শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্য খেলাধুলোর গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা অস্বীকার করেন না কেউই। কিন্তু এক দিকে মাঠের অভাব, অন্য দিকে ক্রমবর্ধমান পড়ার চাপ— দুইয়ে মিলে পড়ুয়াদের জীবন থেকে কার্যত হারিয়ে গিয়েছে খেলাধুলো। স্কুলগুলিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শারীরশিক্ষা ও খেলাধুলো বাধ্যতামূলক হলেও স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারাই মানছেন, তা চলে গিয়েছে পিছনের সারিতে। ছবিটা বদলাতে হাল ধরতে চাইছে দফতরই। যার শুরু হচ্ছে কলকাতা থেকে।
দফতরের এক কর্তা জানান, কাল, মঙ্গলবার কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশনের অফিসে ১৩০টি স্কুলের প্রধানদের মাধ্যমে সেই পথ চলা শুরু করতে চলেছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক কালে শুধু খেলার প্রয়োজনে এ ভাবে বৈঠক করেনি দফতর। সূত্রের খবর, প্রতিটি স্কুল যাতে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতি বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, বৈঠকে সেই বার্তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, শারীরশিক্ষার শিক্ষকদের দিয়ে অন্য বিষয়ের ক্লাস না করিয়ে শুধু শারীরচর্চার উপরেই জোর দিতে চাইছে দফতর। এমনকী রাজ্য ও জেলা স্তরের খেলাতেও যেন স্কুলগুলি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে, সেই বার্তাও দেওয়া হবে।
আরও খবর
ওয়াটার পোলোয় জিতে সোনার মেয়ে পূজা
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে কলকাতা ও জেলার স্কুলগুলিতে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ স্কুলে বিশেষত শহরের স্কুলগুলিতে মাঠের অভাব। আরও দেখা গিয়েছে, একাধিক শিক্ষকের কাছে পড়া এবং বহুমুখী পঠনপাঠনের ঠেলায় খেলার জন্য সময় পাচ্ছে না পড়ুয়ারা। স্কুল স্তরে পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলোয় সমান গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এত কিছুর পরেও অবস্থা খুব একটা পাল্টায়নি। তাই এ বার ধাপে ধাপে সব স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা।
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, আপাতত মধ্য কলকাতার ১৩০টি স্কুলের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হবে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে যাতে পড়ুয়াদের সারা বছর খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত রাখা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করার দায়িত্ব দেওয়া হবে তাঁদের। এ ছাড়া আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক করার কথাও ভাবছে দফতর। এক কর্তা বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মনের ও দক্ষতার ব্যাপ্তি ঘটাতে হলে পরিধি বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে জেলা বা ভিন্ জেলার স্কুলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা রাখতে হবে। নবম শ্রেণি থেকে শারীরশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা দরকার।’’
প্রতি বছর রাজ্য ও জেলা স্তরের খেলায় মুষ্টিমেয় পড়ুয়ারা ছাড়া কেউই অংশ নেয় না। এ বার থেকে স্কুলগুলি যাতে অংশ নেয়, তা-ও খেয়াল রাখতে বলা হবে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। তবে এর জন্য বেশি করে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন।’’