Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বিরল পাখি

শীতে টান, তাই মুখ ফিরিয়ে পরিযায়ীরা

ঠান্ডা এ বার সে ভাবে জমিয়ে পড়েনি। উত্তুরে হিমেল বাতাসেরও দেখা মেলেনি। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেও গরম জামার বিশেষ প্রয়োজন হচ্ছে না। আর ঠান্ডা ঠিক ভাবে না পড়ার জন্যই এ বার সাঁতরাগাছি ঝিলেও সুদুর সাইবেরিয়া থেকে আসা পাখিদের সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছে বলে মনে করছেন পক্ষী-বিশারদদের একাংশ।

সাঁতরাগাছির শীতের অতিথিরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

সাঁতরাগাছির শীতের অতিথিরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

ঠান্ডা এ বার সে ভাবে জমিয়ে পড়েনি। উত্তুরে হিমেল বাতাসেরও দেখা মেলেনি। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেও গরম জামার বিশেষ প্রয়োজন হচ্ছে না। আর ঠান্ডা ঠিক ভাবে না পড়ার জন্যই এ বার সাঁতরাগাছি ঝিলেও সুদুর সাইবেরিয়া থেকে আসা পাখিদের সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছে বলে মনে করছেন পক্ষী-বিশারদদের একাংশ। তবে পাখিপ্রেমীরা অনেকেই বলছেন, ঝিলের জল এবং আশপাশের পরিবেশ দূষিত হওয়ার ফলেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না এই সব পরিযায়ী পাখিরা।

প্রতি বছরের মতো এ বারও শীতে জেলা বন দফতরের উদ্যোগে পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল হাওড়ার সাঁতরাগাছি ঝিলে পাখি সুমারির আয়োজন করেছিল এক বেসরকারি সংস্থা। সুমারির পরেই জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর মূলত সাইবেরিয়া বা আরও দুর থেকে আসা পাখিদের সংখ্যা কম। এ দিন সংস্থার পক্ষ থেকে সৌম্য রায় জানান, সাইবেরিয়া বা ইউরেশিয়া থেকে যে সব পাখিরা আসে (যেমন পিনটেল বা গাদওয়াল প্রজাতির পাখি), এ বার তারা খুবই কম এসেছে। তুলনায় হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা সরালের সংখ্যা আগের মতোই। সৌম্যবাবু বলেন, ‘‘এর মূল কারণ উষ্ণ আবহাওয়া। উত্তরের হিমেল ঠান্ডা বাতাস বইলে সাইবেরিয়া থেকে আসা পাখিদের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু এ বার তা হয়নি। তার ফলেই মনে হচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা গত বছরের তুলনায় এ বার কম এসেছে।’’

একই মত পক্ষী-বিশারদ অর্জন বসুরায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে শীতকালীন সামগ্রিক উষ্ণতা বেশি হওয় পরিযায়ী পাখি তুলনামূলক ভাবে কম এসেছে। আবার উত্তরবঙ্গে ঠান্ডা পড়ায় পরিযায়ী আসার সংখ্যায় কোনও কমতি দেখা যায়নি।’’

দিনভর গণনার পরে সন্ধ্যায় জেলা বন আধিকারিক বিমান বিশ্বাস শনিবার বলেন, ‘‘গত বারের মত এ বারও সাঁতরাগাছি ঝিলে পাখি এসেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। ঠান্ডা ঠিক মতো পড়লে আর একটু বেশি পাখি আসত বলে মনে হয়।’’

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই অসুস্থ হয়ে বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি মারা যায় সাঁতরাগাছিতে। তবে এ বার পাখিদের মৃত্যুর হার তুলনায় বেশি। পাখিপ্রেমীরা অনেকে বলছেন, ঝিলের জল ও আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে যাওয়াতেই ঝিলের পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছে না পাখিরা। গোটা ঝিলে জল কমছে। এক পাশে ডাঁই হয়ে রয়েছে প্লাস্টিক-সহ আবর্জনা, থার্মোকলের থালা, বাড়ির অব্যবহৃত কমোড, রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া নোংরা জিনিস।

ক্রমশ বাড়তে থাকা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ঝিলে সুষ্ঠু ভাবে বেঁচে থাকতে পাখিদের কার্যত প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে কচুরিপানা ও আবর্জনার সঙ্গে।

বিমানবাবু অবশ্য জানান, ঝিলটি যেহেতু পাখিদের মূল আকর্ষণ, তাই জল দূষিত না হওয়ার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা গৃহিত হয়েছে। কচুরিপানা আরও পরিষ্কার করা হবে। সঙ্গে ঝিলের জল ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা প্রায় বন্ধ। এ নিয়ে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি ওঁরা ব্যবস্থা নেবেন।’’

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঝিলটা মূলত রেলের জায়গায়। আমাদের অংশে কোনও সমস্যা হলে নিশ্চয়ই দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debashis das winter temperature migratory birds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE