Advertisement
১৩ জানুয়ারি ২০২৫

উল্টোডাঙায় বেপরোয়া বাস-অটো, জখম বৃদ্ধ দম্পতি

নিয়ম মানার বালাই নেই। অটো-বাস তাদের নিয়মে চলে। যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে যায়। যাত্রীদেরও তথৈবচ অবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৭
Share: Save:

নিয়ম মানার বালাই নেই।

অটো-বাস তাদের নিয়মে চলে। যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে যায়। যাত্রীদেরও তথৈবচ অবস্থা।

তারই খেসারত দিতে হল বৃদ্ধ দম্পতিকে। বুধবার সকালে উল্টোডাঙা মোড়ে এক জনের পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল বাসের চাকা। অন্য জনের পা চাপা দিয়ে গেল অটো। আহত অবস্থায় দু’জনকেই বাইপাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাস ও অটো দু’টির চালককে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।

তাতেও যদিও ছবিটা বদলায়নি এতটুকু। সকালের দুর্ঘটনার পরে দুপুরে সেখানে গিয়ে সেই একই ছবি দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, বাসের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ফাঁকাই পড়ে থাকে। চলন্ত বাস যেখানে খুশি গতি কমিয়ে দেয় যাত্রী তুলতে। অটোর কথা যত কম বলা যায়, ততই ভাল। নিয়মের তোয়াক্কা না করে ‘বেপরোয়া’ গতিতে চলন্ত বাসকে ওভারটেক করে চলাচল করে তারা। যাত্রীরাও বাস-অটো ধরার জন্য ইচ্ছেমতো জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কখনও ছোটাছুটিও করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন পদম বাহাদুর শাহি (৭২) এবং তাঁর স্ত্রী মোহন কুমারী শাহি (৬০) উল্টোডাঙা থেকে রাজারহাটে যাবেন বলে ভিআইপি রোডের মুখে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময়ে রাজারহাটগামী একটি বাস এসে কিছুটা আগে থেমে যায়। বাসটিতে ওঠার জন্য এই দম্পতি যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই উল্টোডাঙা-বাগুইআটি রুটের একটি অটো দ্রুত গতিতে বাসটির বাঁ দিক দিয়ে ‘ওভারটেক’ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই অটো বৃদ্ধ দম্পতিকে ধাক্কা মারলে দু’জনেই পড়ে যান। যে বাসে তাঁরা ওঠার চেষ্টা করছিলেন সেই বাসটিও এর মাঝে এগিয়ে আসে। সেই বাসের চাকা বৃদ্ধের ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। বেগতিক দেখে অটোচালক পালাতে গিয়ে বৃদ্ধার ডান পায়ের উপরে অটো চালিয়ে দেন।

ঘটনার পরেই, উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট অমিত সাউ বৃদ্ধ ওই দম্পতিকে ঘাতক অটোতে তুলেই হাসপাতালে নিয়ে যান। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘বৃদ্ধ ভদ্রলোক অটোর মধ্যেই জ্ঞান হারান। আমার পকেটে সর্বিট্রেট ছিল। আমি তাঁর মুখে দিই। পরে তিনি জ্ঞান ফিরে পান। বৃদ্ধার অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল ছিল।’’

এই দম্পতির ছেলে বীর বিক্রম শাহি জানান, তাঁর বাবা-মা উল্টোডাঙায় রক্ত পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন। সেখান থেকেই তাঁরা চিনার পার্কের কাছে বাড়িতে ফিরছিলেন। বৃদ্ধ পদম বাহাদুর শাহি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক-কর্মী।

ট্রাফিক পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, এই রাস্তায় পুলিশের নজরদারি যথেষ্টই রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি বাসস্টপও রয়েছে। কিন্তু সিগনাল সবুজ থাকলে বাস, অটো এবং অন্য গাড়ির গতি বেড়ে যায়। বাস-অটোর গতি আটকাতে এখানে ধর পাকড়ও করা হয়েছে। অন্য দিকে, যেখান‌ে বাসস্টপ থাকার কথা সেখানে যাত্রীরা না দাঁড়িয়ে রাস্তার মুখেই দাঁড়ান। বাস দাঁড় করিয়ে বাসে ওঠেন। সেটাও নিয়ম বিরুদ্ধ। অনেক বার তাঁদের বারণ করা হয়েছে। এমনকী, পুলিশ এসে সরিয়েও দিয়েছে তাঁদের। তবুও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

উল্টো়ডাঙা এবং বাগুইআটি রুটের অটো ইউনিয়নের সদস্য বিশ্বনাথ গুপ্ত বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে বেপরোয়া অটো চালানো অন্যায়। এই অটোচালক আমাদের সংগঠনের সদস্য হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

এ দিকে বুধবার দু’টি দুর্ঘটনায় আহত হন মোট ছ’জন। প্রথমটি ঘটনাটি ঘটে দুপুরে, পাটুলি থানার বাঘা যতীন মোড়ে। বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় আহত হন এক বাইকচালক। পুলিশ জানায়, যাদবপুর ৮বি থেকে গড়িয়ার দিকে যাওয়ার পথে ৪৫বি রুটের একটি বাস সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিল। বাসটির সামনে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল ওই মোটরবাইক। সিগন্যাল সবুজ হলে বাসটি আচমকাই বেশি গতিতে এগোতে যায়। অভিযোগ, সামনে যে বাইকটি দাঁড়িয়ে আছে, তা দেখতে পাননি চালক। বাসটি ধাক্কা মারে ওই মোটরবাইকে। বাইকচালক রাস্তায় পড়ে গিয়ে ডান পায়ে গুরুতর চোট পান। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় পুলিশ চালক-সহ ওই বাসটিকে ধরে ফেলে। এর পরে তাঁকে পাটুলি থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আহত ওই বাইকচালককে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সন্ধ্যায় সল্টলেকের পূর্তভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স যাওয়ার পথে ফুটপাথে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় অটো। এক মহিলা ও চালক সহ পাঁচ জন কমবেশি আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অটোচালকদের একাংশ বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যদিও বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানান, বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

ultadanga reckless driving
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy