Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Illegal Parking In Kolkata

অবৈধ পার্কিং রাস্তা জুড়ে, অগ্নি-স্থলে যেতে হিমশিম দমকল

দমকল কেন্দ্রের এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘এমনও হয়েছে যে, আগুন লাগার ফোন পেয়ে দ্রুত গাড়ি বার করতে গিয়ে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। শেষে মানিকতলা থানা থেকে পুলিশ এসে রাস্তা সাফ করিয়ে দমকল নিয়ে গিয়েছে।’’

An image of road

বেআইনি: ক্যানাল ইস্ট রোডের এক ধার দখল করে পর পর দাঁড়িয়ে মালবাহী গাড়ি এবং লরি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৮
Share: Save:

দাউদাউ করে জ্বলছে মার্বেলের গুদাম। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পাশের কাঠের গুদামেও। অথচ তখনও পর্যন্ত একে একে দমকলের ১১টি ইঞ্জিন পৌঁছে গেলেও পুলিশ কিছুতেই সেগুলিকে আগুনের উৎসস্থল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারছে না। মিলছে না জরুরি সময়ে দমকলের গাড়ি ঘোরানোর মতো জায়গাও! ফলে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা দমকলকর্মীদের। মঙ্গলবার দুপুরে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মানিকতলা থানা এলাকার ক্যানাল ইস্ট রোডে।

অথচ এই রাস্তার উল্টো দিকেই খালপাড়ে রয়েছে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড দমকল কেন্দ্র। ঢিল ছোড়া সেই দূরত্ব থেকে গাড়ি এলেও কেন আগুন নেভাতে এত বেগ পেতে হল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ, দমকলকর্মী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় অংশ এ জন্য অভিযোগের আঙুল তুলছেন ওই এলাকার খালপাড়ের বেআইনি পার্কিংয়ের দিকে।

অভিযোগ, পর পর সেখানে এমন ভাবে লরি দাঁড় করানো ছিল যে, দ্রুত দমকলের গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরিস্থিতি সামাল দিতে এর জন্য এক সময়ে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড থেকে মুচিবাজারের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিতে হয় পুলিশকে। দমকলকে অগ্নিকাণ্ডের উৎসস্থল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে রীতিমতো লরিচালকদের আশপাশ থেকে ডেকে এনে, তাঁদের ঘুম ভাঙিয়ে সরাতে হয় লরিগুলি।

এর আগেও ওই এলাকার করবাগান, কবিরাজবাগান, শুঁড়ির বাগান এলাকায় একাধিক অগ্নিকাণ্ডের পরে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এমনকি, জরুরি সময়ে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড দমকল কেন্দ্র থেকে দমকলের গাড়ি ঢোকা-বার করানোর ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ।

ওই দমকল কেন্দ্রের এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘এমনও হয়েছে যে, আগুন লাগার ফোন পেয়ে দ্রুত গাড়ি বার করতে গিয়ে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। শেষে মানিকতলা থানা থেকে পুলিশ এসে রাস্তা সাফ করিয়ে দমকল নিয়ে গিয়েছে।’’ আর এক দমকলকর্মী বললেন, ‘‘সব চেয়ে সমস্যা হয় রাতের দিকে। এমন ভাবে পর পর লরি দাঁড় করানো থাকে, যে, দমকল কেন্দ্রের দরজা দিয়ে বড় ইঞ্জিন বার করাই যায় না।’’

খালের ধারের ক্যানাল ইস্ট এবং ক্যানাল ওয়েস্ট রোড একমুখী হিসাবে যান চলাচলের জন্য খোলা রাখে পুলিশ। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দ্রুত যাতায়াতের পথ হিসাবেও অনেকে এই রাস্তা ব্যবহার করেন। এ ছাড়া, ওই রাস্তাতেই রয়েছে কলকাতা স্টেশন।

এমনিতে ক্যানাল ইস্ট রোড ধরে আর জি কর হাসপাতাল থেকে মানিকতলার দিকে একমুখী গাড়ি যায়। উল্টো দিকের ক্যানাল ওয়েস্ট রোড ধরে মানিকতলার দিক থেকে আর জি করের দিকে গাড়ি আসে। ওই রাস্তাতেই খালের উপরে রয়েছে দু’টি যানবাহন পারাপারের জায়গা এবং একটি হেঁটে পার হওয়ার সেতু। যে মার্বেল কারখানায় আগুন লেগেছিল, তার কাছের সেতু দিয়েও অনেকে একমুখী রাস্তার নিয়ম ভেঙে কলকাতা স্টেশনের দিকে যান।

বুধবার ওই জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডের পরেও কারও হুঁশ ফেরেনি। দেদার চলছে একমুখী রাস্তার নিয়ম ভেঙে যাতায়াত। দু’পারেই সার দিয়ে দাঁড় করানো লরি ও গাড়ি। মানিকতলা থানার কাছেও জায়গা ফাঁকা নেই। সেখানেও পর পর লরি দাঁড়িয়ে। যে জায়গায় আগুন লেগেছিল, সেখানে পুলিশি নজরদারি বসানো হলেও বেআইনি লরির পার্কিং বন্ধ হয়নি।

দিন-রাতে কী করে এ ভাবে লরি এবং গাড়ি দাঁড় করানো থাকে? এলাকার পুর প্রতিনিধিদের কারও কাছেই কোনও উত্তর নেই। পুরসভার পার্কিং বিভাগ যদিও জানিয়েছে, কিছু বছর আগে ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে পার্কিংয়ের দরপত্র ডাকা হলেও যিনি নিয়েছিলেন, তিনি চালাতে পারেননি।

ওই সময়ে বরাত পাওয়া ব্যক্তির (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওই সময়ে পার্কিং আর চালাতে পারিনি। এলাকার নেতাদের কথায় জলের দরে লরি রাখতে দিতে হত। পরে আর টেন্ডারে অংশ নিইনি।’’ কোন নেতা? উত্তর মেলেনি। কলকাতা পুলিশের উপ-নগরপাল (ট্র্যাফিক) ইলওয়াড শ্রীকান্ত জগন্নাথ রাও বললেন, ‘‘ট্র্যাফিক গার্ডকে দ্রুত নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বেআইনি সব পার্কিং সরিয়ে ফেলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Parking Kolkata Fire Engine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE