পথের দাবি: ব্যানার হাতে প্রতিবাদ মিছিলে। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
অতিথিদেবো ভব!
নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ডাকা মিছিলে পা মেলাতে বৃহস্পতিবার যাঁরা পথে নেমেছিলেন, অতিথি হিসেবে তাঁদের রীতিমতো আপ্যায়ন করে বাড়ির দরজা খুলে দিলেন এ শহরের বহু মানুষ!
দুর্গাপুরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক-চিকিৎসক বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় জীবনে কোনও দিন মিছিলে হাঁটার প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বৃহস্পতিবার মিছিল হবে শুনে বুধবারই কলকাতায় আসবেন বলে ঠিক করেন তিনি। শীতের ছুটি চলায় বাড়িতেই ছিলেন তাঁর মেয়ে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মৃত্তিকা। বাবার সঙ্গে তিনিও আসতে চান মিছিলে হাঁটতে। কিন্তু কলকাতায় উঠবেন কোথায়? মাথায় আসে পরিচিত এক চিকিৎসকের কথা। কিন্তু কোনও দিন তাঁর বাড়িতে থাকেননি। তবু ভরসা করে তাঁকে বিষয়টি বলতেই সেই চিকিৎসক সোজা বাড়িতে আসতে বলেন তাঁদের। সেই মতো বুধবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় এসে সোজা নিউ আলিপুরে চিকিৎসক বিপিন প্রসাদের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন বিশ্বরূপবাবু ও মৃত্তিকা।
বিশ্বরূপবাবু বলেন, ‘‘মিছিলে হাঁটতে যাব বলে বিপিনের স্ত্রী সকালে ভরপেট খাবার খাইয়ে দেন। যাতে খালি পেটে হাঁটতে অসুবিধা না হয়!’’ বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও বিপিনবাবুর বাড়িতে থেকে দুর্গাপুরে ফিরবেন বিশ্বরূপবাবু। বিপিনবাবুর দাবি, ‘‘যদি অপরিচিত কেউ আসতেন, তা হলেও এই লড়াইয়ে আমার দরজা তাঁদের জন্য খোলা থাকত।’’
আরও পড়ুন: গুলি করে স্ত্রীকে খুনে দোষী সাব্যস্ত, সাজা ঘোষণা আজ
মিছিলে হাঁটবেন বলে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এসেছিলেন শাহরুখ খান। কলকাতায় পরিচিত কেউ নেই তাঁর। অত দূর থেকে এসে কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। ফেসবুকের ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট’ গ্রুপে সে কথা জানাতেই মিছিলের আয়োজক অরূপ মজুমদার নিজের নম্বর দেন এবং কলকাতায় এসে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। শাহরুখ সেই আশ্বাসেই বুধবার চলে আসেন শহরে। এন্টালির আনন্দ পালিতে তাঁর জন্য থাকার আয়োজন করেন অরূপ।
শুধু বিশ্বরূপবাবু বা শাহরুখই নন, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, শিলিগুড়ি, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত জায়গা থেকে আসা মানুষের জন্যও নিজেদের মতো করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন এই ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট’ গ্রুপের লোকজন। আর পুরোটাই করা হয়েছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগে। যাঁদের পক্ষে নিজেদের কাছে রাখা সম্ভব, তাঁরাই খুলে দিয়েছিলেন বাড়ির দরজা। অরূপ মজুমদার বলেন, ‘‘মালদহ থেকে আসা ১০ জনকে আমরা নিজেদের পরিচিতদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।’’ যদিও তিনি এই বিষয়টিকে নগণ্য বলেই দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: নবমীর রাতে মারধরে আহত যুবকের মৃত্যু
আবার কিছু মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট ও আনন্দ পালিতে কারও খালি বাড়িতে বা স্কুলে। সবটাই ওই গ্রুপের লোকজন ব্যক্তিগত ভাবে করেছেন। ক’দিন আগেই আবার ওই গ্রুপে ব্যক্তিগত ভাবে পোস্ট করেছিলেন দেবব্রত রায়। ফেসবুকে তিনি জানিয়েছিলেন, দূর থেকে আসা লোকজন বাড়ি ফিরতে না পারলে চিন্তা নেই। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে ২৫-৩০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু দরকার একটি চাদর আর একটি পরিচয়পত্র। মিছিলের জন্য এ ভাবে লোকজনের আতিথেয়তা এ শহর আগে কখনও দেখেছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy