দলাই লামার প্রিয় ‘তেনজি’ নামেই তাকে ডাকতেন ডোমা ওয়াং। আর শ্রাবণ মাসে খুঁজে পেয়ে প্রতাপ মণ্ডল ডাকছিলেন, ‘ভোলা, ভোলা’! মায়ার বাঁধনে তাঁকেও বশ করে ফেলতে সময় নেয়নি দুষ্টুমিষ্টি কালো-সাদা পাগ। গত কয়েক দিন ধরে নানা নাটকীয় ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু সেই মূর্তিমান।
তাকে হারিয়ে এক জনের ঘর অন্ধকার। আবার আর এক জনের ঘর তাকে পেয়েই আলো ঝলমল। শেষটায় অবশ্য ‘হারানো মা’ ডোমা ওয়াংয়ের কাছেই তেনজিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রতাপবাবু। কিন্তু ফুটে উঠেছে, শহরের এক ঘরহারা কুকুরছানাকে নিয়ে নাগরিক সংবেদনশীলতা, স্বার্থহীন ভালবাসারই চিত্রনাট্য। ছ’দিন বাদে তেনজিকে পেয়ে ডোমা আপ্লুত, “প্রতাপ ওকে যত্ন করে শ্যাম্পু করিয়েছেন, গায়ের চুল ছেঁটে দিয়েছেন। তেনজির একটু সর্দি হয়েছিল। ওষুধ দিয়ে সেটাও সারিয়েছেন।’’ ডোমার কথায়, “আমি তেনজির জন্য ২০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করি ফেসবুকে। কিন্তু প্রতাপ যা করেছেন, ওঁকে টাকা দিতে গেলে ছোট করা হত! পারলে ওর কাছেই পাগটাকে রেখে আসতাম। কিন্তু আমার ছোট মেয়ে পুচু তেনজিকে ছাড়া ঘুমোতেই পারে না!”
সল্টলেকের জিডি ব্লকের বাসিন্দা ডোমার বাড়িতে তেনজি রয়েছে বছর ছয়েক। তখন সবে জন্মেছে সে। গত সপ্তাহে ডোমারা তাঁর এক ভাইপোর অস্ত্রোপচার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বাড়ি ফিরে দেখেন, তেনজি নেই। সিসি ক্যামেরায় চোখে পড়ে, ওঁরা বেরোনোর সময়েই সে টুক করে পালিয়েছে। ডোমার কথায়, “তেনজি বরাবরই ছটফটে। কিন্তু বেচারি রাস্তা চিনে ফিরতে পারে না! এর আগেও দু’দিন খুঁজে পাইনি। সে বারও ফেসবুক পোস্ট দেখে এক প্রতিবেশী ফেরত দেন।’’ এ যাত্রা ফেসবুকে লিখে, সল্টলেকময় পোস্টার সেঁটেও হদিস মেলেনি। সেই সময়েই পেশায় রেস্তরাঁকর্ত্রী ডোমার পরিচিত এক মহিলা রঞ্জিতা শেঠ গুড়াপের কাছে একটি ধাবায় তেনজিংয়ের সূত্র পান। রঞ্জিতা শান্তিনিকেতন থেকে ফিরছিলেন। প্রতাপবাবুর সঙ্গে ধাবায় দেখা। মহিলার পুষ্যি গোল্ডেন রিট্রিভারটির বিষয়ে তাঁদের কথা হচ্ছিল। তখনই প্রতাপবাবু বলেন, পরিচিত এক রিকশাওয়ালার সূত্রে তাঁর পাগপ্রাপ্তির কথা। ডোমার ফেসবুক পোস্টটাও মনে পড়ে রঞ্জিতার।