Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫

শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই আজ পুলিশের মাথাব্যথা

আইপিএস অফিসারটিকে জেলা থেকে নিয়ে এসে ডিসি (নর্থ) করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। সেটা জানুয়ারি মাসের কথা। তখন শাসক দল ও পুলিশ-প্রশাসনের একাং‌শ ভেবেছিল, উত্তর কলকাতায় শাসক দলের অবস্থা কিছুটা অসুবিধেজনক, এই অবস্থায় ওই অফিসারকে ভোটের আগে উত্তর কলকাতার ডিসি করে আনা অত্যন্ত জরুরি।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

আইপিএস অফিসারটিকে জেলা থেকে নিয়ে এসে ডিসি (নর্থ) করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। সেটা জানুয়ারি মাসের কথা। তখন শাসক দল ও পুলিশ-প্রশাসনের একাং‌শ ভেবেছিল, উত্তর কলকাতায় শাসক দলের অবস্থা কিছুটা অসুবিধেজনক, এই অবস্থায় ওই অফিসারকে ভোটের আগে উত্তর কলকাতার ডিসি করে আনা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, শাসক দল জুলুমবাজি করে ভোট করলেও পুলিশকে কী ভাবে নিষ্ক্রিয় রাখা যায়, সেই ব্যাপারে ওই অফিসারের বিশেষ ব্যুৎপত্তি আছে বলে পুলিশ মহলেই স্বীকৃত।

কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেই সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। লালবাজারের এক শীর্ষ অফিসার তখন বলেছিলেন, ‘‘বিরোধী বলে তো কিছু নেই। শাসক দল একতরফা জিতবে। তাই, শুধুশুধু ওকে আনার দরকার নেই। না হলে কলকাতা ও জেলা পুলিশে কয়েকটা রদবদল করতে হবে।’’
আর কলকাতা পুরভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে কলকাতা পুলিশের সেই শীর্ষ অফিসারই আবার বলছেন, ‘‘উত্তর কলকাতা সেই কাঁটা হয়েই থাকল। বিরোধী নেই বটে, কিন্তু শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বই তো আমাদের স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এরা তো নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে।’’ কাশীপুরে এরই মহড়া ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের বক্তব্য।
বস্তুত, শাসক দল-বিরোধীদের সমানে সমানে টক্কর নয়, শাসক দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষই আজ, শনিবার কলকাতার পুরভোটের দিন শহরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে লালবাজারের শিরঃপীড়ার প্রথম ও প্রধান কারণ।
কলকাতা পুলিশের হিসেবে, ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫-২০টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের অন্তর্কলহের জন্য আজ প্রবল অশান্তির আশঙ্কা। এর মধ্যে ২ নম্বর, ৩, ১০, ১৩, ১৭, ২৮, ৩২, ৬৫, ৮০ নম্বরের মতো ওয়ার্ডগুলিতে তৃণমূল-তৃণমূলে গণ্ডগোল ও সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা সব চেয়ে বেশি। এবং এই ওয়ার্ডগুলিতে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ লড়াই ইভিএমের ফল পর্যন্ত ওলট-পালট করে দিতে পারে বলে লালবাজারের মূল্যায়ন। আর সেই জন্যই পুলিশের আশঙ্কা, ভোটের দিন সংঘর্ষের আশঙ্কাও ওই সমস্ত ওয়ার্ডে বেশি। স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-র এক অফিসারের ব্যাখ্যা, ‘‘দলীয় প্রার্থী স্বভাবতই জিততে চাইবেন আর তাতে বাগড়া দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করবেন বিক্ষুব্ধরা। সংঘর্ষ তাই অবশ্যম্ভাবী।’’
শুক্রবার দুপুরে লালবাজারের এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘আমাদের হয়েছে যত জ্বালা। শাসক আর বিরোধী দু’দল মারামারি করলে স্বাভাবিক নিয়মে পুলিশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাসক দলেরই পক্ষ নেয়। কিন্তু শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হলে পুলিশ তো পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’’

তা হলে কার পক্ষ নেবে পুলিশ?

ওই অফিসারের কথায়, ‘‘প্রথমে আমরা খবর পাঠাব সেই নেতাকে, যাঁর কথা দু’টি গোষ্ঠীই মেনে চলে। কিন্তু যদি দেখা যায়, তাঁর হস্তক্ষেপে কাজ হল না, তখন আমরা দলীয় প্রার্থীর লোকজনকেই সুযোগ করে দেব। কারণ, যতটা সম্ভব আসন বাড়ানোই তো শাসক দলের লক্ষ্য!’’

তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। দলকে জেতাতে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছেন।’’

গোয়েন্দারা কিন্তু জানাচ্ছেন, উল্টোডাঙা এলাকার একটি ওয়ার্ডের এক প্রার্থী এই গোষ্ঠী-বিবাদের কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট কয়েকটি তল্লাটে ভোটারদের শাসানি দিচ্ছেন, যাতে তাঁরা ভোট না দিতে যান। স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ-এর এক অফিসার জানান, ওই ওয়ার্ডে রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যুবকের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে টিকিট না দিয়ে অন্য এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ওই মন্ত্রী এবং তাঁর অনুগামীরা ক্ষুব্ধ। ভোটের দিন তাঁরা অন্তর্ঘাত করতে পারেন এবং তাঁদের প্রভাবে তৃণমূল ভোটারদের ভোট বিরোধীদের কারও পক্ষে পড়তে পারে, সেই আশঙ্কা থেকে প্রার্থী ভোট দিতে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে পুলিশ জেনেছে। এক গোয়েন্দা-অফিসারের কথায়, ‘‘প্রকৃত ভোটারদের যেতে বাধা দিয়ে নিজের লোকদের দিয়ে একতরফা ইভিএমে বোতাম টেপার ছক কষেছেন ওই প্রার্থী।’’

অন্য দিকে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপ্রসাদ গার্লস স্কুল, চয়নিকা বিদ্যামন্দির, সেন্ট টমাস পাবলিক স্কুল, দাসপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, শীতলা সঙ্ঘ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব এড়াতে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করার ছক কষা হয়েছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশের একই আশঙ্কা কাশীপুর ও চিৎপুরের অন্তত ১২টি বুথ নিয়ে। বন্দর এলাকার বহু বুথ নিয়েও একই রকম উদ্বেগে পুলিশ।

লালবাজারের এক শীর্ষ অফিসার বলেন, ‘‘আড়ালে চমকালে, শাসানি দিলে, চোরাগোপ্তা মারলে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে কিছু হতে দেব না।’’

আজ, শনিবারের বারবেলায় এটাই চ্যালেঞ্জ কপালে ভাঁজ পড়া লালবাজারের সামনে।

অন্য বিষয়গুলি:

police municipal election kolkata trinamool tmc mamata bandopadhyay kashipur ultadanga surabek biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy