Advertisement
E-Paper

হামলার ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকাও

সবাই জানে, আইন আছে। আর পুলিশ বলছে, সেই আইন প্রয়োগে জটিলতা রয়েছে। তাই হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বারবারই অভিযোগ উঠেছে পুলিশি গড়িমসির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৯
ভাঙচুরের পরে। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুরের পরে। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

সবাই জানে, আইন আছে। আর পুলিশ বলছে, সেই আইন প্রয়োগে জটিলতা রয়েছে। তাই হাসপাতালে হামলার ঘটনায় বারবারই অভিযোগ উঠেছে পুলিশি গড়িমসির। বুধবার সকালে সিএমআরআই হাসপাতালের তুমুল তাণ্ডব সেই আইন এবং আইনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশে ভূমিকাকেই ফের সামনে নিয়ে এল।

স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেয়ার সার্ভিস পার্সন অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইনস্টিটিউশনস (প্রিভেনশন অফ ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ টু প্রপার্টি) অ্যাক্ট’ লাগু হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, অভিযুক্তদের জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা যায়। দোষীদের তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যদিও চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, এই আইনের প্রয়োগ এত কম হয়, যে হামলাকারীদের মনে ভয় জন্মায় না। অভিযোগ, এ দিনও হাঙ্গামার সময়ে পুলিশ সে ভাবে কড়া দাওয়াই দেয়নি।

বস্তুত, হাসপাতালে হামলা আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০১৪ সালে ৩২টি দেশ থেকে চিকিৎসক ও হাসপাতালের উপরে হামলার ৩৭২টি ঘটনার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র কাছে নথিভুক্ত হয়েছিল। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হু অনলাইনে ‘থ্যাঙ্কস হেল্থ হিরো’ নামে একটি প্রচারও চালু করেছে। হাসপাতালে হামলা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে একটি আবেদন জানিয়েছে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)। তাদের একটি সমীক্ষা বলছে, দেশে ৭৫ শতাংশ চিকিৎসক কর্মক্ষেত্রে হামলার শিকার হয়েছেন।

লালবাজারের একাধিক সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে এসএসকেএম হাসপাতালে চেতলার এক যুবকের মৃত্যুর পরে হাঙ্গামা, জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। বছরখানেক আগে গড়িয়াহাট কানেক্টরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী-মৃত্যু নিয়ে ভাঙচুর করেছিল এক দল যুবক। তখনও তড়িঘড়ি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ।

এ দিন তা হলে হাঙ্গামার শুরুতেই পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিল না কেন?

পুলিশের একাংশের যুক্তি, সে সময়ে পুলিশ পাল্টা মারমুখী হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। এ দিন ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘মৃত কিশোরীর দেহ বিনা অশান্তিতে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়াটাই আমাদের প্রাথমিক কাজ। ভাঙচুরের তদন্তও পাশাপাশি চলবে।’’ পুলিশ এ-ও জানিয়েছে, এ দিনের ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির কোনও রকম অভিযোগ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমন লাগাতার হামলা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমজনতা চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন বলেও মনে করছেন অনেকে। আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি কৃষ্ণকুমার অগ্রবালের কথায়, ‘‘এমন চলতে থাকলে চিকিৎসকেরা জটিল কেস হাতে নেবেন কি না ভাববেন। সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও সঙ্কটাপন্ন রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তখন তো চিকিৎসককে মার খেতে হবে।’’

চিকিৎসকদেরই আর একটি অংশের মতে, ঠিক কী রোগ হয়েছে বা কী চিকিৎসা হচ্ছে, রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা কতটা— বহু সময়ই অনেক চিকিৎসক তা খোলাখুলি ভাবে বলেন না। রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও আকছার ওঠে। এ সব থেকেই তাঁদের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। রোগীর মৃত্যু হলে সেই ক্ষোভেরই প্রকাশ ঘটে।

Police Negligence Hospital attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy