Advertisement
E-Paper

দুই নেতার টক্করে লাভ এলাকার, তৃণমূলেরও

এক দিকে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুজিত বসু ভিআইপি রোডে বাতানুকূল বাসস্ট্যান্ড করছেন, তো তাকে টেক্কা দিতে চেয়ারম্যান পারিষদ মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য নয়ানজুলিকে সংস্কার করে ইকো পার্ক করলেন। আবার মৃগাঙ্কবাবু যখন তাঁর এলাকায় একের পর এক থিম পার্ক তৈরি করছেন, তখন সুজিতবাবু গোলাঘাটায় নয়ানজুলিকে সংস্কার করে বিসজর্নের ঘাট তৈরি করছেন।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৮
Share
Save

এক দিকে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুজিত বসু ভিআইপি রোডে বাতানুকূল বাসস্ট্যান্ড করছেন, তো তাকে টেক্কা দিতে চেয়ারম্যান পারিষদ মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য নয়ানজুলিকে সংস্কার করে ইকো পার্ক করলেন। আবার মৃগাঙ্কবাবু যখন তাঁর এলাকায় একের পর এক থিম পার্ক তৈরি করছেন, তখন সুজিতবাবু গোলাঘাটায় নয়ানজুলিকে সংস্কার করে বিসজর্নের ঘাট তৈরি করছেন।

গত পাঁচ বছরে দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকার বাসিন্দারা দেখেছেন ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পারিষদের উন্নয়নের জন্য লড়াই। আখেরে লাভ হয়েছে এলাকাবাসীরই। উন্নয়নের জোয়ার দেখেছে দমদম রোড সংলগ্ন এলাকাও। সেখানে আর এক চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পালের উদ্যোগে হয়েছে অডিটরিয়াম, সুইমিং পুল।

পুরভোটে উন্নয়নের এই জোয়ারের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মত অনেকের। তবে এর মধ্যেই কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছেন কিছু বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। টিকিট না পেয়ে নির্দল লড়ছেন তাঁরা। যেমন কুণ্ডুবাগানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গৌতম সাহা মণ্ডল এখন নির্দল প্রার্থী। দমদম ক্যান্টনমেন্ট প্রমোদনগর কলোনির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রদীপ মজুমদার এবং জ’পুর এলাকার সুচয়িতা দাসও নির্দল প্রার্থী। নির্দল প্রার্থী হয়েছেন আরও দুই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘দল যাকে যোগ্য মনে করেছে, টিকিট দিয়েছে।’’

গত বার তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে ৬টি ওয়ার্ড জিতলেও, এ বার সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। বিজয়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুস্মিতা বিশ্বাস বাদে কেউ দাঁড়াননি। আবার লেকটাউন, বাঙুর, শ্রীভূমিতে কোথাও ৪০০০ তো কোথাও হাজারখানেক ভোটে এগিয়ে প্রথম স্থান পায় বিজেপি। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের মতে, এ বারও ভাল ফল হবে। এমনকী, দমদম পার্ক এলাকায় বর্তমান চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিতের ওয়ার্ডেও জোর লড়াই হবে বলে বিজেপি-র দাবি। যদিও এলাকার বিধায়ক তথা ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসু বলেন, ‘‘এখানে পরিষেবা দেখে ভোট হয়।’’

উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, মানছেন স্থানীয়েরাই। বাঙুরের সৌর্ন্দযায়নের পিছনে উদ্যোগী কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য তাঁর নিজের ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় দাঁড়িয়েছেন কালিন্দীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তিনি বলেন, ‘‘বাঙুরে উন্নয়ন হয়েছে, এ বার কালিন্দীও সেই উন্নয়ন দেখতবে।’’ এলাকার বিজেপি প্রার্থী কমল কুণ্ডু বলেন, ‘‘মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা প্রতিটি বৈদ্যুতিক পোস্টে সিসিটিভি বসাব।’’

দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড। এতদিন মূলত উদ্বাস্তুদের ভোটব্যাঙ্কে নির্ভর করে পুরবোর্ড দখলে রেখেছিল বামফ্রন্ট। গত নির্বাচন থেকেই তৃণমূলের প্রভাব বাড়ে। লোকসভা ভোটের নিরিখে তিনটি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেগুলিতে অন্তত অধিকার কায়েম রাখতে চাইছে বিজেপি। ২০০৫ সালে ৩৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল বামফ্রন্ট। চেষ্টা চলছে পুরনো জায়গা ফিরে পাওয়ার। বামফ্রন্টের দাবি, তিন জন ছাড়া এ বার সব নতুন মুখ। যেমন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শর্মিষ্ঠা দত্ত দাম এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে দোয়েল মজুমদার। সব মিলিয়ে তৃণমূল-প্রধান এই পুরসভায় মূল প্রশ্ন, ভোটে দ্বিতীয় স্থান কার?

উন্নয়ন যতই হোক, বাগজোলা খালের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। অভিযোগ, খাল সংস্কার হয়নি। অল্প বৃষ্টিতেই জ’পুর-সহ বহু এলাকায় জল জমে। বাগজোলাকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা ভোট চাইছেন।

এই পুরসভায় বেশ কয়েক জন প্রার্থী নিজেদের ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন না। মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় পুরনো ওয়ার্ড এম সি কলোনি, ঘোষ পাড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারেননি খোদ চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীরবাবু। দাঁড়িয়েছেন মধুগড়ের ১৩ ওয়ার্ড থেকে। বলেন, ‘‘অন্য ওয়ার্ড হলেও সমস্যা নেই। মানুষের প্রত্যাশার কথা আমি জানি।’’ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সিপিএম প্রার্থী ভাস্কর গলুই বলেন, ‘‘এলাকায় সিন্ডিকেট নিয়ে অশান্তি হয়। শাসক দলের মদত আছে। অবাধ ভোট হলে মানুষ জবাব দেবে।’’

তবে বহিরাগতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে। তিনি কেন এই ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন, তা নিয়েই ধোঁয়াশা মানুষের মনে। তিনি কবে থেকে রাজনীতি করেন, কবেই বা তৃণমূলে নাম লেখালেন, সে প্রশ্নও উঠছে। যদিও হাওয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তৃণমূল বোর্ড গড়লে ইনিই নাকি চেয়ারম্যান হবেন। কোথায়, কবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অবশ্য এখনও অজানা। দু’-একটি ছোটখাটো পত্র-পত্রিকায় ওই ব্যক্তির বড় বড় লেখা ছাপা হয়। যা দেখে ওই প্রার্থীর রুচি, ভাষা ব্যবহার ও শালীনতা বোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বহু মানুষ।

Municipal election Kolkata Trinamool Tmc CPM BJP Congress south dumdum Aryabhatta Khan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}