দফায় দফায় কলকাতা থেকে বিস্ফোরক গিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জে। কিন্তু কাদের হাতে গিয়েছে, তা নিয়ে কার্যত অন্ধকারে পুলিশ। তবে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, রঘুনাথগঞ্জ থেকে ওই বিস্ফোরক রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছিল।
রবিবার বিকেলে জোড়াবাগান থানার স্ট্র্যান্ড রোডের একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার গুদামে তল্লাশি চালিয়ে ১১০০ কিলোগ্রামের বেশি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল সিআইডি ও মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা। তার মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, সালফার, অ্যালুমিনিয়াম গুঁড়োর মতো শক্তিশালী বোমা ও ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির মশলা।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরে আরও কোথাও ওই রকম বিস্ফোরক লুকনো আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে। সোমবারই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এবং গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার অফিসারেরা ভবানীভবনে যান এ বিষয়ে বিশদে তথ্য সংগ্রহ করতে। সেখানে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। ধৃতদেরও তাঁরা জেরা করবেন বলে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন। কলকাতা থেকে বিপুল পরিমাণ ওই বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাহিনীর একাংশ। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এই ধরনের অপরাধ দমনের জন্য এসটিএফ এবং গোয়েন্দাদের পৃথক বিভাগ থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা দিবসের আগে কী ভাবে এতটা বিস্ফোরক শহরে মজুত করা হয়েছিল। তবে কবে নাগাদ ওই বিস্ফোরক শহরে ঢুকেছিল, তা এ দিনও জানতে পারেননি গোয়েন্দারা। ওই গুদামে কতদিন ধরে বিস্ফোরক মজুত করা হয়, তা-ও জানা যায়নি।
সিআইডি সূত্রের খবর, ওড়িশার কটকের বাসিন্দা এক ব্যক্তি ওই বিস্ফোরকের মশলা কলকাতার ওই পরিবহণ সংস্থার অফিসে পাঠিয়েছিল বলে ধৃত পঙ্কজ গড়াই তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছিল। পঙ্কজ ওই সংস্থার ম্যানেজার ছিল। ওই সংস্থার মালিকও ওড়িশার বাসিন্দা বলে জেনেছে পুলিশ। তাঁর সন্ধান চলছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। পুলিশ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই উদ্ধার হওয়া বোমার মশলা মুশির্দাবাদে পাঠানোর কথা ছিল। সেই সঙ্গে ভবানীভবন সূত্রের খবর, এর আগে তিন-চার বার কলকাতার ওই গুদাম থেকে পঙ্কজ রঘুনাথগঞ্জে বিস্ফোরক পাঠায়। ট্রাকে করে ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে ওই বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়া হত।
৮ অগস্ট ওই রকম প্যাকেটে ভর্তি বিস্ফোরক মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ রফিকুল শেখ এবং আখতার শেখ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। তাদের কাছে মেলে ৮১ কেজি-র বেশি বোমা তৈরির মশলা। ওই দুই যুবককে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন শহরের ওই বিস্ফোরক ভর্তি গুদামের কথা। সেই মতো গত শুক্রবার পঙ্কজ গ্রেফতার হয়। তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। পঙ্কজই মূলত বিস্ফোরক পাঠানোর কাজ করত। সোমবার আখতার ও রফিকুলকে জঙ্গিপুর আদালতে পেশ করা হলে তাদের ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। সুতিতে ওই পরিবহণ সংস্থার একটি শাখা আছে। তার কর্মীদেরও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে পুলিশের দাবি, ওই বিস্ফোরক কাদের হাতে গিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গোয়েন্দাদের দাবি, আট তারিখ রফিকুল এবং আখতারকে গ্রেফতার করার সময়ে চার দুষ্কৃতী পালিয়ে যায় পুলিশের চোখ এড়িয়ে। ওই দুষ্কৃতীদের দায়িত্ব ছিল, রফিকুল এবং আখতারের কাছ থেকে বিস্ফোরক নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। তবে রফিকুলরাই যে পঙ্কজকে বিস্ফোরক সরবারহ করার নির্দেশ দিয়েছিল, তা পরিষ্কার তদন্তকারীদের কাছে। গোয়েন্দারা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক পাচার করত তারা। ওই সব জেলার বেশ কয়েক জনের নামও পেয়েছেন গোয়োন্দারা। প্রাথমিক ভাবে বিস্ফোরক উদ্ধারের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের যোগ থাকার কোনও প্রমাণ এখনও সিআইডি পায়নি বলে ভবানীভবন সূত্রের খবর।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, ধৃতদের জেরা করে বিস্ফোরক পাচারকারীদের খুঁজে বার করতে চাইছেন তাঁরা। কারণ ওই বিস্ফোরক দিয়ে শক্তিশালী বোমা বানানো সম্ভব। মশলার উৎস জানা গেলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy