Advertisement
E-Paper

বদলেছে অনেক, তবু বেঁচে আছে আড্ডাটা

আগে যেখানে ছিল খাল, সেখানেই আজ পিচের রাস্তা, নতুন-পুরনো বাড়ি, আর সারা দিনের অন্তহীন যান চলাচল। এটাই আমার পাড়া ক্রিক রো। এখন অবশ্য নাম বদলে হয়েছে স্যার নীলরতন সরকার সরণি। তবু পাড়ার লোকের কাছে ক্রিক রো নামেই প্রচলিত।

সুবীর হাজরা চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৯
বিশ্বনাথ বণিক

বিশ্বনাথ বণিক

আগে যেখানে ছিল খাল, সেখানেই আজ পিচের রাস্তা, নতুন-পুরনো বাড়ি, আর সারা দিনের অন্তহীন যান চলাচল। এটাই আমার পাড়া ক্রিক রো। এখন অবশ্য নাম বদলে হয়েছে স্যার নীলরতন সরকার সরণি। তবু পাড়ার লোকের কাছে ক্রিক রো নামেই প্রচলিত।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড থেকে শুরু রাস্তাটা মিশেছে লেনিন সরণিতে। রাস্তার আরও একটি অংশ এঁকে বেঁকে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে মিশেছে। ক্রিক রো নামটি প্রসঙ্গে না বললে পাড়ার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। অতীতে একটি খাল এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে তালতলা, চাঁদনিচক বাজার, মেরিডিথ স্ট্রিট, ওয়াটারলু স্ট্রিট হয়ে গঙ্গায় মিশত। পরে যখন গঙ্গার স্রোত বদলাতে থাকে, খালের জলও কমতে থাকে। ধীরে ধীরে খালটা বুজে শহরের জমিতে মিশে গিয়েছে। আর থেকে গিয়েছে নামটা।

এখানে আমার আসা যৌবনে। প্রথম অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে এ পাড়া। মধ্য কলকাতার এই পাড়ার একটা বৈশিষ্ট্যই হল একে অপরের পাশে থাকা। সময়ের অভাবে রোজ দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও সমস্যায় বা প্রয়োজনে আজও পড়শিকে পাশে পাওয়া যায়। এগিয়ে আসেন অপরিচিতেরাও। যুব সম্প্রদায় এ পাড়ার উন্নয়নে সব সময়ে আগ্রহী।

পাড়ায় কয়েকটি আবাসনে এসেছেন এলাকারই পুরনো বাসিন্দা। পরিবারে সদস্য বাড়ায় স্থানাভাবের কারণে অনেকে এ পাড়াতেই ফ্ল্যাট কিনেছেন। নতুন যাঁরা এসেছেন, পুরনোদের সঙ্গে তাঁরা মিশে গিয়েছেন।

পাড়াটা বরাবরই পরিচ্ছন্ন। এখন আরও ঝাঁ-চকচকে, আলো ঝলমলে। বাসিন্দাদের সচেতনতায় প্লাস্টিক-বন্দি আবর্জনা আর রাস্তায় পড়ে না। জলের জোগানও রয়েছে পর্যাপ্ত। এ পাড়ায় সচরাচর বর্ষায় জল জমে না। রাস্তা খোঁড়া হলে দ্রুত মেরামতি হয়ে যায়। কিছু সমস্যাও আছে। অজানা লোকে মাঝেমাঝেই দীর্ঘ সময়ের জন্য গাড়ি রেখে চলে যান। ফলে এক-এক সময়ে নিজেদের গাড়ি রাখার জায়গাই মেলে না। আরও একটি সংস্যা হল বিপজ্জনক বাড়ি। আমাদের পাড়া এবং আশপাশের অঞ্চলে বেশ কয়েকটি এমন বাড়ি রয়েছে। এখন দিন-রাত এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। ফলে এ পাড়ার শান্তির পরিবেশটা বিঘ্নিত হয়।

ছবি বদলালেও আজও পাড়ার আড্ডার রেওয়াজটা হারায়নি। পাশের গলিতে বা বাড়ির সামনে পরিচিত মুখেদের এখনও আড্ডা দিতে দেখা যায়। তবে আগের আকর্ষণ কমেছে।

এলাকায় মাঠ বলতে লেবুতলা পার্ক আর ভাঙা মাঠ। যদিও গলিতেই ছোটদের ক্রিকেট, ফুটবল খেলতে দেখি। ছুটির দিনে সেই সংখ্যাটা বাড়ে। বছরে দু’ বার হয় ফুটবল টুর্নামেন্ট।

এ পাড়ার দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজো এখনও আকর্ষণীয়। একসঙ্গে ভোগ খাওয়া, অঞ্জলি দেওয়ার অভ্যাসটাও আছে। এ ছাড়াও ক্রিক রো-র রথযাত্রা বিখ্যাত। বেশ কিছু পরিবার থেকে সুসজ্জিত রথ বেরোয়। শিবরাত্রিতে সুসজ্জিত শোভাযাত্রা দেখা যায়।

এ পাড়ার আরও এক আকর্ষণ হল জলসা। অতীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আসতেন এখানে। হারায়নি সেই জলসার জৌলুস।

সেই আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে বদলাতে শুরু করেছে পাড়াটা। ছোটবেলায় মেলামেশার সুযোগ অনেক বেশি ছিল। এক-একটি ব্যাচে কম করে দশ জন সমবয়সি থাকত। কমেছে সেই সমমানসিকতা সম্পন্ন মানুষের সংখ্যাও।

লেখক চিকিৎসক

Kolkata Lanes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy