Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Kali Puja 2023

শহর যেন যুদ্ধক্ষেত্র! শব্দ-জব্দে ‘ডাহা ফেল’ পুলিশ

পুলিশ-প্রশাসনের সমস্ত নির্দেশ অমান্য করে তারস্বরে বাজল মাইক এবং সাউন্ড বক্স! প্রশ্ন উঠছে, ‘‘এই শব্দ-যন্ত্রণার দায় কে নেবে? আদালতেই বা কী ভাবে এর ব্যাখ্যা করা হবে?’’

Fire Crackers

বাইপাসের ধারে বহুতলের উপর থেকে ফাটানো হচ্ছে শেল। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৬
Share: Save:

বাজির পরীক্ষায় ডাহা ফেল করল পুলিশ! আশঙ্কা সত্যি করে কালীপুজোর রাত যত গড়াল, বাড়ল বাজির দাপট। যার বড় অংশই পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি নয়! এক সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, যে কানে তালা লাগার অবস্থা। বহুতলের ছাদ বা গলির নাগাল পাওয়া তো দূর, রাস্তায় আটকে থেকেই নাস্তানাবুদ হতে দেখা গেল পুলিশকে। বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে চালু হওয়া পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে বার বার ফোন করেও অনেকেই সাড়া পেলেন না বলেও দাবি করেছেন। অথচ ওই সময়ের মধ্যেই পরিবেশকর্মীদের সংগঠনের নিজস্ব টোল ফ্রি নম্বরে আসা অভিযোগের সংখ্যা সাতটি। পুলিশ-প্রশাসনের সমস্ত নির্দেশ অমান্য করে তারস্বরে বাজল মাইক এবং সাউন্ড বক্স! প্রশ্ন উঠছে, ‘‘এই শব্দ-যন্ত্রণার দায় কে নেবে? আদালতেই বা কী ভাবে এর ব্যাখ্যা করা হবে?’’ আজ, সোমবারও কি থাকবে এই পরিস্থিতি?

রাত আটটা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ ২২ জনকে আটক করেছে অভব্য আচরণের জন্য। অথচ নিষিদ্ধ শব্দবাজির ফাটানোর জন্য কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বা আদৌ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন কি না, সেই সংক্রান্ত তথ্যই দিতে পারেনি লালবাজার! ওই একই সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছেও মাত্র সাড়ে ন’কেজি। যা থেকে প্রশ্ন উঠছে, শব্দযন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সদিচ্ছা নিয়েই।

বিষবাষ্প: বাজির ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা, বাড়ছে দূষণ। রবিবার, সল্টলেকে।

বিষবাষ্প: বাজির ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা, বাড়ছে দূষণ। রবিবার, সল্টলেকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

অভিযোগ, বাজি এবং সাউন্ড বক্সের এই তাণ্ডব কালীপুজোর আগের দিন, শনিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছিল। সেই সময়েও দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। একাধিক জায়গায় রাতে বাজি ফাটানো নিয়ে থানায় অভিযোগ জানালেও সুরাহা মেলেনি বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। পরিবেশকর্মীদেরও অভিযোগ, তাঁদের হেল্পলাইন নম্বরে আসা অভিযোগ পুলিশকে জানানোর পরেও ক’টি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ ডাহা ফেল করেছে। শব্দবাজির দৌরাত্ম্য শুধুই জনস্বাস্থ্যে খারাপ প্রভাবই আনছে না, বরং আদালতের রায় অবমাননা করা হচ্ছে। আদালতেই এর উত্তর দিতে হবে।’’

একাধিক পরিকল্পনা সত্ত্বেও এ বারেও বহুতল আবাসন থেকে বাজি ফাটানো আটকাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে পুলিশকে। মধ্য কলকাতার একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বললেন, ‘‘মূল দরজায় তালা দিয়ে ছাদে উঠে দেদার বাজি ফাটানো হয়েছে। ব্যক্তিগত জায়গা বলে বহু ক্ষেত্রেই পুলিশকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বাজি ফাটানো আটকাতে একটি ছাদে ওঠার চেষ্টা শুরু করতেই অন্য ছাদে বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যায়।’’ পূর্ব-যাদবপুর থানার অন্য এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘এই এলাকায় প্রচুর আবাসন। অনেক বুঝিয়েও কাজ হয়নি। রুফটপ পার্টি বন্ধ করা গেলেও বাজি ফাটানো আটকানো যায়নি।’’ লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘কোন কোন আবাসনে এই দৌরাত্ম্য চলেছে, তার তালিকা চাওয়া হয়েছে। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

আদালতের ঠিক করে দেওয়া দু’ঘণ্টার (রাত ৮টা থেকে ১০টা) বদলে রবিবার পুজোর সকাল থেকেই বাজি ফাটানো শুরু হয় শহরের বিভিন্ন জায়গায়। বাজির জন্য কুখ্যাত এলাকা বলে পরিচিত কসবা, কাশীপুর, তপসিয়া ও বেলেঘাটায় সব থেকে বেশি নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ এসেছে। পাল্লা দিয়েছে হরিদেবপুর, ঠাকুরপুকুর, পর্ণশ্রী, তারাতলা ও কনভেন্ট রোডের মতো কিছু এলাকাও। বেহালা ও মানিকতলার মতো কয়েকটি থানার স্বল্প দূরত্বেই শোনা গিয়েছে শব্দবাজি এবং মাইকের তাণ্ডব।

জোড়াবাগান, শোভাবাজার, বাগবাজার, গিরিশ পার্ক, উল্টোডাঙা বা শিয়ালদহের বেশ কিছু এলাকায় শব্দবাজি এবং সাউন্ড বক্স, এই দুইয়ের উপরেই পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এক সময়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে নিজস্ব দল নিয়ে এলাকায় ঘোরা শুরু করেন কর্তব্যরত ডিসি-রা। অভিযানে নামেন রিজ়ার্ভ ফোর্সের ডিসি। ভাড়া নেওয়া অটোয় চড়ে চষে ফেলার চেষ্টা হয় অলিগলি। পুলিশের দাবি, এ বারও বৈধ আর নিষিদ্ধ বাজি চেনার ব্যাপারে প্রচুর ধোঁয়াশা ছিল। এর মধ্যে রাজ্য সরকার বাজির শব্দমাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি দিতেই এই কান ঝালাপালা পরিস্থিতি বলেও মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2023 Fire Crackers Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE