Advertisement
E-Paper

পুলিশের তোলাবাজিতেই পাতা মরণফাঁদ

দাউ দাউ করে জ্বলছে টহলদারি পুলিশ গাড়ি। সোমবার সকালে লরির ধাক্কায় চার নাবালক পিষে গেলেও জনতার রোষানলের শিকার হয়েছে পুলিশের জিপ। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সাধারণত ঘাতক গাড়িকেই আক্রমণের প্রবণতা থাকে উত্তেজিত জনতার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশের গাড়ি কেন?

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২২
রাতের এক্সপ্রেসওয়েতে পুলিশের তোলাবাজি। — ফাইল চিত্র

রাতের এক্সপ্রেসওয়েতে পুলিশের তোলাবাজি। — ফাইল চিত্র

দাউ দাউ করে জ্বলছে টহলদারি পুলিশ গাড়ি। সোমবার সকালে লরির ধাক্কায় চার নাবালক পিষে গেলেও জনতার রোষানলের শিকার হয়েছে পুলিশের জিপ। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সাধারণত ঘাতক গাড়িকেই আক্রমণের প্রবণতা থাকে উত্তেজিত জনতার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশের গাড়ি কেন?

স্থানীয়দের অভিযোগে উঠে এল পুলিশের তোলাবাজির তথ্য। এ দিনও তোলা এড়াতেই লরিটি দ্রুত গতিতে পালাতে যায়, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। এমনিতেই এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি দ্রুত গতিতে চলাচল করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু এই রাস্তার ক্ষেত্রে তোলা আদায়ের জন্য বারবার পুলিশ ট্রাক-লরির মতো মালবাহী যে কোনও গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে বলেই অভিযোগ অধিকাংশ চালকের। আর সেই কারণেই কত তাড়াতাড়ি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ন’কিলোমিটার রাস্তা পেরোবেন, সেই চিন্তায় থাকেন তাঁরা। এ দিনও সিমেন্ট-বোঝাই লরিটি সেই ভাবে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্যেও এর অনেকটা সমর্থন মেলে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘যত দূর শুনেছি, পুলিশের একটি এসকর্ট জিপ সেই সময়ে দ্রুত গতিতে লরিটির পিছনে আসছিল। লরিচালক হয়তো ভেবেছিলেন, পুলিশ টাকা চাইতে আসছে। তাতেই লরিরও গতি বেড়ে যায়। যার ফলে এই দুর্ঘটনা।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, মালবাহী গাড়ি দেখলেই হাত তুলে থামায় পুলিশ। তার পরে ঘুষের জন্য হাত বাড়ানো। স্থানীয় সূত্রের খবর, এক বার লরির তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে পুলিশের জিপ উল্টে এক অফিসারের মৃত্যু হয়। আর এক বার পুলিশের গাড়ির তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে লরির চাকায় পিষ্ট হন এক পথচারী। বাসিন্দাদের মতে, একের পর এক পুলিশকর্তা-অফিসার-কর্মী বদল হয়, কিন্তু বদলায় না পুলিশের এই ‘চরিত্র’।

বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে পাঁচটি থানার (বরাহনগর, বেলঘরিয়া, নিমতা, দমদম ও এয়ারপোর্ট) অধীনে। তবে কোন থানা কখন, কোন জায়গায় টহল দিচ্ছে, তা বোঝা যায় না এখানে। কারণ রাস্তা জুড়ে মালবাহী গাড়ি দাঁড় করিয়ে ‘তোলা’ আদায়ে মানা হয় না কোনও থানার সীমানা। তাই পুলিশের তোলাবাজির নিরিখে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই এক্সপ্রেসওয়ে পরিণত হয়েছে ‘ভাগের মা’-এ।

এই ভাগাভাগিতেই অন্ধকারে থেকে যায় এক্সপ্রেসওয়ে জুড়ে চলা আরও নানা অপরাধ। যা কখনওই পুলিশের ‘নজরে’ পড়ে না। স্থানীয়দের কথায়, ‘‘বাইক রেস, ডাকাতি, ছিনতাই হলেও পুলিশ আসে অনেক পরে। অনেক সময়ে অপরাধ ঘটলেও পুলিশের দেখা মেলে না।’’ তবে সারা দিন গোটা এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় পুলিশের গাড়ি। যেমন থানার জিপ, তেমনই রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডও (আরএফএস)।

চালকদের অভিযোগ, এই রাস্তায় দু’ভাবে টাকা নেয় পুলিশ। একটা মাসোহারা ব্যবস্থা, অন্যটি রোজের তোলা আদায়। আছে বিভিন্ন রেট। যেমন, বালি, ইট, রড-সহ মালবাহী অন্যান্য ছোট গাড়ি প্রতি নেওয়া হয় ৫০ টাকা। বড় গাড়ি হলে ১০০ টাকা। একেবারে ছোট পণ্যবাহী গাড়ি থেকে ১০-২০ টাকা নিতেও কসুর করে না পুলিশ। সব থেকে বেশি আয় গরুবাহী লরি থেকে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ লরিতে রয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকার মাসোহারা। আছে ‘কাটাই’-এর ব্যবসাও। বিভিন্ন মালবাহী লরি থেকে কিছু অংশের মাল নামানো হয় রাস্তার ধারে। পরে চড়া দামে খোলা বাজারে বিক্রি করেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী।

অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ে জুড়ে অনেক চায়ের দোকান আদপে কাটাই ব্যবসার ঠেক। সেগুলি দিনে বন্ধ থাকে। খোলা থাকে সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত। আর সেই সব দোকানদারের সঙ্গে যোগসাজস করেই রাস্তার ধারে নামানো হয় মালপত্র। এর জন্য প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে ৫০০-১০০০ টাকা তোলা নেয় বিভিন্ন থানা। আর মালপত্র নামানোর সময়ে বাঁধা রেট ১০০ টাকা।

পুলিশ স্বাভাবিক ভাবেই কোনও দিন এ সব অভিযোগ মানে না। আজও মানেনি। ব্যারাকপুরের বর্তমান পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ যেমন দাবি করেন, ‘‘অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এ দিন টাকা চাওয়ার অভিযোগ পাইনি।’’

kolkata news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy