Advertisement
E-Paper

Dumdum Cantonment: চাকায় হাওয়া ভরেন, মনের অক্সিজেন দেয় টাইপরাইটার

টাইপরাইটারটি সারিয়ে খটাখট আওয়াজ ফের ফিরিয়ে আনতে চান সুশীলবাবু।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪০
মগ্ন: টাইপরাইটার সারানোর চেষ্টায় সুশীল দাস।

মগ্ন: টাইপরাইটার সারানোর চেষ্টায় সুশীল দাস। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বিকল যন্ত্রটা আর কাজে লাগে না। তবু পুরনো অভ্যাসের মায়ায় টাইপরাইটারটা রোজ দু’বেলা পরিষ্কার করেন। কাজে না এলেও যন্ত্রটাকে ফেলে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না দমদম ক্যান্টনমেন্টের বিবেকানন্দপল্লির বছর আটষট্টির সুশীল দাস। ওর গায়েই যে লেগে তাঁর জীবনের স্বর্ণযুগ।

টাইপরাইটারটি সারিয়ে খটাখট আওয়াজ ফের ফিরিয়ে আনতে চান সুশীলবাবু। দরমার বেড়া আর টিনের চালার বাড়ি। অগোছালো বাড়ির চার দিকে ছড়িয়ে টুকিটাকি জিনিস। চোখে পড়ার মতো জিনিস বলতে কোণে পড়ে থাকা ঢাউস টাইপরাইটারটা। অযত্নের ভিড়ে সব থেকে যে বেশি খাতির তার, এক ঝলকেই বোঝা যায়।

সম্প্রতি বিবেকানন্দপল্লির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অচলকে সচল করার চেষ্টায় মেতে সুশীলবাবু। কী করবেন যন্ত্রটা সারিয়ে?

মৃদু হেসে প্রৌঢ় বলেন, ‘‘কেউ আসবেন না টাইপ করাতে। কিন্তু নিজের জন্যও তো টাইপ করা যায়। সেই খটাখট শব্দটা ফিরিয়ে আনতে!”

আশির দশকের মাঝামাঝি দুটো টাইপরাইটার কিনে দমদমের দুর্গানগরে টাইপ শেখানোর স্কুল খুলেছিলেন সুশীলবাবু। বছরখানেকের মধ্যে টাইপরাইটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৫। মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ জন টাইপ শিখতে আসতেন। টাইপ শেখানো এবং ওই যন্ত্র সারানোর কাজ জানতেন সুশীলবাবু।

নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত রমরমিয়ে চলে তাঁর টাইপ স্কুল। সুশীলবাবু বলেন, ‘‘শৈশব খুব অনটনে কেটেছে। এই টাইপ মেশিনই ছিল জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। খুব বেশি উপার্জন না হলেও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছিল। বিয়ে, সন্তান— সবই এই যন্ত্রের ভরসায়। ২০০০ সাল থেকে টাইপিং স্কুলের রমরমা কমতে শুরু করেছিল। বাড়ছিল কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা। তবু কখনও ভাবিনি, স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে। ভেবেছিলাম, টাইপরাইটার আর কম্পিউটার পাশাপাশি চলবে।’’

কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে সাধের টাইপিং স্কুল বন্ধ হয়ে যায় ২০০২ সালে। সুশীলবাবু বলে চলেন, ‘‘টাইপ শেখানো ও টাইপ মেশিন সারানো ছাড়া অন্য কোনও কাজ তো আমি পারি না। এই একটা বাদে বাকি সব মেশিন ওজন দরে বিক্রি করে তবু অন্য পেশার খোঁজে নামলাম।’’

কিন্তু অন্য পেশায় খাপ খাওয়াতে পারেননি নিজেকে। স্কুল বন্ধের পরেই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। জমানো টাকা সেখানেই খরচ হয়ে যায়। বিবেকানন্দপল্লির বাড়িতে বসে সুশীলবাবু বলেন, ‘‘এখন গাড়ির চাকায় হাওয়া ভরার কাজ করি। আর মশলার প্যাকেট বানাই। আমার অর্থকষ্ট খুব।’’

চাকায় হাওয়া ভরতে ভরতে ক্লান্ত মাস্টারমশাই অক্সিজেন পান টাইপরাইটারে হাত বুলিয়েই। তখন তাঁর অন্য চোখ। তখন তিনি মাস্টারমশাই।

Dumdum Cantonment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy