Advertisement
E-Paper

শব্দে কঠোর বিধাননগর, গা আলগা কলকাতার

বিধাননগর পারে। কলকাতা এখনও পারে না। কোমর বেঁধেছে বিধাননগর কমিশনারেট। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিয়ম ভেঙে শব্দবাজি ফাটালে এ বার তিন মাস থেকে দশ বছর পর্যন্ত সাজার মুখে পড়তে হতে পারে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৯

বিধাননগর পারে। কলকাতা এখনও পারে না।

কোমর বেঁধেছে বিধাননগর কমিশনারেট। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিয়ম ভেঙে শব্দবাজি ফাটালে এ বার তিন মাস থেকে দশ বছর পর্যন্ত সাজার মুখে পড়তে হতে পারে।

কলকাতা অবশ্য এ বারও নির্দিষ্ট করে সাজার ঘোষণা করতে চায়নি। বৃহস্পতিবার পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কী সেই আইনি ব্যবস্থা, তা খোলসা করেননি তিনি।

বিধাননগর পুলিশের পর্যবেক্ষণ— যাঁরা নিয়ম ভেঙে বছরের পর বছর শব্দবাজি ফাটান, তাঁরা ভাবেন, পুলিশ যদি ধরলে বড়জোর কিছু জরিমানা দিতে হবে। পুলিশ অফিসারদের কথায়, ‘‘যাঁরা এ ভাবে নিয়ম ভাঙেন, তাঁদের টাকার অভাব থাকে না। তাঁরা টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এ বার তা হবে না।’’

এ বার কালীপুজোয় গোটা এলাকাতেই এই নিয়ম চালু করতে চলেছে বিধাননগর কমিশনারেট। ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজের কথায়, ‘‘কাউকে বাজি ফাটানোর সময়ে শব্দবাজি সমেত ধরলে প্রথমে রাজ্য দমকল আইনে মামলা করা হবে। সে ক্ষেত্রে সাজা বড়জোর ৩ মাস। কিন্তু কারও কাছে যদি নিষিদ্ধ বাজির পরিমাণ বেশি থাকে, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনও প্রয়োগ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাজার সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রায় ১০ বছর।’’

তবে দমকল আইন নাকি বিস্ফোরক আইন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। জানা গিয়েছে, বিগত বছরে শব্দবাজি সমেত আটক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা (আইনভঙ্গ করা)-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। অনেক মামলা এখনও চলছে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শব্দবাজির দৌরাত্ম্য এড়াতে ইতিমধ্যেই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহুতলের আবাসিক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে বোমা ফাটলে সংশ্লিষ্ট আবাসনের কর্তাদের গ্রেফতার করা হবে। ক্রমাগত পুলিশি নজরদারির ফলে বেশ কিছু এলাকায় শব্দবাজি ব্যবহার কমেছে বলেও পুলিশের দাবি। উদাহরণ দিয়ে এক অফিসার বলেন, ‘‘দক্ষিণ কলকাতায় বছর চারেক আগে যত শব্দবাজি ফাটত, এখন তার প্রকোপ কমেছে। এর অর্থ, ভয় পেয়েছেন আইনভঙ্গকারীরা।’’ পুলিশের একাংশের মতে, মামলা, গ্রেফতার হওয়ার ভয় মানুষের মনে এখনও রয়েছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের কেউ গ্রেফতার হতে চান না। থানায় তাঁদের ঘণ্টা কয়েক বসিয়ে রাখলেও তাঁদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি হয়। তবে এক অফিসারের কথায়, ‘‘আইন ভেঙে ধরা পড়লে সেই সম্মানহানির মুখোমুখি তো হতেই হবে!’’

বিধাননগরেও পুলিশের নজর মূলত ফ্ল্যাটবাড়িগুলির দিকে। কারণ গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ জেনেছে— ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে উঠে এই শব্দবাজি ফাটানোর প্রবণতা বেশি। সল্টলেক-লেকটাউনে ব্যক্তিগত দোতলা বাড়ির ছাদেও শব্দবাজি ফাটানো হয়। তবে তা তুলনায় কম। বিমানবন্দর, বাগুইআটি, নারায়ণপুর, রাজারহাট, সল্টলেক ও লেকটাউনের কিছু ফ্ল্যাটবাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে।

এক পুলিশকর্তা জানান, ফ্ল্যাটবাড়ির প্রধান গেটে তালা মেরে দিয়ে ছাদে দেদার বোমা ফাটানোর প্রবণতা রয়েছে। যাতে পুলিশ যখন-তখন উপরে উঠে যেতে না পারে। কিন্তু, এর অন্য একটা বিপদও রয়েছে। উপরে বাজি ফাটানোর সময়ে আচমকা আগুন লেগে গেলে নীচে তালাবন্ধ থাকার কারণে তড়িঘড়ি বেরিয়ে আসতে পারবেন না বাসিন্দারা। পুলিশের কথায়, ‘‘কালীপুজোর দিন কোনও ফ্ল্যাটবাড়ির নীচে যদি এ ভাবে তালা ঝোলানো থাকে, তা হলে সেখানকার আবাসিক কমিটির কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’’

চিহ্নিত করা বেশ কিছু ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হবে বলে বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর। তবে, অত সংখ্যক পুলিশকর্মী নেই কমিশনারেটের হাতে। তাই ঠিক হয়েছে, যে ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে পুলিশ সশরীরে থাকতে পারবে না, সেখানে ছাদের দরজায় তালা মেরে চাবি কেয়ারটেকারের হাতে দিয়ে দিতে বলা হবে। কালীপুজোর দিন টহলদার পুলিশ যখন-তখন এমন কোনও ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে পৌঁছে যাবে বলে জানান পুলিশকর্তারা। সে ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, ছাদে তালা নেই এবং শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সেই আবাসিক কমিটির সম্পাদক ও সভাপতিকে গ্রেফতার করা হবে।

Bidhannagar Fire-cracker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy