভাবে বেরিয়ে যেতে পারেন না। হয় হাসপাতাল তাঁকে ডিসচার্জ করবে, নয়তো রোগী বন্ড দিয়ে চলে যাবেন। এ ক্ষেত্রে কোনওটাই হয়নি। দ্বিতীয়ত, সুবীরবাবু যে-সে রোগী নন। তাঁর বিরুদ্ধে তিন জন নার্সের উপরে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করার মতো অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের ম্যানেজারের বক্তব্য, ‘‘আমরা সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে সুবীর সাহার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। স্থানীয় থানার পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঘটনার তদন্ত করতে হাসপাতালেও আসেন।’’

হামলা চালিয়ে তিন নার্সকে আহত করা সুবীরবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করল না কেন? কেনই বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হল না সুবীরবাবুর সেই সব আত্মীয়কে, যাঁরা ভোরে রোগীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন? গড়িয়াহাট থানা সূত্রে বলা হয়েছে, রোগীর ওই আত্মীয়দের সঙ্গে সারা দিনে যোগাযোগই করে উঠতে পারেনি তারা। যদিও হাসপাতালে সুবীরের আত্মীয়দের নম্বর ছিল। এ দিন লালবাজারে কলকাতা পুলিশের ভারপ্তাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গও প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’ আর স্থানীয় থানার সাফাই, ‘‘ডেঙ্গি রোগীকে কি গ্রেফতার করা যায়? রাখব কোথায়?’’

পুলিশ সুবীরবাবুর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও আনন্দবাজার কিন্তু কথা বলেছে হাসপাতাল থেকে রোগীকে নিয়ে আসা এক আত্মীয় প্রদীপ সাহার সঙ্গে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘রোগী আইসিসিইউ-য়ে ভর্তি থাকায় আমরা নীচে অপেক্ষা করছিলাম। ভোরবেলা দেখি কয়েক জন ওঁকে (সুবীরবাবুকে) নীচে নামিয়ে আনছেন। শুনলাম ও কিছু গোলমাল করেছে। ওই সময়ে ওখানে থাকা কয়েক জন আমাদের রোগীকে অন্যত্র নিয়ে য়াওয়ার পরামর্শ দেন। আমাদের মাথার ঠিক ছিল না। আমরা ওকে নিয়ে চলে এসেছি।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুবীরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন শুনে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমরাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। ওরা আমাদের রোগীর কোনও চিকিৎসা করেনি।’’ যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ গড়চা রোডের ওই বেসরকারি হাসপাতাল। তাদের বক্তব্য, কারও ডেঙ্গি হলে যে পদ্ধতি মেনে রোগীর চিকিৎসা হয়, সুবীরবাবুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।

ventilation room nurse patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy