নিশীথ যাদব। ফাইল চিত্র।
হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম যে তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুধবার তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্টে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মজবুরা খাতুনকে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করেছে পুরসভা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বড় মাথাদের আড়াল করতেই কি শুধু সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করা হল?
ওই রিপোর্টে আলোর পাশাপাশি নিকাশি বিভাগের গাফিলতির কথাও বলা হয়েছে। টেলিফোনের যে স্তম্ভ স্পর্শ করায় কিশোরের মৃত্যু হয়, তাতে আর্থিং ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ ঠিক মতো হয়নি। ওভারহেড তারের অবস্থাও ভাল নয়। এ দিন বিকেলে মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ ঘটনাস্থলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। মেয়র বলেন, ‘‘বার বার বলা সত্ত্বেও অফিসারেরা কাজে উদাসীন। একটা অ্যাকশন না নিলে উদাসীনতা যাবে না। আসি-যাই মাইনে পাইয়ের দিন শেষ।’’
পুরসভার আলো বিভাগের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, আদতে বীরভূমের বাসিন্দা মজবুরা এক জন দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবেই পরিচিত। তাই পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, হরিদেবপুরের ওই ঘটনার গোটা দায় কেবল এক জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের উপরে চাপিয়ে দিয়ে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে না তো? ওই ঘটনায় ডিজি (আলো) এবং ১৩ নম্বর বরোর এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকেও (আলো) সাসপেন্ড করা হল না কেন? বিজেপি-র কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘অতীতেও বহু বার পুরসভার উদাসীনতায় বাতিস্তম্ভে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গিয়েছে মানুষের। এ বার একনাগাড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় পুরসভা বিষয়টির মোড় ঘোরাতে তৎপর। তাই আসল মাথাদের না ধরে কেবল এক জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শাস্তি দেওয়া হল।’’
মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী বললেন, ‘‘ওই রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। তবে, সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের নিশ্চয়ই গাফিলতি ছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাকিদের বিরুদ্ধেও তো বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। যা এখনও শেষ হয়নি। কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে, ওই ঘটনায় আর কাদের গাফিলতি ছিল।’’ মেয়র পারিষদ এ কথা বললেও ডিজি (আলো)-র বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ‘লোক দেখানো’ বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস কাউন্সিলরসন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘আগেও বহু বার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ডিজি-র পদে বদল হয়নি। কেন ডিজি-র বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’’ এ দিন অবশ্য পুরসভার আলো বিভাগের ডিজি সঞ্জয় ভৌমিককে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের। ১৩ নম্বর বরোর এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পিন্টু দাস কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে মেয়র পারিষদ (আলো) কলকাতা পুরভবনে মেয়রের ঘরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। মেয়র সন্দীপবাবুকে পুরসভায় বসে না থেকে শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বাতিস্তম্ভগুলি পরীক্ষা করতে বলেন। সেই মতো মেয়র পারিষদ (আলো) বিভাগীয় ডিজি-কে নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাতিস্তম্ভ দেখতে বেরোন। শহরের কোন কোন জায়গায় বিপজ্জনক অবস্থায় বাতিস্তম্ভ রয়েছে, সে বিষয়ে পুর কমিশনারকে বর্ষা নামার আগেই একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিলেন মেয়র। কিন্তু সেই রিপোর্ট এখনও হাতে না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তিনি। মেয়র পারিষদ (আলো) জানিয়েছেন, কলকাতা পুর এলাকায় কোনও বাতিস্তম্ভ বিপজ্জনক বলে মনে হলেই সাধারণ মানুষ পুরসভাকে তা জানাতে পারেন। এ ছাড়া, পুরসভার তরফেও নজর রাখা হচ্ছে।
এ দিন হরিদেবপুরের ঘটনাস্থলে নিয়ে পরীক্ষা করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ওই ঘটনার প্রসঙ্গে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, বর্ষাকালে বৃষ্টির জমা জল দ্রুত না সরালে বাতিস্তম্ভ থেকে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy