রয়েছে ভূগর্ভস্থ পথ। তবুও মাটির উপরে ঝুঁকির পারাপার চলছেই! কাছেই ফুটব্রিজ। কিন্তু গাড়ির মধ্যে হাত দেখিয়ে রাস্তা পেরোতেই যেন স্বচ্ছন্দ পথচারীরা। ভূগর্ভস্থ পথ বা ফুটব্রিজ— নিরুপায় না হলে সে পথ মাড়ান না কেউ। বাগুইআটি থেকে টালিগঞ্জ, উল্টোডাঙা থেকে কসবা, সাবওয়ে-ফুটব্রিজ ব্যবহারের ছবিই বলে দিচ্ছে সে কথা। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।
• টালিগঞ্জ
টালিগঞ্জে যেমন ভূগর্ভস্থ পথের কদর নেই। মেট্রো স্টেশনের কাছে ওই পথ ক’জন ব্যবহার করেন, হিসেব নিলে সেটি তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। অথচ প্রশাসনের তরফে খামতি ছিল না। রাস্তা দিয়ে পারাপার বন্ধে রিজেন্ট পার্ক ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে সম্প্রতি টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের বাইরে ব্যানার টাঙানো হয়। তাতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড ধরার জন্য ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন এক জন করে পুলিশকর্মীকে দিয়ে মাইকে ঘোষণারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কেউ রাস্তার মাঝে চলে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে সাবওয়ে বা জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার করানোর জন্য একাধিক সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।
• ঢাকুরিয়া
ফুটব্রিজ সুনসান। অথচ ঢাকুরিয়ায় রাস্তা পারাপারের নামে যানবাহনের গতির সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন পথচারীরা। প্রবীণ থেকে নবীন, কে নেই সেই তালিকায়। সাইকেল নিয়ে রাস্তার মাঝে দৌড়চ্ছেন, দেখা গেল এমনও।
• বালিগ়ঞ্জ
মহিলার ডান হাতে ব্যাগ। বাঁ হাতে ধরেছেন শিশুকন্যার হাত। এই পরিস্থিতিতে ফুটব্রিজ ব্যবহারই শ্রেয়। কেন গাড়ির মধ্যে দিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন? ওই মহিলা বলেন, ‘‘তাড়া ছিল!’’ বাস, একাধিক ছোট গাড়ি ধেয়ে আসছে। তবুও রাস্তা দিয়েই যেতে হবে এক দল তরুণীকে। ফোন কানে রাস্তা পেরোতে দেখা গেল বহু পথচারীকে। আশপাশে রয়েছে একাধিক স্কুল। পড়ুয়াদের নিয়েই চলে অভিভাবকদের ঝুঁকির পারাপার।

ফুটব্রিজ থাকলেও গাড়ির সামনে দিয়েই রাস্তা পেরোচ্ছেন পথচারীরা। বালিগঞ্জে।
• শিয়ালদহ
আর একটু হলেই পায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল ট্যাক্সি। তবুও হুঁশ নেই উত্তর শহরতলি থেকে আসা এক দল যুবকের। ফুটব্রিজ কেন ব্যবহার করছেন না? প্রশ্ন শুনে এক যুবক বলেন, ‘‘সকলে তো এভাবেই রাস্তা পার হচ্ছেন!’’ রাস্তা পেরোতে দেখা গেল এক দম্পতিকে। স্বামীর কোলে মেয়ে। স্ত্রী নিয়েছেন ছেলেকে। সঙ্গে রয়েছে ব্যাগ। এর পরেও ফুটব্রিজ ব্রাত্য ওই দম্পতির কাছে। ফুটব্রিজ একেবারে যে সুনসান, তা নয়। গল্পের জন্য ফাঁকা ফুটব্রিজ বেছে নিয়েছেন বেশ কয়েক জন তরুণ-তরুণী।
• বাগুইআটি
তবে রাস্তা পারাপারে অন্য রকম চিত্র দেখা গেল বাগুইআটি সাবওয়েতে। সকলে নিয়ম মেনে ভূগর্ভস্থ পথ ধরে পেরোচ্ছেন ভিআইপি রোড। ভূগর্ভস্থ পথ থেকে বেরোলেই অটোস্ট্যান্ড। কেষ্টপুর, জোড়ামন্দির, রঘুনাথপুরেও রাস্তা পেরোতে ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহারে পথচারীরা বেশ আগ্রহী। সাফল্যের এই গল্পের নেপথ্যে অবশ্য রয়েছে বাধ্যবাধকতার গল্প। ভিআইপি রোডের ৮ কিলোমিটার রাস্তায় এখন পাঁচটি সাবওয়ে রয়েছে। ওই জায়গাগুলিতে রাস্তার মাঝখান দিয়েই পথচারীরা যাতায়াত করতেন। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পথ তৈরির পরে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে সেই রাস্তাগুলি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, তেঘরিয়ার সাবওয়ে তৈরির পরে সেখানেও রাস্তার উপর দিয়ে পথচারী যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহার হলে রাস্তায় যানবাহনের গতি অনেক মসৃণ থাকে বলে মত ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তাদের। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমে যায়।
বাধ্য করলে পথচারীরা যে ফুটব্রিজও ব্যবহার করেন, তার উদাহরণ হিসেবে উল্টোডাঙার কথা বলছেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের এক কর্তা বলেন, ‘‘মাঝের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার পরে ফুটব্রিজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে।’’ ওই ব্যস্ত মোড়ের কাছেই উল্টোডাঙা স্টেশন। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে যাওয়ার জন্যও অসংখ্য মানুষ ওই রাস্তা ব্যবহার করেন। তাও রাস্তা বন্ধ করে ফুটব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে হয় কেন? ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রবীণেরা সিঁড়ি ভেঙে ফুটব্রিজ ব্যবহার করতে চান না। চলমান সিঁড়ি থাকলে ফুটব্রিজের জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে। যদিও পুলিশের অন্য অংশের বক্তব্য, সময় বাঁচানোর অজুহাতে নিয়ম ভাঙেন অনেকেই। আইনের শাসনেই তাঁদের পথে আনতে হবে। কেএমডিএ-র এক কর্তা জানান, নিয়ম ভেঙে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা বন্ধ করতে হলে কড়া শাস্তি ছাড়া উপায় নেই। বাধ্য করেই আইন মানাতে হবে মানুষকে। ওই কর্তা আরও জানান, ফুটব্রিজের যা প্রস্তাব এখন আসছে, সবই চলমান সিঁড়ি-সহ। বেলেঘাটার কাদাপাড়ায় যে সাবওয়ে হচ্ছে তাতেও থাকছে চলমান সিঁড়ি।
ছবি: সুমন বল্লভ