—প্রতীকী ছবি।
শব্দবাজি ঠেকাতে গিয়ে বাঁশপেটা খেল পুলিশ।
বিকট শব্দে ফেটেই চলছিল একটার পর একটা চকোলেট বোমা, আলু বোমা, দোদমা। থানায় অভিযোগও আসছিল অনবরত। শনিবার রাত তখন ১১টা। বাগুইআটির জগৎপুরে শব্দবাজি ফাটানো আটকাতে যায় রাস্তায় কর্তব্যরত টহলদার পুলিশ। কিন্তু উল্টে মার খেল পুলিশই। যারা শব্দবাজি ফাটাচ্ছিল, তারাই বাঁশ দিয়ে মারধর করল বাগুইআটি থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর এবং এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরকে। ঘটনায় অবশ্য ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, তাঁরা যে শব্দবাজি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মরিয়া ছিলেন, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। সেই সঙ্গে এক শ্রেণির মানুষ যে শব্দবাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে কোনও কিছুর তোয়াক্কা করেন না, ওই ঘটনা তারও প্রমাণ বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। বছর দশেক আগে কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি ঠেকাতে কৈখালির কাছে একটি আবাসনে ঢুকে মার খেয়েছিল পুলিশ। আবার দু’দশক আগে কালীপুজোর রাতে ব্যাপক শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছিল সল্টলেকে, হাইকোর্টের বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে। কারণ, তিনি শব্দবাজি তথা শব্দদূষণ ঠেকাতে রায় দিয়েছিলেন। সে বার পুলিশ ওই ঘটনায় ডজনখানেক লোককে গ্রেফতার করে।
কী ঘটেছিল শনিবার রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় জানা গিয়েছে, কালীপুজোর রাতে জগৎপুর ৭ নম্বর তালবাগান এলাকায় বড় রাস্তাতেই ফাটছিল চকলেট বোমা, দোদমা, শেলের মতো শব্দবাজি। উল্লাসে মাতোয়ারা একদল যুবক। ঠিক সেই সময়ে মোটর সাইকেলে চড়ে সেখানে হাজির হন টহলদারির ভারপ্রাপ্ত এসআই প্রশান্ত মাহাতো, এএসআই দুর্গা মাহালি। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে টহল দেওয়ার সময়ে বাজির অনবরত আওয়াজ পেয়েই তাঁরা ওই জায়গায় পৌঁছন। রাস্তায় চকোলেট বোমা ফাটানোর সময়ে কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরেন টহলদারির দায়িত্বে থাকা এসআই প্রশান্ত মাহাতো। প্রশান্তবাবুর সঙ্গে ছিলেন এএসআই দুর্গা মাহালি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে জড়ো হয় ৩০-৪০ জন, যাদের মধ্যে কয়েক জন মহিলা। নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর দায়ে পুলিশ ওই যুবকদের থানায় নিয়ে যেতে চাইলে শুরু হয়ে যায় বচসা। অভিযোগ, জনতা প্রথমে ওই দুই পুলিশ অফিসারকে ঘিরে ধরে নিগ্রহ করে, তার পরে রাস্তায় পড়ে থাকা বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারে। হামলাকারীদের মধ্যে অধিকাংশই মত্ত অবস্থায় ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। পরে খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে ওই দুই অফিসারকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় ছ’জনকে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রশান্তবাবুর ঘাড়ে ও হাতে চোট লেগেছে। দুর্গা মাহালির আঘাত পায়ে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, উন্মত্ত যুবকেরা প্রথমে এএসআই দুর্গা মাহালির উপরে বাঁশ নিয়ে চড়াও হয়। প্রশাসন্তবাবু তাঁকে বাঁচাতে গেলে হামলা হয় তাঁর উপরেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ধৃতদের নাম অভিষেক শর্মা, সৌরভ সাহা, গৌরাঙ্গ সাহা, অরুণাভ চক্রবর্তী, সুব্রত রায় এবং রাম নাথ। রবিবার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘বাগুইআটি থানার পুলিশ সক্রিয় ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে। গোটা কমিশনারেট এলাকার মধ্যে বাগুইআটি থানাই কালীপুজোর রাতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি আটক করেছে।’’ কিন্তু পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে এত কমিশনারেটে শব্দবাজি ঢুকল কী ভাবে? এ নিয়ে গোয়েন্দাপ্রধান কোনও মন্তব্য
করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy